• ঢাকা
  • রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ইউসিসি বিজেপির ভাঁওতা, আসল লক্ষ্য হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা: অমর্ত্য সেন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৭ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:১১ পিএম
সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়
অমর্ত্য সেন

নিউজ ডেস্ক:  ‘হিন্দুরাষ্ট্রের পথ প্রশস্ত করতেই ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) আনা হচ্ছে’ বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ইউসিসি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বিজেপির আকস্মিক তোড়জোড়ে ক্ষুব্ধ নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এটা একটা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।’ তাঁর অভিযোগ, এসবই বিজেপির ভাঁওতাবাজি। তাঁদের আসল লক্ষ্য হল হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

সম্প্রতি বিদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন অমর্ত্য সেন। তারপরই আবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা এক দেশ এক আইন নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিলেন এই নোবেলজয়ী। তিনি বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমে দেখছিলাম অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে নাকি বিন্দুমাত্র দেরি করা উচিত হবে না। এই ধরনের বোকা বোকা কথাবার্তা আসছে কোথা থেকে? আমরা হাজার হাজার বছর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ছাড়া কাটিয়েছি। আগামী দিনেও এটা ছাড়া চলতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আসলে একটা জটিল বিষয়কে খুব সহজ বলে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ তাঁর মতে, ‘হিন্দুরাষ্ট্রের সঙ্গে এর যোগ নিশ্চয়ই আছে। ইউসিসির মধ্যে ধাপ্পা আছে।’

অমর্ত্য সেন বলেন, ‘এখানে হিন্দু ধর্মটাকে অপব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হিন্দুরাষ্ট্র আর যাই হোক, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা হতে পারে না। এমনকি হিন্দুরাষ্ট্রের পথে এগোলে আমরা যা যা অর্জন করছি, সেগুলোর মধ্যেও অনেক কিছু মুছে যেতে পারে।’

সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার নিয়ে করা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অধ্যাপক সেন বলেন, ‘এটা অত্যন্ত সহজ কথা। ওবামা বলেছেন বলে সহজ হতে পারে। কিন্তু ভারতবর্ষকে ভাগ করার নানা রকম উপায় আছে। তার মধ্যে একটা হিন্দু-মুসলমান পার্থক্য করা। দেশে শ্রেণি, ধর্ম, লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছে। যা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। আমি খুশি যে, ওবামা এব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই এত সহজে  ভারতে পারছেন না।’

এর আগেও একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তাঁর মতে, এক রাষ্ট্র,‌ এক আইন বললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে এক রাষ্ট্র হওয়া সম্ভব হয়। যাতে আমাদের মধ্যে বিভেদ কমানো যেতে পারে।’

প্রসঙ্গত, আগামী বাদল অধিবেশনেই ইউসিসি সংক্রান্ত বিল পেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। চলতি মাসেই লোকসভায় বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেখানেই ইউসিসি বিল পেশ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে ভারতের সব ধর্মের নাগরিকদের ক্ষেত্রে সমান বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, দত্তক ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত আইন প্রযোজ্য হবে। এরই মধ্যে ইউসিসি নিয়ে বিরোধিতার কথা জানিয়েছেন মুসলিম ল বোর্ড। কিন্তু বিজেপি এই আইন পাশে বদ্ধপরিকর।

বিজেপি তথা জনসংঘ সেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বলে আসছে, এক দেশ, দুই বিধান-দুই নিশান হতে পারে না। বস্তুত বিগত বেশ কয়েকটি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে বদ্ধপরিকর গেরুয়া শিবির। দল হিসাবে বিজেপি তো বটেই, উপরাষ্ট্রপতির মতো সাংবিধানিক পদে থাকা জগদীপ ধনকড়ও বলে দিচ্ছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করতে আর এক মুহূর্তও বিলম্ব হওয়া উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করেছেন।

এদিকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিচীর ১৩ ডেসিমেল জমি নিয়ে অমর্ত্য সেনের ‘বিবাদ’ এখনও মেটেনি। সেই প্রসঙ্গেও এদিন আবার মুখ খুলেছেন তিনি। বিদেশ থেকে ফেরার পর বুধবার বোলপুরের শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ বাড়িতে গিয়ে অধ্যাপক সেনের সঙ্গে দেখা করেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীরা। জমি বিতর্কে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অমর্ত্য সেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন ‘‌শান্তিনিকেতনের পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এখন যে পথে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এগোতে চেষ্টা করছেন সেটা সহজ নয়। কেন কর্তৃপক্ষকে সবাই দোষারোপ করছেন?‌ আসলে বিশ্বভারতীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আর কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হচ্ছেন। এখন এখানে আমরা সবাই রাজা, রাজার রাজত্বে। রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ করতেই বিশ্বভারতী নানা কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। সবার আত্মচেতনা জাগ্রত করতে হবে। আমাদের আক্ষেপ করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।’‌

অমর্ত্য সেনের এমন মন্তব্যের পাল্টা অপমানজনক মন্তব্য বিশ্বভারতীর তরফে আসতে পারে বলে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা আশঙ্কা প্রকাশ করলে অধ্যাপক সেন বলেন ‘আমাকে অপমান করা এত সহজ নয়। অপমান যতই থাকুক, সেটা গ্রাহ্য করা আমার উপরেই নির্ভর করে। শান্তিনিকেতনের সাত বছর বয়স থেকেই পড়াশোনা করে মানুষ হয়েছি। কে কী বললেন সেটা আমার কাছে খুব বড় কিছুই নয়।’

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image