• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৪২ পিএম
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের
১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ : নানা অনুষ্ঠান ও উৎসব মুখর পরিবেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার দেড়যুগ পূর্তি ও ১৯ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বৃহস্পতিবার  ( ৯ মে) উদযাপিত হয়েছে। 

একটি বিশ্বমানের সাংস্কৃতিক চেতনাকে বুকে লালন করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ত্রিশালের নামাপাড়া এলাকায় আজ থেকে দেড়যুগ আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল হাঁটি হাঁটি পা করে সে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন পূর্ণযৌবনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদক্ষ প্রশাসক ও নিজগুণে গুণান্বিত ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর-এর সুদক্ষ নেতৃত্ব ও অহরাত্রি পরিশ্রমে বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ সারা দেশব্যাপী সুনাম বয়ে এনেছে। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন-এই তিন শব্দকে মটো হিসেবে নিয়ে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে তিনি তাঁর এই লক্ষ্যমাত্র অর্জনের দৃঢ় ইচ্ছের কথা পুর্ণব্যক্ত করেছেন। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও তাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ত্রিশালবাসীর অবদান ও নিরলস অনুসমর্থনকে তিনি কুর্ণিশ জানান।

উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেছেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন  বিশ্ববিদ্যালয় করবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এখানকার একাডেমিক পরিবেশকে আমরা সুনিশ্চিত করতে চাই। একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় করবার যে অভিযাত্র সেই অভিযাত্রায় সবাই একত্রিত হয়েছি।

বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চে’ ১৯ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ত্রিশালের মাটিকে পুণ্যভূমি অভিহিত করে ড. সৌমিত্র শেখর আরও বলেন, এখানে কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম পা দিয়েছিলেন। তাই এটি একটি পুণ্যভূমি। এখানে আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে পেরেছি। প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত জননেত্রী শেখ হাসিনা উদার হাতে সাহায্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। আমাদের শুধু সেটি গ্রহণ করতে হবে।

ভারতের শান্তি নিকেতনের আদলে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে গড়ে তুলতে হলে ক্যাম্পাসের বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, আমাদের এই ক্যাম্পাসের খুব কাছেই বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়ি, একটু দূরে রফিজউল্লাহ দারোগার বাড়ি। এসব জায়গায় নজরুল ছিলেন। জায়গাগুলো এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাদুঘর হয়ে আছে। এগুলো যদি আমাদের ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তাহলে একদিকে যেমন জায়গা গুলোর সঠিক সংরক্ষণ সম্ভব ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের ক্যাম্পাসের কলেবরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। এবিষয়টি সরকারকে ভেবে দেখতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এম.পি. বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় তিন শব্দের যে স্লোগান বানিয়েছেন শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন। খুব চমৎকার হয়েছে। কারণ আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি শিক্ষার জন্য, পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য। গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য। তাই শিক্ষা, গবেষণা উন্নয়ন আসলেই একসুতায় গাঁথা। এই চমৎকার ভাবনার জন্য উপাচার্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকার ইচ্ছের কথা পুনর্ব্যক্ত করে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল বিশ্ব ভারতীর মতো একটি প্রতিষ্ঠান এখানে গড়ে তোলা। আমি জানি মাত্র সাড়ে ৫৬ একর জায়গা দিয়ে বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠান হবে না। তাই আপনারা দ্বিতীয় যে ক্যাম্পাসের কথা চিন্তা করছেন এটির জন্য কাজ করেন। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় যারা ছিলাম তারা এবারো একত্রে থাকবো।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের প্রত্যেকের জন্য অনুসরণীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষকদের এই ক্যাম্পাসের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। কারণ এটি আর দশটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নয়। শিক্ষকরা যদি সত্যিকার অর্থে ডেডিকেটেড থাকেন তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের সবার জন্য অনুসরণীয় বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পারবে যা আমাদের প্রতিষ্ঠাতাদের স্বপ্ন। আপনাদের স্বপ্ন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত সকল কর্মসূচীর সফলতা কামনা করেন।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বৃহত্তর ময়মনসিং সাংস্কৃতিক ফোরামের মহাসচিব প্রকৌশলী রাশেদুল হাসান শেলী। আলোচনা করেন চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুশাররাত শবনম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ও প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আল-মাহমুদ কায়েস ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রিয়েল সরকার। রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর অনুষ্ঠানে ধন্যবাদজ্ঞাপন ও সঞ্চালনা করেন।

এর আগে দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত সহযোগে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিবসটি শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এম.পি. ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। এসময় ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বৃহত্তর ময়মনসিং সাংস্কৃতিক ফোরামের মহাসচিব প্রকৌশলী রাশেদুল হাসান শেলী, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, দপ্তর প্রধানসহ ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে নবনির্মিত কলা ভবনে সামনে শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্তকরণ শেষে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গাহি সাম্যের গান মঞ্চে গিয়ে সমবেত হয়। পরে এই মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে মাননীয় উপাচার্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা সহ ১৮ পাউ- ওজনের একটি কেক কাটেন। এরপরই শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা।

উল্লেখ্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্রোহী কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। কবি নজরুল নামাপাড়া গ্রামের যে বট গাছের নিচে বাঁশি বাজাতেন, সেই বটতলার কাছেই ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ মে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশে^র সাথে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের রূপকল্প নিয়ে কাজ করছে। চারটি বিভাগ দিয়ে বিশ^বিদ্যালয়টি শুরু করা হলেও এখন বিভাগের সংখ্যা ২৪।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image