ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : এআরডি'র নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন জাহান বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন-সংগ্রামে আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের সংবিধানে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মানবাধিকারের বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করেছিলেন। তাঁর দেখানো পথধরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। সরকারি- বেসরকারী মহা কর্মযগ্যে মানবাধিকার লংগনের শিকার বাস্তচ্যুত লক্ষ-লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্টির নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থাসহ খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তা বিদ্যমান আছে এবং ফিলিস্ক্রিনসহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্ব দরবারে মানবাধিকার সুরক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।
১০ ডিসেম্বর (রোববার) জেলা সমাজসেবা অডিটরিয়াম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন এআরডি- মানবাধিকার, আইন, ন্যায় বিচার ও দূর্নীতি প্রতিরোধ কর্মসূচীর পরিচালক সিনিয়র এডভোকেট কাজী আজিজুর রহমান (দুলাল)।
মানবাধিকার দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মো. ওয়ালী উল্লাহ।
এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিটিভি ও দৈনিক ইত্তেফাক এর জেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ আরজু মিয়া, এআরডি-মানবাধিকার, আইন সহায়তা, ন্যায় বিচার ও দূর্নীতি প্রতিরোধ কর্মসূচীর উপ-পরিচালক (তদন্ত) সিনিয়র এডভোকেট কে এম শফিকুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ আবু হোরায়রাহ।
এআরডি'র কর্মসূচী সমন্বয়কারী জান্নাতুল ফেরদৌস এর প্রাণবস্তু উপস্থাপনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক ফরহাদ হোসেন, একুশে আমার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা গায়ত্রী দেবনাথী, উপজেলা সহ:সমাজসেবা কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন, তরুন নারী মাসুমা আক্তার, সমাজকর্মী কামাল মিয়া সহ আরও আনেকেই।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যান্য ক্ষেত্রের পাশাপাশি নারী, শিশু ও কিশোরীদের নিয়ে আমরা এখনো পিছিয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। নারীর মানবাধিকারের মূল একটি বিষয় সর্ব প্রকার সহিংসতা, নিষ্ঠুর আচরণ, শারীরিক, মানসিক নিপীড়নমুক্ত একটি জীবন। বাংলাদেশের তথ্য এই উপমহাদেশের নারী আন্দোলনের শতাব্দীর সংগ্রামী ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও এখনো নারীর ন্যূনতম মৌলিক অধিকার অর্জিত হয়নি। পরিবারে তথা গৃহে, কর্মক্ষেত্রে, যানবাহনে, রাস্তাঘাটে সর্বত্র নারী দৈহিক, মানসিক সর্ব প্রকার সহিংসতা ও নিষ্ঠুর আচরণ ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় ও বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গবেষণা ও নিরীক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যুরো অব পরিসংখ্যান গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীরা গৃহে ৮৭ শতাংশ নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হয়। এ নির্যাতন জীবনসঙ্গী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের দ্বারা হয়ে থাকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রশিক্ষণ গবেষণা পাঠাগার উপ-পরিষদের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে নারী ও কন্যা নির্যাতন নিয়ে একটি নিরীক্ষা করা হয়েছে। এতেও নারী ও কন্যা নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে। ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে আমরা এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে দেখছি। সময়ের পরিবর্তনের সাথে নারী নির্যাতনের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতি তিনজনে একজন নারী তার জীবন পরিক্রমায় শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে সামাজিক সমস্যা এবং নারীর অধিকারের ও মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও নারীর প্রতি সহিংসতারোধে বিভিন্ন নীতি, আইন, কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। সরকারের সাথে বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা/প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সংগঠন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যম ঐক্যবদ্ধ হয়ে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে পারলেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পূর্ণতার কাছাকাছি আছি বলে দাবি করা যাবে।
নারী নির্যাতন কমাতে নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার, সমাজের যে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সচেতনতার প্রয়োজন। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী তাই নারীকে সবক্ষেত্রে সম-অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। বন্ধ করতে হবে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতা, তা না হলে সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারবে না।
ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে উন্দ্রক্ত করা, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, বে-আইনি ফতোয়া, নারীর প্রতি এসব সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী-পুরুষ যৌথভাবে নির্যাতন বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নির্মূলের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সচেতনতা মূলক কর্মসূচিতে নারী, কিশোরী-কিশোরসহ পুরুষদের যুক্ত যুক্ত করে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
সভায় সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনজীবী, সাবেক জনপ্রতিনিধি, সমাজ, মানবাধিকার ও এনজিও কর্মীসহ গন্যমান্য ব্যক্তিগন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: