![website logo](https://www.dhakanews24.com/webimages/logo.png)
নিউজ ডেস্ক: হাতে লাঠি, মুখ কাপড়ে ঢাকা। সবাই চোরাকারবারি। কোরবানি সামনে রেখে তাদের যেন আগেই লেগেছে ‘ঈদ’। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের কালাচাইন্দায় রাতের আলো-আঁধারিতে সীমান্ত গলে গরুর পাল ঢুকছে বাংলাদেশে। রাত যত গভীর হয়, ততই নামে গরুর ঢল। সীমান্ত ডিঙিয়ে কিছুদূর এগোতেই প্রস্তুত ট্রাক। সেই ট্রাকে দলে দলে সওয়ার হচ্ছে গরু। এরপর চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। এভাবেই কাঁটাতার, নদী আর পাহাড়– সবকিছু একাকার করে ভিনদেশি গরু মিশে যাচ্ছে কোরবানির হাটে। স্থানীয় রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকায় চোরাচালান চক্রটি বেশ শক্তপোক্ত, অপ্রতিরোধ্য। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এ-প্রান্তে গরু আনতে ঘাটে ঘাটে দিতে হচ্ছে বখরা। আবার সীমান্তরক্ষীর চোখ এড়াতেও চলছে নানা কিসিমের কেরামতি।
শুধু বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি নয়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে চোরাই পথে গরু আনছে বড় একটি চক্র। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। সমকালের সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা সীমান্ত এলাকা ঘুরে এমনই তথ্য পেয়েছেন।
এদিকে, কোরবানির সময় ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসবে না– সরকারের এমন ঘোষণায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন খামারিরা। এখন সীমান্ত দিয়ে দেদার গরু ঢোকায় লোকসানের শঙ্কায় নিরাশ তারা। যদিও প্রশাসনের দাবি, ভারত ও মিয়ানমার থেকে গবাদি পশুর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।
মাসখানেক ধরে চলা গরু পাচারের কারণে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন খামারের পশুর শরীরে নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ খামারিদের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে বৈধ পথে পশু আনতে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অথচ চোরাই পথে আসা গরুর শরীরে রোগ আছে কিনা, তা জানার সুযোগ নেই। এতে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। দেশজুড়ে অজানা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। চোরাই পথে আসা পশু মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবু চোরাই পথ খোলা: ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়। চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে বাড়ে গবাদি পশু পালন। দেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ লাখ খামার আছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭; যা চাহিদার চেয়ে প্রায় ২৩ লাখ বেশি। এ সংখ্যা গত বছরের চেয়েও ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। কয়েক বছর ধরে কোরবানি ঈদের আগে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় আসেনি পশু। তবে এবার সীমান্ত অনেকটাই ঢিলেঢালা।
কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া; বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি; সিলেট, কুমিল্লা, লালমনিরহাটসহ ছয় জেলার ৩৮ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি পশু ঢুকেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
একদিকে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য, তীব্র তাপদাহে বাড়তি যত্নের জন্য বেশি উৎপাদন খরচ এবং ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে এমনিতেই খামারির ত্রাহি অবস্থা। তার পরও চোরাই পথে অবাধে গরু ঢোকায় পথে বসার উপক্রম খামারিদের। তাদের অভিযোগ, ২০১৪ সালের নিষেধাজ্ঞার পর এবারের মতো এত ‘খোলামেলা’ সীমান্ত কখনও দেখা যায়নি।
যেভাবে সীমান্ত পার: অনুসন্ধানে জানা গেছে, গরু সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুই ধরনের লোককে কাজে নামায় চোরাকারবারি চক্র। একটি গ্রুপ গরুর সঙ্গেই থাকে; আরেকটি গ্রুপ রাস্তায় পুলিশ, বিএসএফ, বিজিবি থাকে কিনা, তা জেনে কারবারিকে খবর দেয়। তারা গরুপ্রতি দুই হাজার টাকা করে পায়। সীমান্ত পার হওয়ার পর দেশের কোনো হাট থেকে টাকার বিনিময়ে গরু কেনার নকল কাগজপত্র তৈরি করে নেওয়া হয়। এতে পথে আর পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয় না।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এইচ
আপনার মতামত লিখুন: