
নিউজ ডেস্ক: বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৪০টি উপজেলার মধ্য দিয়ে বহমান ১৩টি নদ-নদী। এসব নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে মেঘনা, কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, তেতুলিয়া, ইলিশা, আন্ধারমানিক, পায়রা, আগুনমুখা, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, জয়ন্তি, বলেশ্বর ও কচা। এ নদ-নদীর ভাঙনে প্রতি বছর বিলীন হয় বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, বসতবাড়ি। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয় শত শত পরিবার।
চলতি বর্ষা মৌসুমেও ভাঙনে হুমকির মুখে শত শত ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দিরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এতে নতুন করে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।
বছরের আষাঢ়-শ্রাবণ—এ দুই মাস বর্ষাকাল হলেও মূলত আশ্বিন পর্যন্ত টানা চার মাস বর্ষার দাপট চলে পুরো দেশে। এ সময় নদ-নদীর ভাঙনে বিলীন হয় মানুষের বাপদাদার ভিটেমাটি আর শেষ সম্বল। তাই এ সময় সব হারানোর শঙ্কায় দিন কাটে নদীতীরের মানুষের।
ভাঙনের শিকার নদীতীরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প তৈরি আর তড়িঘড়ি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করে। এতে সরকারের কোটি কোটি জলে গেলেও কোনো কাজে আসছে না ভুক্তভোগী মানুষের।
বরিশালের হিজলা উপজেলার মেমানিয়ার চর দুর্গাপুর গ্রামের সুফিয়ান সরদার বলেন, ‘দুর্গাপুরে নদীভাঙন নিত্যদিনের ঘটনা। গত পাঁচ বছরে সাতবার বসতভিটার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। তার পরও নদী আমাদের পিছু ছাড়ছে না। এখন আবার নদী বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন ভাঙনের কবলে পড়লে কোথায় ঘর তুলব তা জানি না। তার মতে, পাউবো শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না করে বর্ষা মৌসুমের জিওব্যাগ ফেলে ক্ষতস্থানে মলম দেয়ার চেষ্টা করে, যা রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় মাত্র। শুষ্ক ব্লক দিয়ে বাঁধের ব্যবস্থা করলে বর্ষা মৌসুমে আমরা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতাম। তারা বর্ষার মৌসুমে জিওব্যাগ ফেলে ঠিকই, তবে সেগুলো পানির তোড়ে কোথায় চলে যায় তা বলা মুসকিল।’
এ কথা বলেছেন হিজলা উপজেলা সদরের বাউশিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাউবো জিওব্যাগ দিয়ে নদীভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তা কোনো কাজে আসছে না। যখন ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায় তখন এ জিওব্যাগও চলে যায়। এখন স্থায়ী সমাধান দরকার। ব্লক ফেলা না হলে মেঘনার ভাঙন রোধ সম্ভব নয়।’
বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া গ্রামের ভুক্তভোগী রাজ্জাক খান বলেন, ‘সবকিছুই তো নদীতে ভেঙেচুরে চলে গেছে। এখন কোনো রকম একটা ছাপড়া ঘর করে বসবাস করছি। জানি না এবার বর্ষায় এটাও টিকিয়ে রাখতে পারব কিনা।’
পাউবো থেকে তাৎক্ষণিক জিওব্যাগ ফেলা হলেও তা ভাঙনের তীব্রতার সামনে অপ্রতুল বলে মনে করেন বসতভিটা হারানো গ্রামবাসী। নূরজাহান বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘মেম্বার-চেয়ারম্যান-এমপি-মন্ত্রী কেউ নদীভাঙন ঠেকাতে কাজ করেন না। তারা শুধু আশ্বাস দেন। এবারের বর্ষা মৌসুমে ঘরে থাকতে পারব কিনা সেটাই তো জানি না। আমরা খুব আতঙ্কে আছি।’
বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুসংলগ্ন এলাকার শাহে আলম, সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘২০২১ সালে রূপাতলীর ওই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছে। চলতি বছর আকস্মিক জিওব্যাগসহ পাঁচটি বসতঘর নদীতে নিয়ে গেছে। এভাবে জিওব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙনের তীব্রতায় তা কোনো কাজে আসছে না।’
বরিশাল পাউবোর প্রধান প্রেকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪০ উপজেলার বিভিন্ন নদীর ১৫৮টি স্থান ভাঙন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ১৫৮টি পয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বরিশালের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলা। বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলায় ১০টি বাঁধ দুর্বল। আর পিরোজপুরে ১২টি, ঝালকাঠিতে ১০টি, পটুয়াখালীতে ৫৭টি, বরগুনা ২৬টি এবং ভোলায় ৪৩টি বাঁধ।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: