• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

আকাশে ডানা মেলতে পারবে কি লক্ষণের সোনালী স্বপ্নের পাখি 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ১০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৫৬ পিএম
আকাশে ডানা মেলতে পারবে কি সোনালী স্বপ্নের পাখি 
লক্ষণ ও তার নানী

অনুপ পাল, প্রতিনিধি ত্রিপুরা : কে না চায় ভালো থাকতে, কে না চায় জীবনে এগিয়ে যেতে? কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবন কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিজের প্রতিকূলে থাকলেও কখন কখন জীবন যুদ্ধটা বড়ই কঠিন হয়ে পড়ে অনেকের ক্ষেত্রে। 

ঠিক এমনই একটি জীবন যুদ্ধের কথাই আজ আপনাদের সামনে আমরা তুলে ধরবো।

পড়াশোনার মাধ্যমে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করা লক্ষণ চায় জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যেতে। আজকের এই প্রতিবেদনটি ঝা-চকচকে শহরের কোলাহল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দুরের। চন্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দেওরাছড়া ভিলেজের অন্তর্গত ৫২/৪৪ নং বুথ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা লক্ষণ উরাং যার জন্ম ১লা জানুয়ারী ২০১০। পিতা রাজেশ উরাং এবং মা বাঁধিনি উরাং এর ঘর আলো করে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। 

আদর করে মা, বাবা, পিসি ও নানী সনচরী উরাং নাম রাখেন লক্ষণ। দারিদ্রতা তাদের নিত্যসঙ্গী হলেও লক্ষণকে নিয়েই দেখতেন আগামী দিনের লক্ষণ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু লক্ষণের বয়স যখন প্রায় ৭ কিংবা ৮ মাস হবে হঠাৎই লক্ষণ কে ছেড়ে চিরতরে তারার দেশে চলে যান ওর মা।

 লক্ষণের মায়ের চলে যাওয়া কে কেন্দ্র করে দিবা রাত্র শুধু উনার চিন্তায় একসময় প্রচন্ড অসুস্থতা ও স্ত্রীর ভাবনায় আবেগপ্রবণ হয়ে নিজেকে শেষ করে দেন লক্ষণের পিতা। আর তার পর থেকেই নানীর কোলেপিঠে করেই ধীরে ধীরে বেড়ে উটা লক্ষণের। বৃদ্ধা নানী লক্ষণ কে কোলেপিঠে করে মানুষ করতে করতে কখন যে সে পুরো সংসারের দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে সেটা লক্ষণের ঠিক মনে নেই। বর্তমানে লক্ষণের বয়স প্রায় ১৪ বৎসর। চন্ডিপুর বিধানসভার অন্তর্গত কলাছড়া  স্কুলে সে বর্তমানে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। প্রায়সই সে স্কুলে আসে না খেয়ে, লক্ষ্য একটাই পড়তে চায়। কিন্তু নানী ও নিজের পেটের ভাত যোগার করতে সপ্তাতে দু থেকে তিন দিন যখন যে কাজ পায় তা করে অর্থ উপার্জন করে এবং সেই অর্থেই চলে দুজনের সংসার। কিন্তু শত দারিদ্রতার মধ্যেও মুখের হাসিটা সবসময় অটুট লক্ষণের। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অন্যান্যদের পাশাপাশি একটু বাড়তি নজর রাখেন লক্ষণের পড়াশোনার প্রতি। গৃহ শিক্ষক রেখে পড়ার আর্থিক ক্ষমতা না থাকার পরও স্কুলে যা পড়ানো হয় সেটাকে হাতিয়ার করেই এগিয়ে যাচ্ছে লক্ষণ।

ফলাফলটা শতাংশের হিসেবে বলতে গেলে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান যে লক্ষণ প্রতিবারই মোটামুটি সব বিষয়ে ৬০ শতাংশের বেশী নম্বর পায় তবে কিছুটা সাহায্য সহযোগীতা পেলে হয়তো আরো এগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন কোনো সামাজিক সংস্থা যদি লক্ষণকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে লক্ষণের লক্ষ্য পূরণ অবশ্যই সম্ভব।  একসময় লক্ষণের রোজকার লড়াইয়ের খবর জানতে পেরে আমাদের প্রতিনিধি ওর বাড়িতে গেলে দেখতে পান যে সরকারী সুযোগ সুবিধার নাম করে যারা লাউড স্পিকারে ভাষণ দেন সেই সুযোগ সুবিধার এক অংশও পৌঁছায়নি লক্ষণের কুঁড়েঘরে! নেই সরকারী বিদ্যুৎ পরিষেবা, নেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর, নেই একটা রেশন কার্ড, নেই বৃদ্ধ ভাতাও। রেশন কার্ড না থাকায় স্বল্প উপার্জনের অর্থ থেক ৩২টাকা দরে চাল কিনতে হচ্ছে লক্ষণ ও তার নানীর। লক্ষণের সাথে কথা বলতে বলতে সে জানায় সে পড়াশোনা করতে চায় এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।

কথায় বলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। কিন্তু লক্ষণের ইচ্ছা পাহাড় প্রমান প্রতিকূলতা কাটিয়ে কী পারবে অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছতে! মনে হয় না। লক্ষণের স্বপ্ন পত্রে পরাগে বিকশিত হবার জন্য প্রয়োজন সরকারের প্রসন্ন দৃষ্টি। ন্যুনতম সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেবার আন্তরিক প্রয়াস আর তাতেই আকাশে ডানা মেলতে পারবে লক্ষণের সোনালী স্বপ্নের পাখি। এমনি কত শত লক্ষণ,কত শত রহিম বুকের অন্ধকারে লুকিয়ে রেখেছে স্বপ্নের পারাবত।

আমরা খোঁজও রাখিনা। একটু আন্তরিক সহায়তা, একটু সহমর্মিতা পেলে লক্ষ্মণদের হাত ধরেই গড়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতের ভারতবর্ষ। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিলো সমাজের আয়না হয়ে আমাদের কাজ করা আর সেই কাজটাই আমরা লক্ষণ ও তার পরিবারের জন্য রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা ও সমাজের বিত্তবান মানুষের সামনে তুলে ধরলাম। 

একটু আন্তরিকতার হাত বাড়ালেই হয়তো হাসি ফোটাবে লক্ষণদের ঘরে। 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image