স্টাফ রিপোর্টার,জহিরুল ইসলাম সানি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চূড়ান্ত ফলাফলে বাদ পড়া প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীরা।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত পর্বে বাদ পড়া প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীরা। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলমান নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত পর্বে বাদ পড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাজ্জাদ হোসাইন সাজু বলেন, সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? এবং প্রতিবন্ধী মানুষরা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পড়ে কিনা? আমরা জানতে চাই রাষ্ট্রের কাছে। বিশেষ ব্যবস্থা বা কোটা পদ্ধতি পাওয়ার যোগ্যতা আসলে কাদের? যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রকৃত কোটার দাবিদার হয়ে থাকে তাহলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক পদে ২০২২ সালে নিয়োগে অনন্য কোটা থাকা সত্ত্বেও, প্রতিবন্ধী কোটা কেন সংস্করণ করা হলো না? এবং পৃথিবীর কোন সভ্য রাষ্ট্রে প্রতিবন্ধী কোটা সংস্করণ করা হয় না?
চাকরি বঞ্চিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী পারুল বেগম বলেন, আমি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী হয়েও, এই এই নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফলে বঞ্চিত হয়েছি। যেখানে নারী কোটা ৬০% ছিল।
তিনি বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রকৃতি সার্টিফিকেট পুরানো, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রধান এমন কি প্রধানমন্ত্রী এপিএস (২) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তাই, আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, নির্বাহী আদেশাবলী চলমান নিয়োগে অনুগ্রহপূর্বক আমাদের নিয়োগ প্রদান করলে, চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
চাকুরি বঞ্চিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পার্থ প্রতিম মিস্ত্রি বলেন, আমরা শিক্ষক পদে সুনামের সাথে কাজ করতে পারি ইতোমধ্যেই আমাদের ভাই-বোনেরা তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে সুতরাং রাষ্ট্র এবং সরকার যদি আমাদের মতো অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয় তাহলে আমরা আর কিবা করতে পারি? আমাদের দ্বারা তো রাস্তায় কঠোর আন্দোলন করে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা সম্ভব নয় কারণ আমরা দুর্বল জনগোষ্ঠী আইন আর কর্তৃপক্ষের সহমর্মিতা আমাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল।
চাকরি প্রত্যাশী শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ রেজওয়ান হোসেন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদে বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করেছে, এসডিজি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন (২০১৩) এই সরকার প্রণয়ন করেছে তবে কেন আমাদের আজ এই অবস্থা?
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সকল চাকরিতে কোটা বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসা গ্রাজুয়েট পরিষদের আহ্বায়ক আলী হোসাইন বলেন, আমরা দীর্ঘ ৪ বছর যাবৎ রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের নিকট চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিদারুণ মানবেতর কষ্টের কথা উল্লেখ করে ২০১৮ সালে সংসদে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বিলুপ্ত করার পর প্রতিবন্ধী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য যে অন্য ব্যবস্থার ঘোষণা আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক এবং শেষ আশ্রয়স্থল মননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করা, সেই সাথে বেকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু তা সত্যেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ঐতিহাসিক বৃহৎ নিয়োগে স্বল্প সংখ্যক প্রতিবন্ধী মানুষ চাকুরী না পাওয়ায় প্রতিবন্ধী সমাজ অত্যন্ত ব্যথিত কারণ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ এর দফা (৪) এ বলা হয়েছে - নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্ৰসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হতে এ অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।
অপরদিকে অনুচ্ছেদ ২৯ এর দফা (৩) (ক) এ বলা হয়েছে - এ অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই নাগরিকদের যেকোনো অনগ্ৰসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান হতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবেন।
উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে জন্য ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে উত্তীর্ণ করে গত ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগে নারী কোটা, পোষ্য কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হয়েছে। অথচ প্রতিবন্ধী কোটায় কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ মাহাবুব শেখ, মোঃ আবু জাহিদ, ফাহিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, পার্থ প্রতিম মিস্তিরি, শাহাজান শেখ, মোঃ মনোয়ার হোসেন, মোঃ আজিজুল ইসলাম, বৃষ্টি রানী রায়, মোঃ সাজ্জাত হোসেন সাজু, মোঃ নুর আলম, ফারুক হোসেন, বাদশা মিয়া, মোঃ মাইনুল ইসলাম মানিক, মোঃ রেজোয়ান হোসেন, মোঃ রশিদুল হক, আনোয়ার হোসেন, আব্দুর রহমান, ফরহাদ আলী প্রমূখ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এমআর
আপনার মতামত লিখুন: