জাকারিয়া মিঞা, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ কর্মসূচির কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) ও কাবিখার (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) অর্থ ও খাদ্যশস্য নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও শ্রমিকদের। প্রকল্পে মোটা অংকের টাকা ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ থাকলেও তা গোপন করে কর্মসৃজনের শ্রমিকদের দিয়ে নামমাত্র করানো হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ। কোথাও আবার নামমাত্র যেনতেনভাবে করা হচ্ছে প্রকল্পের কাজ।
ফলে কাঙ্খিত অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ। আর এবিষয়ে জানতে চাওয়া মাত্রই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা রেগে যান। ফলে পাওয়া যায় নি কোন সদুত্তর। উল্টো তারা দেন দেখে নেয়ার হুমকি। প্রকল্প এলাকার হতদরিদ্র মানুষরা বলছেন তাদের বঞ্চিত করা করা হয়েছে। আর সচেতন মহল মনে করছেন সুকৌশলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বরাদ্দ আত্মসাতের ছক কষেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, উপজেলা পরিষদ ওয়ারী ১ম পর্যায়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৪৯ লক্ষ ৯ হাজার ১৩০ টাকা, ৬৫ দশমিক ৪৫৬ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য (গম ও চাল) বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা উপজেলার ৬ ইউনিয়নের গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয়বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন এবং সে সঙ্গে এলাকার উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ব্যয় করার কথা।
প্রকল্পের তালিকার সূত্র ধরে উপজেলার বড়ভিটা, ভাঙ্গামোড়, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকার ঘুরে কোথাও কর্মসূচির তথ্য সম্পর্কিত সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে এলাকার বাসিন্দারা কেউই জানেনই না।
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের ৩ টি কাঁচা রাস্তার পুনঃ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য কাবিটা কর্সূচির আওতায় মোট ৬ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের আরও দুটি রাস্তা পুনঃনির্মাণের জন্য কাবিখা কর্মসূচির আওতায় ৮ দশমিক ৪০০ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বরাদ্দ রয়েছে ।
সরেজমিনে গিয়ে এসব রাস্তার সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সকলেই কর্মসৃজনের সুবিধাভোগী। রাবাইতারি গ্রামের নজির হোসেন বলেন, হামরা ৪০ দিনের মাটি কাটা দলে ৪৭ জন আছি। গত ২১ দিন থাকি এই রাস্তাত মাটি কাটার কামাই করছি। মুসা মেম্বার হামাক গুলাক কাজোত ধরে দিছে। শাহালম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, এই রাস্তার কাজের জন্য আলাদা বরাদ্দ আছে তা হামরা জানি না। যদি বরাদ্দ থাকে তাহলে সে টাকা মেম্বারের পেটে যাবে। ওই এলাকার বাসিন্দা শাহাদত আলী বলেন, এই রাস্তায় চল্লিশ দিনের মাটি কাটা শ্রমিক ছাড়া আমি আর কাউকে মাটি কাটতে দেখিনি। কাবিটা কর্মসূচির মাধ্যমে এই রাস্তা সংস্কারের কাজ হবে এটা আমরা কেউ জানিনা।
এব্যাপারে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু মুসার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় মাটি কাটার কথা মাটি কেটেছি। শ্রমিকদের টাকা দিয়েছি কিনা বা দেওয়া হবে কিনা সেটা আমার ব্যাপার। আপনার যা মনে চায় লিখতে পারেন। একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রতনের কাছে বরাদ্দকৃত অর্থ কিভাবে শ্রমিকদের মাঝে ব্যয় করেছেন তা জানতে চাওয়া মাত্রই তিনি রেগে যান। ফলে তার কাছ থেকে মেলেনি কোন সদুত্তর। সংবাদ প্রকাশ করা হলে দেখে নেয়া হবে বলে দিয়েছেন হুশিয়ারি।
কর্মসৃজনের শ্রমিক দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের একই চিত্র দেখা গেছে বড়ভিটা ইউনিয়নের ৩ ও ৯নং ওয়ার্ডের কাবিটা কর্মসূচির প্রকল্প এলাকা ঘুরে।এই দুই প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানিয়েছেন তারা কর্মসৃজনের সুবিধাভোগী।
উপজেলায় চলমান কাবিটা-কাবিখা কর্মসূচীর বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী পোদ্দার রতন। তিনি বলেন, হতদরিদ্র মানুষের সহায়তা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত কর্মসূচীর বরাদ্দ নয়ছয় করার লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানতে পেরেছি বরাদ্দের কোন টাকাই খরচ করা হয় নি। কর্মসৃজনের শ্রমিকদের দিয়ে নামমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বরাদ্দ আত্মসাতের পাঁয়তারা চলছে।
চলমান কাবিটা ও কাবিখা কর্মসূচীর বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, উপজেলায় কাবিটা ও কাবিখা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও খাদ্যশস্যের ৫০ শতাংশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যানদের দেয়া হয়েছে। অনিয়ম হয়ে থাকলে বরাদ্দ ফেরত নেয়া হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: