
মশিউর রহমান সেলিম, কুমিল্লা: দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বানিজ্যিক নগরীখ্যাত কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, লালমাই, বরুড়া, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে আজ মহামারী করোনার প্রার্দুভাবসহ নানাহ কারনে ‘‘কত লাকসাম কত বাতি’’খ্যাত বৃহত্তর লাকসামের জৌলুস যেন হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মহামারী করোনার ছোবলে গত দুই বছর যাবত আর্থিক মন্দায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের অতীত ঐতিহ্য লাল খাতার হালখাতা ও বাংলা নববর্ষের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এবার কোন চমক নেই বলেই চলে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের বাংলা বছরের শেষ চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ বাঙ্গালী জাতির অতীত ঐতিহ্যে ভরা নানাহ আয়োজনে দুটো দিন যেনো ভিন্ন মাত্রায় হারিয়ে যাচ্ছে মহামারী করোনার দৌরাত্বে ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক মন্দার কারনে। বসন্তের শেস লগ্নে চৈত্র সংক্রান্তি গ্রীষ্মের শুরুতে চৈতালী স্বস্তির হাওয়া বইলেও ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে সব দায়-দায়িত্ব, দেনা-পাওনা, হিসাব-নিকাশ কিংবা পুরাতন বছরকে বিদায় করে নতুন বছরকে বরন করা। সবকিছু মিলিয়ে যেন কৃষকের পাট ক্ষেতে নিড়ানী দেয়া শেষ, দোকানীর খাতায় হালনাগাদ হিসাব নিকাশ হয়ে গেছে। ইরি-বোরো মৌসুম আসন্ন,ব্যবসায়ীদের পাইকারী খুচরা দোকানে চলে মিষ্টি মুখ, মিলাদ মাহফিল ও হোটেল রেস্তোরার বিরানীর পেকেটসহ নানাহ আয়োজনে আনন্দ কাটে ক্রেতা- বিক্রেতাদের সময়। এ যেন এক অনিন্দ্য বাঙ্গালীয়ানা। তবে মহামারী করোনার ছোবলে বিগত দু’টি বছর বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠানমালা লকডাউন ও আসন্ন রমজান ঘিরে ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, বর্ষবরণকে সামনে রেখে একটা সময় বাড়ী ঘর সাজতো নতুন সাঁজে। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে দোকান পাট ও বসত ঘরে চলতো ধোঁয়া মোছার কাজ। বাড়ী বাড়ী দূর-দূরান্ত থেকে আসা স্বজনদের কোলাহল, সাপ্তাহিক সরকারী ছুটি ২ দি পেয়ে চাকুরীজীবিদের উপস্থিতি বর্ষবরণকে এনে দিতো নতুন মাত্রা। তার উপর এলাকার বিভিন্ন স্থানে চলতো মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল শ্রেণি মানুষের যাতায়াত যেন ওইসব মেলাকে সমৃদ্ধি করে তুলতো। ঘর-গৃহস্থির নানাহ উপকরণ কিনতে এবং গ্রামীণ সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে মেলার কোন বিকল্প ছিলো না।
এছাড়া বৈশাখী উৎসবে বিভিন্ন এলাকায় চলতো প্রীতি ফুটবল, ক্রিকেট ও হা-ডুডু সহ নানাহ খেলাধুলা এবং দিনব্যাপী বনভোজন। ঘরে ঘরে হৈ-হুল্লোল আর চেঁচামেচি, প্রত্যেক ঘরে রান্না হয়েছে হরেক রকম গ্রামীন বৈশাখী খাবার। পানতা-ইলিশ, পিটা-পায়েস, ফল-ফলাদি, মিষ্টি জাতীয় খাবার চিড়া-মুড়িসহ নানাহ খাবার। অথচ ওইসব বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে যেন অতীত। বর্তমান করোনার প্রভাবে সবকিছুই যেন এলোমেলো হয়ে গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অপর একটি সূত্র জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের সব হিসাব-নিকাশ করে নেন হালনাগাদ কিংবা লাল খাতায় খোলা হয়েছে নতুন আঙ্গিকে হালখাতা। কিন্তু সময়ের বিচারে এ অঞ্চলের সকল শ্রেণির ব্যবসায়ীদের হালখাতা উৎসব এবার মহামারী করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দায় জমে উঠেনি। ফলে ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই হালখাতা উৎসবে দায়-দেনা হিসাব নিকাশে অনেকটা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। হালখাতা অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ লোকজনের উপস্থিতি না থাকায় প্রভাব পড়েছে ধার দেনায়।
এ অঞ্চলে একটা সময় শুভবোধ আর সুন্দরের ভাবনাকে পূঁজি করে একাধিক ব্যবসায়ী পালন করতো হালখাতা উৎসব। কিন্তু এখন আর সেই ঐতিহ্য যেনো অতীত স্মৃতি। সব হিসাব নিকাশের মধ্য দিয়ে পাল্টে গেছে ঋতুরাজ। এ চৈত্রের শেষে আর বৈশাখের শূরুর মধ্য দিয়েই এবার বিদায় নিচ্ছে ১৪২৮ আর শুরু হচ্ছে ১৪২৯ বাংলা সন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: