ফারজানা মৃদুলা
পড়ন্ত ফাগুনের বিকেলে মৃদু আলো আঁধারের লুকোচুরিতে, এক কাপ কফি হাতে বসে জীবনের ডায়েরীটা খুলে বসে হারিয়ে যাওয়া অতীতের কোনো বিমর্ষ স্মৃতির পাতায় ডুব দিয়ে মনে পড়লো জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে হারিয়ে করতে হয়েছে জীবনযুদ্ধে লড়াই। এমন ঘটনা যেন নিঃশব্দ আর্তনাদগুলো হাহাকার করছিলো।
সেই ডায়রীর কথাগুলোর নায়িকা ছালমা ভূইয়া ২ পুত্রের জননী । স্বামী সদূূর সৌদীআরবে ব্যবসার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। বলা যায় পরিবারের একমাত্র উপার্জন এর মানুষ ছিলেন স্বামী। কিন্তু ছালমা ভূইয়া ছিলেন তার জীবনসঙ্গীর বুদ্ধি ও পরামর্শে ম্যানেজার।
খুব সুন্দর সহজ ভাবে জীবনের দিন গুলো কাটছিলো। হঠাৎ সব কালবৈশাখী ঝড়ের মত তছনছ হয়ে পড়লো, জীবনসঙ্গী মৃত্যুতে!
এত ভালোবাসার মানুষটিকে মৃত্যু কালে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি কারন সৌদি আরবেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন এবং সেই পবিত্র মাটিতেই দাফন করা হয়।
সেই দিনের কথাগুলো বলতে গিয়ে ছালমা যেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না আজও।
কিন্তু সেই সময়টা তে ২ ছেলেকে নিয়ে কি করবে কি করেই চলবে সংসার সেই চিন্তায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। কিন্তু ছালমা হাল না ছেড়ে স্বামীর সেই ব্যবসা কে পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নামলো জীবনযুদ্ধের মাঠে।
দেখতে পেলো সেই সবুজ মাঠটি কেবল কাঁটায় ভরা! কি করে পাড়ি দিবে সেই পথ?
পাছে লোকের কথা যেন বুকে বিঁধে বুলেটের মত,
তখন অবচেতন মনে ভাবে রবিঠাকুরের সেই গানের
কলি গুলো
“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে”....
সেই একলা পথে চলতে গিয়ে দুই সন্তান ছিলো সহযোদ্ধা শুরু করলো নতুন করে
তার জীবন জীবিকার প্রয়োজনে মুস্তাহালিক অনলাইন শপ। এই মুস্তাহালিকের মাধ্যমে অগোছালো সংসার যেনো গুছানো শুরু হলো গুটিগুটি পায়ে।
সেই শপে আজ শাখা প্রশাখা হয়েছে পরিচিত হচ্ছে বহু জায়গাতে।
যদিও নিজের প্রিয় রং কালো কিন্তু মনের দিকে একজন সাদা ও সহজ মনের মানুষ ছালমা।
দুই পুত্রবধূ তার সুখ-দুখের সাথী হয়ে আছে।
সাথে আছে নাতী নাতনীরা ভরপুর সংসারে ভালোবাসার মানুষটিকে খুব মনে পড়ে।
সেই হার না মানা ছালমা ২০১৯ থেকে দীর্ঘ টা সময় পাড় করেছে
বহু ঘাতপ্রতিঘাত পেড়িয়ে আজ ছালমা অনেকটা স্বনির্ভর।
থাকুক না হয় কাঁটায় ভরা মাঠ, গ্রীষ্ম প্রেমী এই গল্পের নায়িকাটি হিমচাঁপা ফুলের মতই নিজের কর্মের মাধ্যমে সুবাসিত করে চলতে চায় চারিপাশ।
জীবনে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে বহু মুখোশধারী মানুষ দেখেছে।
বিশ্বাস করে ঠকেছেনও অনেক প্রিয়মানুষের কাছেও। তবে শিখেছে অনেক কিছু, শিখেছে ভেঙ্গে পড়া থেকেও উঠে দাড়ানো সম্ভব যদি সততা, সাহস আর আল্লাহর উপর বিশ্বাস থাকে মনে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: