• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

পায়ে হেঁটে একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি স্মরণ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৫৬ পিএম
জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হয়
পায়ে হেঁটে একাত্তরের স্মৃতি স্মরণ

নিউজ ডেস্ক:   একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর পর জীবন বাঁচাতে নিরুদ্দেশ গন্তব্যে হাঁটতে হয়েছিল কোটি মানুষকে। ৫৩ বছর আগের দুঃসহ সেই স্মৃতি উপলব্ধিতে আনা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত স্থানসমূহ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গতকাল মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসে আয়োজন করা হয় ‘পায়ে হাঁটা’ কর্মসূচি।

‘শোক থেকে শক্তি: অদম্য পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও পর্বতারোহী সংগঠন অভিযাত্রী। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল, তার সহধর্মিণী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত জিএম কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন হোসেন, শিল্পী কনক আদিত্য, ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক হেনা সুলতানা, অভিযাত্রীর সংগঠক ও পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার, মির্জা যাকারিয়া বেগ, নূর মোহাম্মদ, মো. ইউছুফসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং নারী ও শিশু। তাদের সঙ্গে পথে বিভিন্ন স্থান থেকে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দেন এই পদযাত্রায়। 

পদযাত্রায় অংশ নিতে এদিন ভোর ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের একাংশ সমবেত হয়। সেখানে পদযাত্রার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সূচনা বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল ও মফিদুল হক। সোয়া ৬টার দিকে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে পদযাত্রা শুরু হয়। স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে পদযাত্রী দলটি। সেখান থেকে টিএসসি হয়ে পদযাত্রী দল স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে পৌঁছায় শিখাচিরন্তে। সেখানে পদযাত্রী দল কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে, অতঃপর ছবির হাটের গেট দিয়ে বের হয়ে মধুর ক্যান্টিনের পাশে দাঁড়িয়ে তারা নীরবে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোকে। সেখান থেকে পদযাত্রী দল অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে পদযাত্রী দল শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পাশ দিয়ে নীলক্ষেত পৌঁছে। 

পরে তারা সিটি কলেজ, পিলখানা গেট, সাত মসজিদ রোড হয়ে মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজে যায়। এখানে একাত্তরে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদরগোষ্ঠী পাশবিক নির্যাতনের ভয়ংকর ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। অমানুষিক নির্যাতন শেষে বুদ্ধিজীবীদের এখান থেকে নেওয়া হতো রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে। নীরবে খানিকটা সময় দাঁড়িয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে অভিযাত্রীদল হাঁটতে থাকে বসিলার উদ্দেশ্যে। বসিলা ব্রিজের নিচে অপেক্ষমাণ ট্রলারে করে পদযাত্রী দল তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বর নদী হয়ে ৩২ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে যায় নয়ারহাট। ঘাটে নেমে ঢাকা-আরিচা সড়কের পথ ধরে পদযাত্রী দল। আর এভাবে বিকেল ৫টার দিকে পদযাত্রীর চকিতে দৃষ্টিপথে জেগে ওঠে শক্তির সেই উজ্জ্বল শিখর- সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। 

জাতীয় স্মৃতিসৌধে তরুণ প্রজন্মকে শপথ পাঠ করানোর মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়। শপথ পাঠ করান অভিযাত্রী দলের সংগঠক ও পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার। তিনি সমকালকে বলেন, রোজার কারণে পায়ে হাঁটা পথ কমিয়ে ১৫ কিলোমিটার রাখা হয়েছ। আর বাকি পথ, অর্থাৎ ৩২ কিলোমিটার আমরা নৌপথে পাড়ি দিয়েছি। 

তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ও শোক তরুণপ্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরতেই এই আয়োজন করা হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে।

একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর পর জীবন বাঁচাতে ৩৮ জনের একটি অভিযাত্রী দল দেশমাতার মুক্তির লক্ষ্যে ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ’-এর জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ভারতের উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত পদযাত্রায় হেঁটে অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি আদায় ও গণহত্যা বন্ধে জনমত সৃষ্টি করাই ছিল ওই অভিযাত্রী দলের প্রধান উদ্দেশ্য। তার ধারাবাহিকতায় অভিযাত্রী’র উদ্যোগে ১১ বারের মতো এ কর্মসূচি পালন করে। ২০১৬ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সঙ্গে যৌথভাবে এটি ৭ম পদযাত্রা। ঢাকার বাইরে মৌলভীবাজার এবং দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের বোষ্টনে এদিন পৃথক অদম্য পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / এইচ

আরো পড়ুন

banner image
banner image