নিউজ ডেস্ক : পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জইশ-আল-আদল বিশ্ব সন্ত্রাসী সংগঠন জুন্দাল্লাহর একটি অংশ ছিল। জইশ-আল-আদল মানে 'বিচারের সেনাবাহিনী'। এটি একটি সুন্নি সালাফি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন। জঙ্গি সংগঠন জইশ-আল-আদলের মূল ঘাঁটি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে।
পাকিস্তান বরাবরই সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ দেশ। পাকিস্তানও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে। পাকিস্তান তার মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে অর্থায়ন করে (পাকিস্তান সন্ত্রাসে অর্থায়ন)। কিন্তু এখন পাকিস্তানের লালিত সন্ত্রাসীরা এর জন্য সমস্যা হয়ে উঠছে।
আমেরিকা ও ভারতের পর এবার পাকিস্তানের মাটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইরান। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে সুন্নি সন্ত্রাসী সংগঠন 'জইশ-আল-আদল'-এর ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় ইরান।
পাকিস্তানের মতে, এই হামলায় দুই শিশু প্রাণ হারিয়েছে। পাকিস্তান বলেছে, এই পদক্ষেপের জন্য ইরানকে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ইরানের হামলার কারণ কী?
ইরান একটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। পাকিস্তানের প্রায় ৯৫ পারসেন্ট মানুষ সুন্নি। তাই পাকিস্তানের সুন্নি সংগঠনগুলো ইরানের বিরোধিতা করে আসছে। এর বাইরে বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-আল-আদল ইরানের সীমান্তে ঢুকে বেশ কয়েকবার সেখানে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইরান অনেকবার পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে।
ইতিমধ্যেই সীমান্ত প্রদেশে জইশ-আল-আদলের সঙ্গে ইরানের সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে হামলা ইরানের নতুন আগ্রাসী নীতি। বলা হচ্ছে, এটি গত মাসে সিস্তান বেলুচিস্তানে ইরানের একটি পুলিশ স্টেশনে জইশের হামলার প্রতিশোধ। সিস্তান প্রদেশে পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের ৯৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ইরানের সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস এখানে।
এই হামলার কাহিনী কি?
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে ইরানের ভূখণ্ডে প্রবেশকারী সুন্নি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮ ইরানি সেনা নিহত হয়েছে। এই সন্ত্রাসীরাও জইশ-আল-আদলের ছিল। ইরান এ ব্যাপারে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে।ইরাকের পর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী সংগঠনের লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।
ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। শিয়া ও সুন্নির মধ্যেও বিরোধ দেখা দিয়েছে। তবে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তবে এই হামলা শুধু পাকিস্তানের ওপর নয়। এর আগেও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইরান প্রকাশ্যে দাবি করে, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান ঘাঁটি, তেল আবিব এবং হাইফায় ইসরায়েলি ঘাঁটি তার ক্ষেপণাস্ত্রের সীমার মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান এই ছোট ছোট হামলার মাধ্যমে আমেরিকা ও ইসরাইলকে ফাঁদে ফেলে রাখতে চায়। ইরান তার শক্তি দেখাতে চায়।
পারমাণবিক অস্ত্রধারী ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছাড়াও হুথি বিদ্রোহীদের ওপর আমেরিকা ও তার মিত্রদের হামলা, সিরিয়া, ইরাক এবং এখন পাকিস্তানে ইরানের লক্ষ্যবস্তু হামলা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি
আপনার মতামত লিখুন: