• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

শ্রমিক-কম্বাইন হারভেস্ট সংকটে হাওরের কৃষক 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ০১ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫৬ পিএম
শ্রমিক-কম্বাইন হারভেস্ট সংকটে
হাওরের কৃষক 

বিজয় কর রতন, মিঠামইন প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ : হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, ইটনা উপজেলায় হাওর অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে বোরো ধান কাটার ধুম পড়লেও বর্তমানে ধান কাটার জন্য শ্রমিক এবং সরকারি ভাবে ৭০ ভাগ ভুর্তকি দেওয়া ধান কাটার মেশিন কৃষিযন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টর) সংকটের কারনে বিপাকে পড়েছে হাওর পাড়ের হাজার হাজার কৃষক ফলে পাকাঁ ধান কাটতে কৃষকদের ঘুনতে দ্বিগুণ কোথাও কোথাও তারও বেশি টাকা দিয়েও মিলছে না শ্রমিক বা সরকারি ভাবে সর্বোচ্চ ভুর্তকি দেওয়া ধান কাটার কৃষি যন্ত্র পাকাঁ ধান কাটার সময় মত না পাওয়ার কারনে তাদের কষ্টার্জিত ফসল বোরো পাকাঁ ধান কাটতে পারবে কিনা এই শঙ্কা কৃষকদের মাঝে।

সরকারি ভাবে হাওর এই ৩ উপজেলায় ৭০ ভাগ ভুর্তকি দেওয়ার ২৫২ টি কৃষি যন্ত্র কম্বাইহারভেস্টর হাওর উপজেলা গুলোতে বরাদ্ধে দিলেও বরাদ্ধেও চেয়ে অনেক কম সংখ্যাক কম্বাইন হারভেস্টর দেখা যাওয়ার কারনে কৃষকদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রশ্ন বলে একাধিক কৃষককেরা জানান। বর্তমানে শ্রমিক ও কৃষি যন্ত্রেও সংকটের কারণে জমিনে থাকা পাঁকা ধান কাটতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তা মধ্যদিয়ে দিন পার করছে কিশোরগঞ্জের হাওর পাড়ের কৃষকেরা। এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার আনন্দের পরিবর্তে পাকাঁ ধান কেটে বাড়িতে আনতে পারবে কি না সেই সংশয়ে রয়েছে বলেও জানান তারা। একমাত্র ফসল বোরো উৎপাদনের উপর এই হাওর অঞ্চলের ৮৫ ভাগ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। উৎপাদিত ফসলের ২০ শতাংশে স্থানীয় খাদ্য পূরন করে ৮০ ভাগ জাতীয় খাদ্য সংযোগ হয়।

সূত্র জানায়, কিশোরগরেঞ্জর হাওর অধ্যুাষিত অষ্টগ্রাম,ইটনা,মিঠামইন উপজেলাসহ হাওর অঞ্চলের কৃষকেরা বর্ষার ৬ মাস পানিতে একাকার হয়ে যাওয়ায় বেকার দিন কাটায়। ফলে একমাত্র ফসল বোরো উৎপাদান ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের বাচার কোন পথ নেই। কৃষকদের সংখ্যাগরিষ্ট মাঝারী ছোট কৃষক, বর্গা ও প্রান্তিক চাষী, বর্গাচাষী ও কৃষি মজুরের সংখ্যা সর্বাদিক। তবুও কার্তিকের বোরো রোপন থেকে শুরু করে চৈত্রের শেষের দিকে ধান কাটার মৌসুম পর্যন্ত প্রাপ্ত মজুরী ও ধানে চলে তাদের সারা বছরের খাবার আর জীবন যাত্রার ব্যয়। গত কয়েক বছর দফায় দফায় বছর এই হাওর উপজেলা গুলোতে অকাল বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ফসল হানির ঘটনা ঘটেছে। উৎপাদন খরচ আর জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে কৃষকেরা সরকারি, এনজিও ও মহাজনী ঋণ গ্রহণ করে। ফাল্গুন চৈত্র মাসে হাওরের প্রতিটি হাওর সবুজ আর সোনালীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।

বাম্পার ফলনের আশায় বুক ভরে স্বপ্ন নিয়ে কৃষকেরা মাঠে নামে চৈত্রের শেষের দিকে বিভিন্ন প্রজাতি পাকাঁ কেটে অনেকেই ঘরে আনতে শুরু করে এবং সারা হাওরে ফসলে পরিপূর্ণ থাকে। বতমানে হাওর উপজেলা গুলোতে বোরো ধান পেকেঁ জমিনে কাটার অপেক্ষায় ঠিক এই মুহুর্তে শ্রমিক এবং সরকারি ভাবে ভর্তুকি পাওয়া কৃষি যন্ত্র (কম্বভাইন হারভেস্টর) সংকট দেখা দিয়েছে।

কৃষকেরা জানান, গত কয়েক বছর আগেও ধান কাটার জন্য রংপুর, ঠাকুরগা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ থেকে হাজার হাজার শ্রমিক এসে ধান কেটে দিয়ে যেত বতর্মানে সরকারি ভাবে ভর্তুকি দেওয়ার পর থেকে বাহির থেকে খুব বেশি শ্রমিক আসে না। অষ্ট গ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের কমলা রানী জানান, তিনি এক একর জমি করেছেন। তার স্বামী অসুস্থ। আর ছেলে সৌরভ ও মেয়ে অনিমাকে নিয়ে নিজের জমি নিজেই কাটছেন। ইটনা উপজেলার বয়রা গ্রামের ব্রজেন্দ্র দাস জানান, তিনি ২একর রোর জমি করেছেন শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান কাটতে পারছেনা। ১ হাজার টাকা জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরী দিতে হয়, তিনি তার মেয়ের জামাইকে নিয়ে জমি কাটা শুরু করেছেন। অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নেরর কৃষক এস এম শাহীন জানান, ২ একর বোরো জমিন করেছিলেন বর্তমা জমিগুলো পেকেঁ গেলেও শ্রমিক বা সরকারি ভাবে ভুর্তকি পাওয়া কম্বাইন হারভেস্ট না পাওয়ার কারনে ধান গুলো কাটতে পারছে না, প্রতি একর জমিন কাটতে থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিয়েও পাচ্ছেন না।

অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাক আহাম্মেদ কমল এ প্রতিনিধিকে জানান, তার জমিন রয়েছে ৭০-৭৫ একর জমিনের মধ্যে এবছর নিজেই করেছেন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ একর বোরো জমিন কিন্তু‘ সরকারি ভাবে দেওয়া কৃষি যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টর) পাকাঁ ধান কাটার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না আর যদিও পাওয়ার যায় তাহলে প্রতি একর ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিয়ে দিয়ে পাওয়া যায় না এবং এই উপজেলার জন্য সরকারি ভুতকিতে যেসকল কম্বাইন হারভেস্টর পেয়েছে সেই হারভেস্টর গুলো খুবই কম সংখ্যক দেখা যাচ্ছে আর তার মধ্যে বাহিরের জেলা থেকে আসা বেশ কিছু কম্বাইন হারবেস্টর রয়েছে যদি কোনো রকম প্রাকৃতিক দুযোগ দেখা দেয় তাহলে কৃষকদের কি হবে কে জানে বলেও জানান তিনি ।

এতন মিয়া নামের আরও এক কৃষক জানান,তার পাকাঁ বোরো জমিন পড়ে আছে শ্রমিক পাচ্ছে না আর যদি শ্রমিক পাওয়ার যায তাহলে জন প্রতি ৮শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকা দিতে হবে এছাড়াও সরকারি ভুতকি দেওয়া কম্বাইন্ড হারভেস্টর যদিও পাওয়া যায় তাহলে প্রতি একর জমিন কাটতে সাড়ে ৮ হাজার টাকা থেকে ৯ হাজার টাকা দিয়েও কযেক দিন ঘুরতে হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অষ্টগ্রাম উপজেলা কৃষকদের ধান কাটার জন্য সরকারি ভাবে ৭০ ভাগ ভুর্তকি দেওয়া কম্ভাইন হারভেস্টর মোট ৬৭ টি সর্বশেষ এই উপজেলার জন্য ১০টি কম্ভাইন হারভেস্টর বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত ১০ টির মধ্যে এখন পযন্ত ৬টি বিতরণ করলেও রহস্যজনক কারনে বাকি ৪ টি কম্ভাইন হারভেস্টর বিতরণ করতে পারেনি অষ্টগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিস।

মিঠামইন উপজেরা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই মিঠামইন উপজেলায় এই পর্যন্ত ৯৬টি কম্বাইন হারভেস্টর দেওয়া হয়েছে এবং সবশেষ ১০টি কম্ভাইন হারভেস্টর বিতরণ করা শেষ। মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাফিউল ইসলাম জানান,এই উপজেলার জন্য এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে ৭০ ভাগ ভুতকিতে ৯৬টি কম্ভাইন হারভেস্টর দেওয়া হয়েছে । প্রতি একর ১০ হাজার করে নিচ্ছেন কম্বাইন হারভেস্টরের মালিকেরা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান,গত বছরের তুলনা এই বছর তেলের দাম বৃদ্ধিও কারনে হতে পারে। এদিকে ইটনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল সাহা জানান এই পর্যন্ত ইটনা উপজেলায় সব মোট ৮৯টি কম্বাইন হারভেস্ট কৃষকদের কে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এবং সব কম্বাইন হারবেস্টর মালিকদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে যেন ৭ হাজার টাকায় করে একর প্রতি কাটা হয় বলা হয়েছে । শনি ও রবিবার  হাওর ঘুরে দেখা গেছে, হাওরের এখনো অনেক বোরো ফসলী জমিনে পাকাঁ ধান রয়ে গেছে এই সব ধান শ্রমিক এবং সরকারিভাবে ভুর্তকি দেওয়া কম্বাইন হারভেস্ট এর অভাবে কাটতে পারছেন না বলে হাওরের একাধিক কৃষকের ভাষ্য। এই সময় হাওরে থাকা ১৫-২০টি কম্ভাইন হারভেস্ট চোখে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিঠামইন সদরের একজন কৃষক জানান তার বোরো জমিনের পাকাঁ ধান নিয়ে গত ৪-৫ দিন যাবত বিভিন্ন কম্বাইন হারভেস্টরের মালিকের কাছে ঘুরছেন,১২ হাজার টাকার প্রতি একরের দিতে রাজি হয়েও কম্ভাইন হারভেস্টর পাচ্ছেন না তিনি বলে অল্প জমিন করেন কোনো রকমের সংসার চালান কিন্ত পাকাঁ ধান এই বছর ঘরে আনতে পারবেন কিনা সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

এই বিষয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা দাযিত্বে থাকা কৃষি কমকতা অভিজিৎ সরকার জানান, এই পর্যন্ত এই উপজেলায় ৬৭ টি কম্বাইন হারভেস্টর কৃষকদের সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কম্বাইন হারভেস্টর গুলো হাওরে ধান কাটছেন বলে তিনি দাবি করেছেন । সর্বশেষ ১০টি কম্বাইন হারভেস্ট বিতরণ করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান ৬টি কম্বাইন হারভেস্টর বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি ।
 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image