• ঢাকা
  • রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কী পরিণতি হতে পারে


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৩২ পিএম
সংঘাতের পরিমাণ অনেক বেড়েছে
যুদ্ধে কী পরিণতি হতে পারে

নিউজ ডেস্ক:  গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির। শনিবার পর্যন্ত ৬৭৫ দিনের মতো চলছে দেশ দুইটির সংঘাত। এতে দুই পক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখন অবধি যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো পূর্ব ইউক্রনে দেশ দুইটির মধ্যে সংঘাতের পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে এই যুদ্ধ কোন দিকে গড়াতে পারে না নিয়ে এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদন করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন যে এ বছরের জুনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যে অভিযান চালিয়েছিল, তা আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। ইউক্রেনের ভূমির প্রায় ১৮% এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।

আগামী ১২ মাসে এই যুদ্ধকে ঘিরে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে তিনজন সামরিক বিশ্লেষকের সাথে আলোচনা করে প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে।

বারবারা জ্যানচেত্তা কিংস কলেজ অব লন্ডনের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক জানিয়েছেন, যুদ্ধ চলবে, তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। তার মতে,

ইউক্রেনে যুদ্ধ শিগগিরই থেমে যাবে, এমন সম্ভাবনা এখন আগের চেয়ে দুর্বল। গত বছরের এই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে, ভ্লাদিমির পুতিন এখন আগের চেয়েও শক্তিশালী। শুধু সামরিক শক্তির বিচারেই নয়, রাজনৈতিকভাবেও গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। ইউক্রেনের শীতকালীন অভিযান সম্প্রতি থেমে গেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আবার রাশিয়ার দিক থেকেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

যুদ্ধের ফল আসলে নির্ভর করছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শত মাইল দূরের ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটনে হওয়া সিদ্ধান্তের ওপর। পশ্চিমা শক্তিগুলো ২০২২ সালে ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থনের যে প্রদর্শন করেছিল, তা ২০২৩ এও জারি ছিল। কিন্তু তাদের সেই সমর্থন প্রকাশ সম্প্রতি যেন অনেকটাই ম্রিয়মাণ হতে শুরু করেছে।

ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার প্যাকেজ ওয়াশিংটনের অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাষায়, ‘সস্তা রাজনীতি’র শিকার হয়ে এই প্যাকেজ ওয়াশিংটনের অনুমোদন পাচ্ছে না।

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক সহায়তা ইউক্রেন পাবে কি না, তা নির্ভর করছে হাঙ্গেরির সমর্থন দেয়া-না দেয়ার ওপর।

পশ্চিমা শক্তিগুলোর নিজেদের ভেতরে এই দোটানা পুতিনকে আরো আত্মবিশ্বাসী করেছে। তার সাম্প্রতিক বক্তব্য ও জনসম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ধরন বিশ্লেষণ করলে এমনটাই মনে হয় যে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য চলবে।

ইউক্রেন ও মলদোভাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ দেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এই সিদ্ধান্ত কেবল প্রতীকী নয়।

এর অর্থ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিয়েভকে সমর্থন দেয় অব্যাহত রাখবে। কারণ, চলমান যুদ্ধে রাশিয়া এককভাবে জয় লাভ করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এমনিতেও থাকতে পারবে না ইউক্রেন।

ওয়াশিংটনের নীতিগত সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য কম।

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের নীতিগত অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে, কারণ ট্রাম্প ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সোচ্চার হয়েছেন।

কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে ট্রাম্প ন্যাটোতে থাকার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে গেলেও ২০১৬ সালে তিনি নিজে যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তখন এই পদক্ষেপ নেননি। আর ন্যাটোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ বছরের এই সম্পর্ক তিনি একার সিদ্ধান্তে ছিন্ন করতেও পারবেন না।

কাজেই, পশ্চিমা দেশগুলোর এই দোটানার কারণে ইউক্রেনে যুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত হবে, এমনটা বলাই যায়। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ভেতরে যদি সামরিক অভ্যুত্থান না হয়, অথবা পুতিন স্বাস্থ্য জনিত কারণে মারা না যান – তাহলে এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার একমাত্র উপায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাসচিব মাইকেল ক্লার্কের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে অন্য জায়গায়। তিনি জানান, ইউরোপে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রত্যাবর্তন হয়েছে ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর।

এই যুদ্ধ ২০২৩ সালে গড়ানোর পর এটাও নিশ্চিত হয়েছে যে শিল্প বিপ্লব চলাকালীন সময়কার যুদ্ধে যেমন পরিস্থিতি তৈরি হত, এই যুদ্ধকে ঘিরে সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

শিল্প বিপ্লবের সময় কোনো একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রভাবিত হত যুদ্ধকে ঘিরে। অর্থাৎ, যুদ্ধের সময় যে ধরনের পণ্য প্রয়োজন হয়, অর্থনীতিতে সেই ধরনের পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যায়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে, অর্থাৎ ২০২১ সাল থেকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেট তিন গুণ বেড়েছে। আগামী বছর রাশিয়ার সরকারি ব্যয়ের ৩০% খরচ হবে যুদ্ধের পেছনে।

এর অর্থ, এই যুদ্ধ ইউরোপের জন্য ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপ মহাদেশ সবচেয়ে দীর্ঘ ও সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি পূর্ণ যুদ্ধে পরিণত হতে পারে এই যুদ্ধ।

ইউক্রেনে সম্মুখ সমরের যে একেবারেই কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না, তা বলা ভুল হবে। সেখানে দুই পক্ষই একে অপরকে ঠেকিয়ে রাখার মত মাত্রায় যুদ্ধ করছে।
রুশ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে আগ্রাসন চালিয়ে ডনবাস অঞ্চলের পুরোটা দখল নেয়ার চেষ্টা করতে পারে।

ইউক্রেনও পশ্চিম কৃষ্ণ সাগরের এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ বসফরাস প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ পুনর্দখলের সুফল ভোগ করতে চাইবে। সেই হিসেবে মনে হচ্ছে, ২০২৪ সালে কিয়েভ ও মস্কো দুই পক্ষই সংঘবদ্ধ হওয়ার একটা সুযোগ পাবে।

২০২৫ সালের বসন্তকালের আগে পুরো দমে আক্রমণ চালানোর মত যথেষ্ট অস্ত্র বা প্রশিক্ষিত লোকবলের জোগাড় করতে পারবে না রাশিয়া। অন্যদিকে, আগামী বছরের পুরোটা সময় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনের প্রয়োজন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে অর্থ ও সেনা সহায়তা। পাশাপাশি তাদের নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও কাজ করতে হবে তাদের।

তাই শিল্প বিপ্লবের সময়কার যুদ্ধের মত, এই যুদ্ধও বিভিন্ন সমাজব্যবস্থার মধ্যকার প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত হবে। যুদ্ধক্ষেত্রে যেসব ঘটনা ঘটবে, তা আন্ত:সামাজিক প্রতিযোগিতার উপসর্গ হিসেবেই পরিলক্ষিত হবে।

২০২৪ সালে এই যুদ্ধের সামরিক পরিণতি আভদিভকা, তোকমাকের মত সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে নির্ধারিত না হয়ে নির্ধারিত হবে মস্কো, কিয়েভ, ওয়াশিংটন, ব্রাসেলস, বেইজিং, তেহরান ও পিয়ংইয়ংয়ে।

ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি ইউরোপের সাবেক কমান্ডিং জেনারেল বেন হজেস বিবিসিকে বলেন, এই যুদ্ধ বদলে দিতে পারে মার্কিন যুদ্ধবিমান।

সক্ষমতার দিক থেকে ইউক্রেনকে সম্পূর্ণরূপে দখল করতে রাশিয়া অপারগ। ইউক্রেনের যতটুকু অঞ্চল তারা দখল করে রেখেছে, ততটুকুই তারা দখল করে রাখবে।

এই সময়টা কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের প্রতিরক্ষা বলয় আরো শক্তিশালী করবে এবং কতদিনে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে, তার জন্য অপেক্ষা করবে।

কিন্তু ইউক্রেন থামবে না। তাদের লড়াই টিকে থাকার এবং তারা জানে যে তারা থেমে গেলে রাশিয়া কী করবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেহেতু ইউক্রেনে সহায়তা ও ত্রাণ কমে যাচ্ছে, ইউরোপের অনেক দেশ ইউক্রেনে ত্রাণ দেয়া বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে।

তবে আমার অনুমান, আগামী বছরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ ও সহায়তার প্যাকেজ সরবরাহ করবে। এই প্যাকেজটি ডিসেম্বরে ছাড় হওয়ার কথা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে তা আটকে দেয়া হয়।

টানা যুদ্ধের ফলে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া ইউনিটগুলোকে পুনর্গঠন ও সংগঠিত করা। নতুন করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। লোকবল বাড়ানোর লক্ষ্যে ইউক্রেনের ভেতরে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ওপর জোর দেয়া। অস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎপাদন বাড়ানো।
জ্যামার, ইন্টারসেপটার, লোকেটরের মত রুশ ইলেকট্রনিক যুদ্ধাস্ত্রের মোকাবেলার লক্ষ্যে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো।

আগামী গ্রীষ্মের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেন। এই যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে যেমন শক্তিশালী করবে, তেমনি রুশ বিমানের বিপক্ষে তাদের আক্রমণকেও সুসংহত করবে।

সেভাস্তোপোলে রুশ নৌবাহিনী, ইউক্রেনের ভেতরে থাকা কয়েকটি রুশ বিমানঘাঁটি আর দিযানকয়ে রুশ বাহিনীর রসদ ঘাঁটির ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে ইউক্রেন প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে।

এরই মধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের সামর্থ্যও প্রমাণ করেছে। যুক্তরাজ্যের দেয়া তিনটি স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ মিসাইলের সাহায্যে তারা কৃষ্ণ সাগরে থাকা রুশ নৌবাহিনী কমান্ডারকে তার নৌ বহরের এক তৃতীয়াংশ সেভাসতোপোল থেকে সরাতে বাধ্য করেছ।

কিন্তু রুশ সেনাদের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। রাশিয়ার রসদ সরবরাহ ব্যবস্থা এরই মধ্যে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়েছে এবং তা ইউক্রেনের বাহিনীর ক্রমাগত চাপের মুখে রয়েছে।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image