• ঢাকা
  • রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

তিস্তা এখন পানি শূন্য


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:১০ পিএম
এখন পানি শুন্য
তিস্তা

জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি: শুকনো মৌসুম আসতে এখনো অনেক বাকি কিন্তু তার আগেই খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন পানি শূন্য হয়ে কঙ্কাল রূপ ধারণ করে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। যে তিস্তা নদীকে নিয়ে গাথা হয়েছিলে নানা ধরনের ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গান, বাড়িতে নতুন জামাই এলে বা নতুন মেহমান যে নদীর বইরাতি/বৈরালী মাছ ছিলো খাবারের উপকরণ আজ সেই নদীর বুক চিরে চলছে চাষাবাদ। আর নদী নির্ভর শত শত জেলে পরিবার নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা আজ বেকার।

বর্তমানে ভারতের গজল ডোবায় তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় এবং পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়ায় ধীরে ধীরে তিস্তা নদী পানি শূন্য হয়ে কঙ্কালসারে পরিণত হয়েছে। এখন তিস্তায় শুধুই ধু-ধু বালুচর। তিস্তা তীরবর্তী মানুষদের নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

বর্ষার সময় ভারত অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ায় নদীর দু’পারের মানুষের জমি, ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সর্বস্বান্ত করে দেয়। খরা মৌসুমে পানির অভাবে ইরি বোরোসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করতে পারে না নদী তীরের মানুষ। এক সময় সরাসরি নৌকা মাল বোঝাই করে পাল তুলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেত, বর্তমানে সেগুলো এখন কল্পকাহিনীর মতো। নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক মানুষ। এ ছাড়াও সরকারের নদী শাসনের পরিকল্পিত পরিকল্পনার অভাবে নদীর মাঝখান উঁচু হয়ে পানি দু’পারে প্লাবিত হয়। নদীর ড্রেজিংয়ের কাজ আদৌ হয়েছে কিনা তা এই এলাকার মানুষ জানে না বলে প্রতিবেদককে জানান।

নদী ড্রেজিং করে নদীর পানির গতিপথ সচল করলে একদিকে যেমন নদী ভাঙন কমে যাবে অন্যদিকে কৃষক নদীর পানি দিয়ে সেচ কাজ চালাতে পারবে, এর ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে বলে জানান কৃষক লুৎফর রহমান, আছেম আলী ও রমানাথ রায়।

তিস্তা নদীর এই করুণ দশার জন্য দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকা পানি চুক্তিকে দায়ী করেছেন, তিস্তাপাড়ের জেলে-কৃষক পরিবারগুলো। সমগ্র তিস্তা সহ দেশের উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ নদনদী শাখা-প্রশাখা খাল, বিলগুলো এবং জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় অযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে তিস্তা ও আশপাশের এলাকা।

নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলা তিস্তা নির্ভর।

তিস্তা পাড়ের সাবেক কলেজ শিক্ষক আবদুল রহমান বলেন, তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত একতরফাভাবে নদীর পানি নিয়ন্ত্রণে রাখায় বর্ষা শেষেই তিস্তা তার আশপাশের এলাকায় মরুভূমিতে পরিণত হয়। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম জেলার অন্তত ১৪৫ কিলোমিটার মরুভূমিতে পরিণত হয়ে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের আশপাশের এলাকায় ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়।

তিস্তা পাড়ের মাঝি মাজেদুল মিয়া বলেন, তিস্তা ব্যারেজের মূল গেটগুলোতে সামান্য পানি প্রবাহ রয়েছে, বাকি পুরো তিস্তা নদী বালুচরে পরিণত হয়েছে। এ কারণে আমাদের বেকার জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

নীলফামারীর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আবু সাইদ বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের এ জেলার দুই পাশে দুটি বড় নদী তিস্তা এবং ধরলা প্রবাহিত। উন্মুক্ত জলাশয়, তিস্তা নদী এবং ধরলা নদীতে মৎস্য আইন বাস্তবায়ন করে মাছের উৎপাদন করা হয়। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে থাকি। কিন্তু জেলেরা আগের মতো মাছ ধরতে পাচ্ছে না। যদি তিস্তায় খনন এবং মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে জেলেদের যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image