মনিরুজ্জামান মনির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: আখাউড়া উপজেলার মোগড়া গাংভাঙা এলাকায় সরকারী জলাশয় ভরাট করে দখলের অভিযোগ উঠেছে এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু সায়েদ মিয়া গং এর বিরুদ্ধে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় যে, মোগড়া ইউনিয়নের গাংভাঙা এলাকার ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত জেএল নং ৫২ এর দাগ নং ১২০০ তে ২৪ শতাংশ জলাশয় সহ পার্শ্ববর্তী জলাশয়সহ মোট ৬১ শতাংশ জলাশয় এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু সায়েদ মিয়া গং রাতের আঁধারে বালি ফেলে ভরাট করে দখলের পাঁয়তারা করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শাহ মোঃ নিয়ামত উল্লাহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করলে সহকারী কমিশনার ভূমি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত ২৪ শতাংশ বালি ভরাটকৃত জায়গা লাল নিশান দ্বারা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড স্থাপন করে দখলীকৃত জায়গা থেকে দখলদার মুক্ত করেন। ইতিমধ্যে জনৈক সচেতন নাগরিক কামরুল হাসান পিতা মৃত আঃ আজিজ সাং গাংভাঙা, মোগড়া, আখাউড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বরাবর ফরম-১-বিধি ৫(১) দ্রষ্টব্য মোতাবেক প্রতিকার প্রার্থনা করে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি সরকারী পুকুর হতে ভরাটকৃত মাটি উত্তোলন করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলেন।
সায়েদ মিয়া পিতা মৃত জহিরুল হক, রুনা বেগম স্বামী সায়েদ মিয়া, জালু মিয়া, পিতা মৃত ওয়ালী মিয়া, উজ্জ্বল মিয়া, পিতা জালু মিয়া কর্তৃক সরকারী জলাশয়সহ পুকুর ভরাট করার প্রেক্ষিতে সরকারের পরিবেশ আইন লঙ্ঘন হয়েছে মর্মে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। তথাপি তাদের বিরুদ্ধে আইনি কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়াতে তারা স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা কর্মীদের সহায়তায় পুনরায় দখলকার্যক্রম ও মাটি ভরাট কার্যক্রম শুরু করার পাঁয়তারা করছে। গত ২৪ মে মূল অভিযুক্ত সায়েদ মিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বরাবর এক আবেদনে নিজেকে প্রতিবন্ধী সন্তানের পিতা দাবী করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরে সে লিখিত ভাবে ১৫ দিনের মধ্যে ভরাটকৃত মাটি সরিয়ে দিবে মর্মে মুচলেকা প্রদান করেন। মুচলেকায় উল্লেখিত তারিখ অতিবাহিত হলেও এখনো মাটি সরানোর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়ের সাথে টেলিফোনে কথা হলে তিনি জানান যে, সরকারী জলাশয় ভরাট করে দখলের পাঁয়তারা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারী জায়গা সরকারের দখলে আছে। আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যদি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে ভরাটকৃত মাটি অপসারণ করা না হয় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বিষয়টা চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। উল্লেখিত বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ভূমিদস্যু যদি আইনের ফাঁক দিয়ে রক্ষা পেয়ে যায় তাহলে অন্যান্যরা বিপুল আগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
পরিবেশ আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব তরী বাংলাদেশ এর কর্ণধার শামীম আহমেদ জানান, যেভাবে জলাশয়, পুকুর ভরাট চলছে তার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের আরো কর্মোদ্যোগী হওয়া উচিত। ৭/১৫ দিন সময় দিয়ে যে মুচলেকা নেওয়া হয় পরবর্তীতে তার সঠিক ফলোআপ না থাকাতে ভরাটকৃত জলাধার তেমনই থেকে যায়। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে এবং ১/২ দিনের মধ্যেই জলাধারটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে। সর্বোপরি যারা এই আইন লঙ্ঘন করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে পরিবেশ রক্ষা পাবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: