• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বাংলার বৈচিত্রময় সংস্কৃতির পৌষ সংক্রান্তি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৫২ পিএম
বাংলার বৈচিত্রময় সংস্কৃতির
পৌষ সংক্রান্তি

অলোক আচার্য

বাংলার সংস্কৃতি বৈচিত্রময়। আদিকাল থেকেই বাংলার আনাচে-কানাচে নানা ধরনের সংস্কৃতির চর্চা করা হয়। কোনো কোনো সংস্কৃতি ধর্ম-বর্ণ ছাড়িয়ে সকলের হয়ে উঠেছে। সবাই এর অংশীদার, সবাই এর গুণগ্রাহী। পিঠার কথা উঠতেই বাংলা মূলুকে পৌষের কথা আসে। পৌষের শীতে জমে ওঠে পিঠা-পুলির আয়োজন। এ মাস এলেই সবাই যেন নষ্টালজিক হয়ে ওঠে। পিঠা মানেই জিভে জল আনা মায়ের হাতে স্বাদ। এ স্বাদ যেন ভোলার নয়। এ আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পৌষ সংক্রান্তিতে। পৌষ সংক্রান্তি আবহমান বাংলার এক চিরায়ত সংস্কৃতি। পিঠা উৎসবের সাথে এর ঘনিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। এর আরেক নাম মকর সংক্রান্তি। 

পৌষ মাসের শেষ দিনে এই সংক্রান্তি পালন করা হয়। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মমবলম্বিদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা পুড়িয়ে (চিতই পিঠা বানানোর মাটির পাত্র) পিঠা তৈরি শুরু করে। অনেকেই আজও এই দিনের আগে পিঠা খান না। আর তাই এই সংক্রান্তি পিঠা উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিনে এই উৎসব হয়ে থাকে। 

শেষের দিন হলেও সাধারণত দুই তিন দিন ধরে হরেক রকম পিঠা বানানোর কাজ চলে প্রতিটি হিন্দু বাড়িতেই। চলে জামাইকে নিমন্ত্রণ অথবা জামাইয়ের বাড়িতে তৈরি পিঠা পৌছে দেবার পালা। একসময় গ্রাম বাংলায় বেশ ঘটা করে এই দিন পালনের রেওয়াজ ছিল। তবে কালের বিবর্তনের সাথে হারিয়ে গেছে সেসব রীতিনীতি। এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসবের আয়োজন করা হতো। তাছড়া বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই বাজি ফুটানো, ফানুস ওড়ানো এসব আনন্দ উৎসবের ভেতর দিয়ে আনন্দমুখর এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটতো। সাকরাইন বা ঘুড়ি উৎসব তেমনই একটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী উৎসব।

পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষের শীতের আমেজকে বাড়তি মাত্রা দিতে ঘুড়ি উড়ানোকে কেন্দ্র করে সাকরাইন উৎসব পালিত হয়। উৎপত্তিগত জায়গায় সংস্কৃত শব্দ সংক্রান্তি ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন শব্দের রূপ নিয়েছে। বাংলা পৌষ মাসের শেষ ও মাঘ মাসের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী এ ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে পুরান ঢাকাবাসী।বাহারি রঙের ঘুড়ি তৈরি করা হয় সাকরাইন উৎসবে। সেগুলোর মধ্যে গোয়াদার, চোকদার, মাসদার, গরুদান, লেজলম্বা, চারভুয়াদার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। 

পিঠা যে শুধু খাওয়া নয় বরং সবাই মিলে আনন্দ করার এক অনুষঙ্গ সেটাও টের পাওয়া যায় এই উৎসব থেকেই। আসলে উৎসব তো উৎসবই। আনন্দ করাই এর মূল উদ্দেশ্য থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় এই দিবস বা ক্ষণকে ঘিরে উদযাপিত হয় উৎসব। নেপালে এই দিবসটি মাঘি নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি মা লাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান নামে উদযাপিত হয়। অবশ্যিকভাবে দেশ ভেদে এর নামের মতোই উৎসবের ধরণে থাকে পার্থক্য।

জানা গেছে, প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতেও এই দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। পৌষ সংক্রান্তি মূলত নতুন ফসলের উৎসব পৌষ পার্বণ’ উদযাপিত হয়। তথ্যগতভাবে বলা যায়, মকর সংক্রান্তির দিন সূর্য নিজ কক্ষপথ থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই দিনটিকে মকর সংক্রান্তিও বলা হয়। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে সংক্রান্তি একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশ ও ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। ফলে এই দুই দেশেই পৌষ সংক্রান্তি বেশ উৎসবের সাথে পালন করা হয়। 

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই দিনে বাড়ির উঠানে দৃষ্টিনন্দন আলপনা দেয়। এক অনন্য কারুকাজে ভরে ওঠে বাড়ির আঙিণা। বাংলাদেশে পুরান ঢাকায় এই দিনকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি উড়ানোর আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন স্থানে পিঠা-পুলির মেলার আয়োজন করা হয়। পৌষ সংক্রান্তি অতিথিরা বেড়াতে আসে। চলে পিঠা দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন। ধনী গরীব প্রতিটি ঘরে ঘরে সাধ্যমত পিঠা বানানোর তোড়জোড় চলে। হাজার বছর ধরে বাঙালির ঘরে ঘরে এই সংস্কৃতি চলে আসছে। এটা যতটা না খাওয়ার উৎসব তার থেকে বেশি বাংলার প্রাণের উৎসব। উৎসবের মত করেই আয়োজন করে পিঠা খাওয়ার আয়োজন চলে আসছে। 

 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image