মোঃ নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ : চলতি ২০২৪ সালের সরকার ঘোষিত স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত দশ ব্যক্তির মাঝে তিনজনই ময়মনসিংহ নগরীর বাসিন্দা। শুক্রবারে মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ হলে এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ব্যাপক আলোচনা চলছে।
পুরষ্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) ও ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, সেইসাথে বাসায় গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে পুরষ্কারপ্রাপ্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডাঃ হরিশঙ্কর দাশ, সমাজসেবায় অরন্য চিরান ও ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুনসহ তিনজনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
ডা. হরিশঙ্কর দাশ- বৈশ্বিক মহামারী করোনার সময় সর্বাত্মক লকডাউনে সকলেই নিরাপদ আশ্রয়ে ঘরে আবদ্দ। সকল প্রাইভেট প্র্যাক্টিশনার চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ ঠিক তখন জীবনবাজি রেখে রেখে সৃষ্টি কর্তার উপর ভরসা রেখে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন নিয়মিত। একদিনের জন্যও বন্ধ করেননি নিজের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসার পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী ও সামাজিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন নিয়মিত। দরিদ্র অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন তিনি। এখনও প্রতিদিন গড়ে দুই ঘন্টা বিনামূল্যে রোগী দেখেন। গরীব রোগীদের ওষুধের ব্যবস্থাও করে দেন অনেক সময়। নিজেও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত কিন্তু তারপরও তিনি রোগীদের সেবা দেয়া একদিনের জন্যেও বন্ধ রাখেননি। এছাড়া তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য কোন ফি নেন না। ময়মনসিংহের এক সজ্জ্বন ব্যক্তি ডা. হরিশঙ্কর দাশ। সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ক্রীড়া, সেবাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে যুক্ত থাকা নির্লোভ-নির্মোহ ডা. হরিশঙ্কর দাশ সাধারণ মানুষের কল্যানেই থাকতে চান আজীবন।
অরন্য চিরান- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী গারো জাতিসত্বার কবি ও গবেষক অরন্য চিরান। শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার নেতাই নদীর তীরে দীঘলবাগ গ্রামে। গারো-হাজং আদিবাসিদের বাস। অদিবাসীদের অধিকার আদায়ে তরুণ বয়স থেকেই নিজেকে যুক্ত রাখেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে। সেই ধারাবাহিকতায় আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণে এখনও সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। গারো আদিবাসীদের ওয়ানগালা উৎসবসহ অন্যান্য রীতি-আচারে তাঁকে অগ্রণী ভুমিকায় দেখা যায়। এছাড়া গারো স্টুডেন্টস এসোসিয়েশেনের উপদেষ্টা, জেলা শিল্পকলা একাডেমির আহ্বায়কসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন নিয়মিত। বছর দশেক আগে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ডিগ্রী অর্জনের পর বর্তমানে পিএইচডি রিসার্চ ফেলো হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবু দেওয়ানের তত্বাবধানে গবেষণা করছেন। অরণ্য চিরান হাজং জনগোষ্ঠীদের নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে এতিম ও পথশিশুদের আশ্রয়ণকর্মেও ভূমিকা রেখে চলেছেন ।
ফিরোজা খাতুন- জাতীয় পর্যায়ে দশবারের দ্রুততম মানবী ফিরোজা খাতুন থাকেন নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে। ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ দ্রুততম মানবীর খেতাব জয় করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি আর ট্র্যাকে খুব একটা নামেননি। ১শ মিটার দৌড়ের পাশাপাশি ২শ মিটার লং জাম্পেও তিনি বিভিন্ন পদক জয় করেছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর সর্বোচ্চ অর্জন ব্রোঞ্জ পদক। খেলাধূলা থেকে সড়ে আসার পর থেকে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে। এই অর্জনের আগে ২০১৩ সালে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার লাভ করেন। ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিত চিরচেনা মুখ ফিরোজা খাতুন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: