• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ভালোবেসে একসাথে দুই যুগ পার


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৪৩ পিএম
ভালোবেসে একসাথে দুই যুগ পার
নীলকান্ত ও গীতা দম্পতি

গৌতম চন্দ্র বর্মন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: উচ্চতায় ছোট হওয়ায় ছোটোবেলা থেকে নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে নীলকান্তকে। সবাই দেখত আলাদা চোখে। যেন মানুষের সাথে বসবাস করেও মনে হত আলাদা এক প্রাণি৷ অল্পতেই কথার আঘাতে ব্যাথা দিতেন প্রতিবেশীরা। কটাক্ষ করতে বাদ দেননি নিজের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরাও। কিন্তু মানুষের সব কথাকে উপেক্ষা করে জীবন তরী চালাতে পিছপা হয়নি নীল। সমবয়সীদের সাথে তাল মিলিয়ে করেছেন পড়াশোনাও। 

স্বপ্ন ছিল ভালো চাকরি করার। বাবার সমস্যায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় সে স্বপ্ন আর আলোর মুখ দেখেননি। চাকরির স্বপ্ন ব্যর্থ হলেও ভালোবাসার স্বপ্নে সফল তিনি। সবাই যখন তার ভবিষ্যতে বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিভোর। তখনই জীবনকে রঙিন করে সাজিয়ে নিতে আসেন গীতা রাণী। একই উচ্চতা আর মনের মিল হওয়ায় ভালবাসার শুরুটা হয় তাদের।কয়েকমাস একজন আরেকজনকে চেনা-জানার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন তারা। সমাজের মানুষের কটু কথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২৫ বছর একসাথে তারা। যেন ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ জুটির এক অনন্য নিদর্শন। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নীলকান্ত ও গীতা দম্পতি। হাজারো প্রতিকূলতায় একজন যেন আরেকজনের পরিপূরক। সাংসারিক জীবনে এক মেয়ে সন্তানের পিতা-মাতা তারা। তাদের ভালোবাসার এমন দৃষ্টান্ত নজর কেঁড়েছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের। 

স্থানীয় প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষিকা সাবিত্রী রাণী বলেন, তারা শুধুমাত্র দেখতে খাটো। এটিই তাদের একটা অপূর্ণতা। সবার জীবনেই একটা না একটা সমস্যা থাকে। তাদের জীবনে এরকমটাই ছিল। তবে তাদের মধ্যে ভালোবাসা অনেক বেশি। আমরা তাদের মাঝে কখনো বড় কোন সমস্যা দেখিনি। তারা সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে। তাদের মত স্বামী-স্ত্রী প্রতিটা সংসারে হওয়া উচিত।

নীল ও গীতা দম্পতির মেয়ে লিপা বলেন, আমার বাবা-মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। এখনো আমি যাতে করে আমার পরিবারকে নিয়ে সুখি হই সেজন্য পরিশ্রম করেন। অনেক মানুষ আমার বাবা-মা কে নিয়ে কটাক্ষ করে। আমি কষ্ট পেলেও মনে করি আমার বাবা- মা সেরা। আর তাদের মধ্যে সম্পর্কে কোনো ধরনের ফাটল নেই৷ 

নীলকান্তের বউ গীতা রাণী বলেন, আমরা একসাথে থাকতে পেরে অনেক খুশি। অভাবতো সবার সংসারে থাকে। আমাদেরও অভাব আছে৷ বাইরে কাজ করলে আমাদের পারিশ্রমিক কম দেওয়া হয়। তারপরেও থেমে তো আর থাকা যায় না৷ আমরা একসাথে ২৫ বছর ধরে আছি। বাকি সময়টা একসাথে কাটাতে চাই। 

নীলকান্ত বলেন, চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট আমি। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচাতে চেয়েছেন৷ তিনি আমাকে ভাল রেখেছেন। মানুষের কটু কথা শুনেও আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। তবে সমস্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি। তারপরে কাজ করে সংসার চালাই৷ এক মেয়ে আমার। তাকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। বাবার দেওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই৷ শুধু যে ঘরটিতে আমি থাকি সেটি আমার। বাবা-মায়ের ঘরটা মায়ের নামে৷ কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। মা আমার নামে জমিটা দিতে চান। তবে সেটি আমার নামে করে নেওয়ার মতো কোনো খরচ আমার নেই।

কয়েক মাস আগে এক দোকানে থাকতাম। সেটা বাদ দিয়ে এখন দিনমজুরি করি৷ ঘরটাও আমার প্রায় ভাঙা। টাকার অভাবে সংস্কার করতে পারছি না৷ তারপরও আমার স্ত্রী সঙ্গ দিয়ে আসছেন৷ কখনো তিনি আমাকে হতাশ করেননি। সবসময় আমাকে সার্পোট দিয়ে থাকেন৷ এটি আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। আর ঘর সংস্কারের জন্য আমাকে আপনারা সহযোগিতা করতে পারেন৷না

রগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, তারা আমার ইউনিয়নের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সেরা জুটি। যদিও তারা পারিবারিক ভাবে অস্বচ্ছল। তবে তাদেরে এই সম্পর্ক অন্য দম্পতিদের জন্য শিক্ষণীয় ৷ তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়া হয়েছে৷ এ ছাড়াও আমরা চেষ্টা করি তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর৷ 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, তাদের ভালবাসার কথাগুলো শুনে বেশ ভালো লাগলো। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা জয় সমাজের সকলের কাছেই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে সবসময় থাকবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image