জহিরুল ইসলাম সানি : রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ এ কর্মরত চিকিৎসকরা প্রায়ই দেরি করে বহির্বিভাগে রোগীদের দেখতে যান। অনেক সময় জরুরী মুহূর্ত তাদেরকে কল করার পরেও তারা আসতে দেরি করেন বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও স্বজনরা। হাসপাতালটিতে প্রতিটি সেবার জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হয় বিধায় গরীব রোগীরা তেমন কোন ছাড় পাননা। প্রতিষ্ঠানটির নামমাত্র মূল্যে সেবার উপর ৩০% শতাংশ ছাড় দেয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই গরিব রোগীদের। তবে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে অনেকে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সরেজমিনে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালটির রোগীর ওয়ার্ড ও শৌচাগারগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। নেই দালালদের উৎপাতও না থাকার কথাও জানান তারা। হয়রানি মুক্তভাবে নির্ধারিত মূল্যে সেবা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অনেকে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে শতাধিক রুগি ভর্তি হচ্ছে। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে গাইনি ও শিশুদেরকে সেবা দেয়া হচ্ছে। গরীব রোগীরা ৩০শতাংশ ছাড় মূল্যে সেবা ও ডায়াবেটিজ নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের বিনামূল্যে ইনসুলিন দেয়া হচ্ছে।
তাহমিনা বেগম নামে একজন রোগী বলেন, গাইনি সমস্যা নিয়ে গত এক সপ্তাহ থেকে হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছেন। প্রতিটি সেবার জন্য নির্ধারিত মূল্যে ফি প্রদান সাপেক্ষে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। তবে সময় মত ডাক্তার না পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। তাছাড়া হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা ও পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনি।
নোয়াখালী থেকে সেবা নিতে আসা পপি নামে একজন রোগী জানান, হাসপাতালটির সেবা চমৎকার হলেও গরিব রোগীরা এখানে কোন সেবা পান না। কারণ প্রতিটি সেবার জন্যই আলাদা আলাদা ফি দিতে হয়।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করা হয়। যা একজন গরিব রোগীর জন্য কষ্টসাধ্য। তাছাড়া সিট ভাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহ সকল ক্ষেত্রে ফি দিতে হয়। ফলে এখানে কোন গরিব রোগীর চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ নেই।
পাবনা থেকে সেবা নিতে আসা সেজান মাহমুদ জানান, গত তিনদিন ধরে এখানে আমার স্ত্রী ভর্তি আছেন। মোটামুটি অন্যান্য জায়গার চাইতে খুব বেশি না হলেও সন্তুষ্ট জনক বলে জানিয়েছেন তিনি।
গাইনী বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন মোহাম্মদ নুর আলম জানান, এখানকার সেবার মান মোটামুটি ভালো থাকলেও ডাক্তার টাইম মতো আসে না। নারায়ণগঞ্জ থেকে সেবা নিতে আসা সাখাওয়াত হোসেনও একই অভিযোগ করে বলেন সেবা মোটামুটি ভালো থাকলেও ডাক্তার আসতে দেরি করে। জিজ্ঞেস করলে বলে উপরের রাউন্ডে আছে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. তামান্না নারমীন ঢাকা নিউজ ২৪কে বলেন, আমাদের এই হসপিটালে দৈনিক বহির্বিভাগে শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। এবং তাদের সেবা দিতে আমরা সক্ষম। আমাদের হসপিটালে বেড সংখ্যা ১৫০ টি। এর মধ্যে কেবিন রয়েছে ৩৪ টি। আমাদের এই হসপিটালে ঢাকা সহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীরা সঠিকভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে। আমাদের এখানে নতুন জন্ম নেওয়া ডায়াবেটিক বাচ্চাদের ফ্রি ইনসুলিন দেওয়া হয়। গরীব রোগীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ত্রিশ শতাংশ চিকিৎসা ছাড় দেওয়া হয়। এখানে সকল ধরনের ইকুইপমেন্ট রয়েছে । যা দিয়ে আমরা চিকিৎসা দিতে সক্ষম। আমাদের হাসপালে নয়টি ভেন্টিলেটর মেশিন রয়েছে। আর ৪ থেকে পাঁচটা মেশিন বেশি হলে আমাদের জন্য ভালো হতো। তবে সময় মত ডাক্তার না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / জেডএস
আপনার মতামত লিখুন: