• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ভোজ্যতেলে বিকল্প হতে পারে সাউ পেরিলা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৫০ পিএম
ভোজ্যতেলের বিকল্প হতে পারে
সাউ পেরিলা

নিউজ ডেস্ক : সাউ পেরিলা নামে একটি দানাদার শস্যের চাষ  শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিকল্প ভোজ্য তেল হিসেবে এটির ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন কৃষিবিদরা। এটির চাষ ব্যাপকতা পেলে ভোজ্যতেল আমদানির ওপর চাপ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সাউ পেরিলা থেকে ব্যাপক মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছেন মৌ চাষিরা।

দেশে ভোজ্য তেল হিসেবে পরিচিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা বিকল্প ভোজ্য তেল খোঁজা শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু আশার আলো দেখাচ্ছে ‘সাউ পেরিলা’ নামে একটি দানাদার ফসল।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই সাউ পেরিলার চাষ শুরু করা হয়েছে। এটির চাষ ব্যাপকতা পেলে ভোজ্যতেল আমদানির ওপর চাপ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সাউ পেরিলা থেকে ব্যাপক মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছেন মৌ চাষিরা।

দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে ১২ একর জমিতে এই সাউ পেরিলার-১ চাষ করছেন কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দ রোকনুজ্জামান। তিনি পাশের উপজেলা কাহারোলের মুকুন্দপুর সুন্দইল গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে ২০২১ সালে তিনি পঞ্চগড় জেলায় সাউ পেরিলার আবাদ করে ঘানিতে পরীক্ষামূলক কিছু তেল উৎপাদন করেছিলেন।

দেশের কয়েকটি জেলায় এই সাউ পেরিলার আবাদ করা হচ্ছে। তবে চলতি বছর বোচাগঞ্জের চাষটিকে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হিসেবে দাবি করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দ রোকনুজ্জামান।

রোববার বিকেলে সৈয়দ রোকনুজ্জামানের ক্ষেত পরিদর্শন করেন বাংলাদেশের প্রথম সাউ পেলিার গবেষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। তার সঙ্গে দিনাজপুর অঞ্চলের তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মো. সারওয়ার আলম ও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি উপস্থিত ছিলেন।

সাউ পেরিলাকে ইতিমধ্যে নিবন্ধন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। পেরিলা লেমিয়াসি নামক পরিবারের একটি ফসল। এটি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের ১৪টি জেলায় পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা হয়। এরপর ২০২১ সালে ৫০টি জেলায় প্রথমভাবে বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়। চলতি বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ চলছে।

উচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন সাউ পেরিলার তেল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি লিটার ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। সাউ পেরিলা সরিষা ভাঙার মেশিনেই ভাঙানো সম্ভব। পেরিলা তেলের শতকরা ৬৫ ভাগই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হার্টের জন্য খুব উপকারি। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি, বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

কৃষক সৈয়দ রোকনুজ্জামান বলেন, তিনি পেরিলা গবেষক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদারের কাছ ২০২১ সালে পেরিলা বীজ সংগ্রহ করেন। তার পরামর্শে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় অল্প জমি লিজ নিয়ে পেরিলা চাষ শুরু করেন। তিনি সেই জায়গায় সফল হওয়ার পর চলতি বছর বোঁচাগঞ্জ উপজেলার বড় সুলতানপুরে ১২ একর জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পেরিলা চাষ শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, ১২ একর জমিতে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত ব্যয় হবে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। উৎপাদিত সফলের বীজ বিক্রি করে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মতো তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি আবাদ করতে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস প্রয়োজন হয়।

রোকনুজ্জামান বলেন, পেরিলা বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে চাষ হচ্ছে। এটি নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম থেকে গবেষণা করছেন আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। দেশে এটার বিপুল সম্ভবনা রয়েছে। আমি ২০২১ সালে প্রথমে পঞ্চগড়ে কাজ শুরু করি। এরপর বোঁচাগঞ্জে কাজ শুরু করেছি। আর কিছু দিনের মধ্যে এই ক্ষেতে থেকে ফসল সংগ্রহ শুরু করা হবে। সাউ পেরিলা ভোজ্য তেল হিসেবে খুব উচ্চমানের। এর চাহিদা আছে আন্তর্জাতিক বাজারে। ভবিষ্যতে আরও বড় প্রকল্প করার চিন্তা রয়েছে আমার। এর পাশাপাশি চলতি বছর উৎপাদিত সাউ পেরিলা দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি করব।

মৌ চাষি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বোঁচাগঞ্জের সাউ পেরিলা ক্ষেতে আমি প্রাথমিকভাবে তিনটি মৌবাক্স স্থাপন করেছিলাম। তিনটি বাক্সে মোট ২০ কেজির মতো মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। মধু পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আগামীতে আমি আরও বড় করে মধু সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বাংলাদেশের জনগণ সাউ পেরিলা থেকে উৎপাদিত মধু খেতে পারবে। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের বিষয়।

বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আরিফ আফজাল বলেন, উন্নত দেশগুলোতে সাউ পেরিলার চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এটির আবাদ করা হচ্ছে। বোচাগঞ্জে ১২ একর জমিতে চাষ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাউ পেরিলা চাষীকে সব সময় পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image