
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে কোনো চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। তবে দুই পক্ষই কিছু সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিতে একমত হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে একটি বেইল আউট চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়, খেলাপি হওয়া এড়াতে পারে পাকিস্তান। এমন অবস্থায় আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছে যাচ্ছে কী পাকিস্তান।
আইএমএফ এর সঙ্গে এই আলোচনা সফল হওয়া না হওয়ার ওপর পাকিস্তানের দেউলিয়াত্ব নির্ভর করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দ্য আল আরাবিয়া পোস্ট জানিয়েছে, বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে- পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট কয়েক দশকের ত্রুটিপূর্ণ নীতির চূড়ান্ত পরিণতি।
অর্থনীতির পতন ঠেকাতে আইএমএফের কাছে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেলআউট প্যাকেজ চাইছে পাকিস্তান। সম্প্রতি সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি বেশ কিছু সংস্কার এবং শর্ত মেনে চলার কথা বলেছে। নাথান পোর্টারের নেতৃত্বে আইএমএফ মিশন সহায়তা প্যাকেজের নবম পর্যালোচনার জন্য অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার প্রতিনিধিত্বকারী পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে ৩১ জানুয়ারি আলোচনা শুরু করে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, 'আইএমএফের প্রতিনিধি দল ইসলামাবাদে রয়েছে এবং তারা অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এবং তার দলকে কঠিন সময় দিচ্ছে।'
শাহবাজ শরীফ স্বীকার করেছেন যে, আইএমএফের শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া দেশের কোনো বিকল্প নেই। আপনারা সবাই জানেন যে আমাদের সম্পদের অভাব রয়েছে। দেশ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। অপরদিকে পাকিস্তানি রুপি মার্কিন ডলারের বিপরীতে রেকর্ড মূল্য হারিয়েছে। বর্তমানে এক ডলারের বিনিময়ে মিলছে ২৭৬ পাকিস্তানি রুপি। ৪ ফেব্রুয়ারি আইএমএফ দল এবং সরকারের মধ্যে প্রযুক্তিগত আলোচনার প্রথম দফা শেষ হওয়ার পর পাক প্রধানমন্ত্রী শর্তের বিষয়ে বলেন যে, এগুলো আমাদের কল্পনাতীত।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তান যে পাথুরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তা তাদের নিজস্ব সৃষ্টি। ঋণ-নির্ভর বৃদ্ধির কৌশলের ফাঁদে পড়েছে দেশটি। ঋণ নির্ভরতা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকেও নষ্ট করেছে। এছাড়া দেশটির অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতি তহবিল সরবরাহকারীদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বহিরাগত অর্থায়নের উপর এই ধরনের নির্ভরতা পাক অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর এবং এর স্বদেশী প্রবৃদ্ধির গতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। পাকিস্তানে বর্তমানে ৩.১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। এ দিয়ে মাত্র ১৮ দিনের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এমন অবস্থায় অত্যন্ত কঠিন হলেও আইএমএফের শর্ত মানতে হবে পাকিস্তানকে।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, এই ঋণ চুক্তি নিয়ে নবম দফার আলোচনার জন্য গত ৩১ জানুয়ারি ১০ দিনের সফরে পাকিস্তানে এসেছিল আইএমএফের প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার ছিল তাদের সফরের শেষ দিন।
পাকিস্তানের অর্থ সচিব হামেদ ইয়াকুব শেখ বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঋণের পূর্বশর্ত পূরণে কী কী করণীয় সে বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। তবে স্টাফ লেভেল এগ্রিমেন্টের বিষয়ে পরে ঘোষণা দেওয়া হবে।’ গত শুক্রবার সকালে আইএমএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ঋণের পূর্বশর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আগামী দিনগুলোতে পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরও আলোচনা হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইএমএফের অর্থ পেতে যত দেরি হবে, দেশটির খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা ততই বেড়ে যাবে। বিশেষ করে একটি নির্বাচন যখন কাছে ঘনিয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত সেটি না হলে শ্রীলঙ্কার পর পাকিস্তানকেও হয়তো দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করতে হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এম আর
আপনার মতামত লিখুন: