নিউজ ডেস্ক : জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংস্কারে যেতে চায় না সরকার । নির্বাচনের পর ব্যাংকের সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং জ্বালানি তেলের দর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের মতো সংস্কারে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ( আইএমএফ) প্রতিনিধি দলকে দেওয়া হয়েছে ।
আইএমএফকে অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের জন্য কিছু সংস্কার কার্যক্রম শুরুর সময়সীমা পিছিয়ে দিতে । কয়েক দিনে আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফের পরামর্শ মেনে এরই মধ্যে কিছু সংস্কার করা হয়েছে । বিশেষ করে, সুদহার আগের মতো আর ৯ শতাংশে নির্ধারিত নেই । ডলারের বিনিময় হারেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কমানো হয়েছে । মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ঋণ দেওয়া হচ্ছে না । আইএমএফের শর্ত পরিপালন না হওয়ার বড় কারণ হলো, সংকট থাকায় রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বাজারে বিক্রি করতে হয়েছে ।
তবে বর্তমান বাস্তবতায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার বিক্রি বন্ধ করলে বিদ্যুৎ- জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে । আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে এসব বিষয় বোঝানোর পর তারাও অনেক ক্ষেত্রে আশ্বস্ত হয়েছে । ফলে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে না পারায় দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় আটকাবে না বলে আশা করা যায় ।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আগামী মাসে ছাড় হওয়ার কথা । ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তার অন্যতম হলো – বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ গত জুন নাগাদ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থাকতে হবে । কিন্তু সেই শর্ত পালন করা সম্ভব হয়নি । রিজার্ভ কমে এখন ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে রয়েছে । বিনিময় হার ও সুদহার বাজারভিত্তিক করার শর্ত থাকলেও সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ রয়েছে ।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩টি ব্যাংকের এমডির সঙ্গে বৈঠক করে । দুপুরে ২৭টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । দুটি বৈঠকেই ব্যাংকগুলো কোনোভাবে যেন এবিবি ও বাফেদা নির্ধারিত ১১০ টাকার বেশি দরে ডলার না কেনে, সে বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয় । এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয় ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত দর কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে । এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অগ্রাধিকার । নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রভাবে কলমানি, আমানত, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার যে বাড়ছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে । কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এভাবে সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে বাজারে তারল্য কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ তাদের লক্ষ্য ।
এ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় । তবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে খেলাপি ঋণ আদায় অনেক সময়সাপেক্ষ ।
আগামী ডিসেম্বর থেকে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানির দর নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধিত চালু করার কথা । এ জন্য একটি ফর্মুলা প্রস্তুত করে জ্বালানি বিভাগে জমা দিয়েছে বিপিসি । সেখানে তিন মাস বা এক মাস পরপর দর সমন্বয়ের কথা বলা হয় । এটি কার্যকর করলে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তে পারে ।
সামনে নির্বাচনের আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেবে না সরকার । এ পদ্ধতি কার্যকরে আরও তিন মাস সময় চাওয়া হয়েছে । আইএমএফ প্রতিনিধি দলও তাতে সম্মতি দিয়েছে বলে জানা গেছে ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: