• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী ত্যাগীরাই দলকে ক্ষমতাসীন করেছেন 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:১৬ পিএম
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী ত্যাগীরাই দলকে ক্ষমতাসীন করেছেন 
আওয়ামী লীগ

সাইদুর রহমান
      
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সকল মনোনয়ন প্রত্যশাদের দলের সভানেত্রী বললেন, দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাঁর পক্ষে কাজ করতে হবে আর যদি আপনি মনে করেন, দল মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে আপনিই  যোগ্য তাহলে ডামি প্রার্থী হতে পারেন। রানিং এমপিরা মুজিবকোট পড়ে প্রতীকের ব্যন্ড নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন। ক্ষমতার লালসায় অন্ধ হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচনী যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, দলীয় বিদ্রোহীরা। একবারও দলের কথা চিন্তা করলেন না কিংবা নৌকার এমপি ছাড়া সরকার গঠন করা যাবেনা সেটাও ক্ষমতার লোভে সারশূন্য হয়ে গেল! যাঁরা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রকৃত অর্থে বিদ্রোহী প্রার্থী। রানিং এমপিরাই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নৌকার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান করার জন্য সব চেষ্টা চালিয়েছেন। 

অন্যদিকে ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলীয় সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে নিয়ে নৌকার পক্ষে  প্রচার-প্রচারণা শুরু করলেন,নির্বাচনী মাঠে  প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হতে লাগলো। এই যেন নিজ গৃহে গৃহদাহ শুরু হয়ে গেল। আমি ময়মনসিংহের নান্দাইল আসনের নৌকার মনোনীত প্রার্থী মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম মহোদয়ের নির্বাচনে  প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলাম। নির্বাচনী চলাকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা  হাসপাতালের দৃশ্য গুলো দেখেছি। নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন তারপরও দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল গন্ডগোল করা যাবেনা।  দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে তাই নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে মেধা,পরিশ্রম, অর্থ সবই নিজের দৈন্যদশা কথা চিন্তা না করে  সাধ্যের সবটুকু উজার করে দিলেন। নিজে গৃহে অন্ন আছে কিনা না কর্মীদের সেই খবর তখন অর্থহীন। সারাদিন প্রচারণায় অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে রাতে সন্তানের জন্য বিস্কুটের প্যাকেট হাতে বাড়ী ফেরার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার! তার রক্তাক্ত অর্ধমৃত দেহের পাশে বিস্কুটের প্যাকেটও পরে আছে। নৌকা প্রেমিকদের রক্তমাখা শরীর, রক্তাক্ত মাথা,স্বজনদের বুকফাটা কান্না  হাসপাতালের বাতাস কম্পিত হয়েছিল। পরিবারের লোকজনদের আর্তনাথ আমাকে শুধু বিচলিত করেনি, নিজের অশ্রু বারণেও ব্যর্থ হয়েছি।  নির্বাচনী মাঠে সংঘাত শুধু এক পক্ষের দোষ বলা অযৌক্তিক । একটা পক্ষ ব্যক্তিকে সমর্থন দিয়েছে আরেকটা পক্ষ প্রাণের সংগঠনকে সমর্থন দিয়েছেন। তাদের অপরাধ একটাই ছিল দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া। যে সব আসনে নৌকা বিজয়ী হয়েছে দলের বাধ্যগত কর্মীরা বেঁচে গেছেন। আর যে সব আসনে নৌকা হেরে গেছে সেই আসনে ত্যাগী বা দলের বাধ্যগতদের কি হবে সময়েই দুঃসময়ে বার্তা দিবে। 

দলের ত্যাগীরা ত্যাগের জন্য প্রস্তুত। ত্যাগীরা হলেন দলের প্রাণ আর দলের আদর্শ ও নীতির ধারক ও বাহক।ত্যাগী নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক দল গুলোতে দিনে দিনে কদর কমে যাচ্ছে অথবা কদর দিতে রাজনৈতিক দল গুলো অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে না। দলের নীতি নির্ধারকের ইচ্ছাকৃত হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত হোক ত্যাগীরা অবহেলীত, সুবিধা বঞ্চিত এটা সাতশত সত্য। আমি এরশাদ সাহেবের  শাসনকাল দেখেছি, তেমনি বিএনপি কিংবা চারদলীয় জোটের শাসনকাল দেখেছি। এরশাদ সাহেবের আমলে জাতীয় পার্টি মানেই ; বিএনপি মনে হতো। এরশাদ সাহেব দলছুট নেতার সমন্বয়ের জাতীয় পার্টি গঠন করেন। তখন দেশের মানুষ বুঝতো বিএনপির নেতারা সুধিবার জন্য জাতীর পার্টিতে যাবেন আর বিএনপির নেতারা আবার প্রয়োজনে বিএনপিতে ফিরে আসবেন। এরশাদের রক্ত চক্ষু শাসন আমলে অনেক বড় বড় নেতার বহর দেখা গেছে । আজকে জাতীয় পার্টি তলানী পড়ে গেছে, তার পিছনে  অনেকগুলো কারন আছে। তবে সবচেয়ে বড় কারন দলের নির্ধারকরা  ত্যাগী নেতাদের  মূল্যায়ন করেনি এবং নতুন করে ত্যাগী নেতা তৈরী করতে পারেনি। তারপর বিএনপি কিংবা চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টিতে থাকা সেই দলছুট নেতাদের প্রতি সুদৃষ্টি পরলো বিএনপি। বিভিন্ন রাজনৈতিক প্যাকেজের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপি কিছু কর্মী বিছিন্ন নেতাদের দলে ভিড়ালেন । চারদলীয় জোট চালাচ্ছে দেশ আর হাইব্রীড নেতারা চালাচ্ছে দুর্নীতির মহাসমাবেশ।জিয়াউর রহমান সাহেব বলেছিলেন, " রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে দেব। "  দলের ত্যাগীরা নিজের সন্তানের  মুখে খাবার না দিয়ে দলের মুখে খাবার দেয়। চারদলীয় জোটের দৌরাত্ম্যের যাতাকলে পিষ্ট হতে থাকলো ; বিএনপি'র ত্যাগী নেতাকর্মীরা। অভিযোগহীন ভাবে ত্যাগীরা দল থেকে প্রস্হান করলেন। রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব অথবা দুর্নীতির কারনেই হোক,  দেশের কয়েক বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ জেলের গ্লানি টানছেন। বিএনপিতে যদি আজ ত্যাগীরা থাকতো,  তাহলে বুকে পাথর বেঁধে, রাজপথ রক্তে রন্জিত করতো। 

" রাজনীতিতে দেশের ক্ষমতা  দীর্ঘস্থায়ী নয় কিন্তুু দল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে "।  ত্যাগীরা যেমন উচ্চ বিলাসী হয় না তেমনী পদ লোভী না হলেও দলের সম্মানজনক স্থানে থাকতে চায়। ত্যাগীরা নালিশ করতে পারে না আবার অভিমান পরিহার করতেও পারেনা। ত্যাগীরা স্বার্থের জন্য চোখ গুলো রক্ত বর্ণ করতে পারেনা আবার আড়ালে চোখের অশ্রু বারণ করতে পারে না। ত্যাগীদের কোনদিন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়না কিন্তু দলের প্রযোজনে  আঙ্গুলের চেয়ে বড় অঙ্গ দিতে প্রস্তুত। দলের সুসময়ে হয়তো তাঁদের উপস্হিতি কম কিন্তু দুঃসময়ে জীবন বাজি রাখেন। 

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। রাজপথে যে দলের সৃষ্টি । দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহনকারী আওয়ামী লীগ। এখন বাংলাদেশের চারিদিকে শুধু জয় বাংলার জয়গান। ত্যাগীরা স্হান না পেলে দলে বিপর্যয় শুধু সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন। দেশের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে কিন্তুু দলের সাংগঠনিক অবস্থার কতটুকু উন্নতি হয়েছে? বিগত ১৫ বছরের ক্ষমতায় দলের আদর্শীক শিক্ষায় কয়জন নেতাকর্মী দীক্ষিত হয়েছে? এই দীর্ঘ সময়ে কয়জন ত্যাগী নেতাকর্মী দলে তৈরী হয়েছে? যারা দলের সাইনবোড ব্যাবহার করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তারা হলো ; অনুপ্রবেশকারী। দলের ভিতরে অনুপ্রবেশকারীরা বা হাইব্রীডরা দলের ৭৩ বছরের নীতি আদর্শকে কলঙ্কিত করেছে ক্যাসিনো স্টাইলে। এখন শুধু বাকী দলের গঠনতন্ত্রটা ছিঁড়ে খাবার! " ত্যাগীরা দলকে ভালবাসে পাজরের অনুভূতি দিয়ে আর অনুপ্রবেশকারী ভালবাসে ডামি অনুভূতিতে। " 

দল এখন আরও সুসময়ের পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত। এখন দলীয় অফিসে নেতাকর্মীর অভাব নাই। আগের মতো হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কর্মী জোগাড় করতে হয় না।  বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সবচেয়ে দুঃসময় গেছে ৯০ দশকে। তখন জয় বাংলা বললে এদিক সেদিক তাকাতে হতো নির্যাতন অথবা মামলার ভয়ে।   সেই ৯০ দশকের ত্যাগী ছাত্রনেতা,  কর্মীরা আজ কোথায় ? যাঁরা দলের অস্তিত্ব ঠিকানোর লড়াইয়ে জীবন বাজি রেখেছিল প্রতিমুহূর্তে, প্রতিক্ষণে। যাঁরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে,  রাজপথ জয়বাংলা স্লোগানে কম্পিত করতেন, ক্ষমতার স্বাদ কি তাঁদের জিহ্বাপ্রান্তকে স্পর্শ করেছে? হাইব্রীডের দৌরাত্ম্যে ত্যাগীরা আজ দলে কোনঠাসা। কিন্তু ত্যাগীরা দলের নীতি আদর্শকে বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে শিখেছে।  

দলের আদর্শ এবং লক্ষ সম্পর্কে অনেকের ধারনা নেই ; তারপরও বড় নেতা।  মুজিবকোর্ট গায়ে দিয়ে নিজেকে প্রকাশের ব্যর্থ প্রয়াস। বিভিন্ন দলীয় ব্যানার বা পোস্টারে অসংগতি দেখে দেশবাসী বিভ্রান্ত হয়।  রাজননীতিতে দলীয় শিক্ষার বড় অভাব! বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,  “নীতিবিহীন নেতা নিয়ে অগ্রসর হলে সাময়িকভাবে কিছু ফল পাওয়া যায়। কিন্তু সংগ্রামের সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায়না।” সব রাজনৈতিক দল গুলো ত্যাগী কিংবা মেধাবী নেতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন না। প্রাধান্য  দিচ্ছেন টাকার কুমিরকে। এখানেই শেষ না, আছে আত্বীয়করন, মামাকরন।
   
ত্যাগীদের মূল্যায়ন তখনও হবে যখন প্রতিটি দলে ত্যাগীদের ত্যাগের কথা লিপিবদ্ধ থাকবে। নতুন প্রজন্ম পড়বে আর নতুন করে ত্যাগী নেতা তৈরী হবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image