• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বাংলাদেশ নামের একটি নতুন দেশের জন্মদিন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৫০ পিএম
বাঙালিদের বিরুদ্ধে প্রথম সেনা কর্মসূচি
একটি নতুন দেশের জন্মদিন

 আবদুল মান্নান 

প্রাদেশিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এই অঞ্চলটিকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ  ঘোষণা করেন এবং শেখকে একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এবার তার অপরাধকে আর ছাড় দেওয়া হবে না।”  ইয়াহিয়া ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালের সন্ধ্যায় ইসলামাবাদ থেকে একটি রেডিও এবং টিভি সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশবাসীকে তার গলায় স্কচ হুইস্কির কয়েক পেগ দিয়ে ভরা কণ্ঠে দেশবাসীকে এসব কথা জানিয়েছিলেন। (দ্য টাইমস, ২৭ মার্চ, ১৯৭১)।
 
“শেখ মুজিবুর রহমান পূর্বে ২৫ দিনের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য পাকিস্তানি সেনারা যখন তাদের শক্তি প্রয়োগ করেছিল, তখন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত বিদেশি সাংবাদিক হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বন্দুকের মুখে বন্দি ছিল। বাঙালিদের বিরুদ্ধে প্রথম সেনা কর্মসূচি শেষ হলে তাদের গ্রেফতার করে করাচি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।” (২৭ মার্চ, ১৯৭১, ডেইলি টেলিগ্রাফ, লন্ডন, সাইমন ড্রিং)। 

প্রকৃতপক্ষে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে তার সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য কয়েক ডজন বিদেশি সাংবাদিক অবস্থান করছিলেন। এই ঘূর্ণিঝড়টি হানা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে সারা পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। এই নির্বাচনটি ছিল সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রথম নির্বাচন, যা পাকিস্তানের দ্বিতীয় সেনা শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালে ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘূর্ণিঝড়ে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তার কোনও সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না, তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্রের মতে সেই সংখ্যা পাঁচ লাখের কম নয়। বঙ্গবন্ধুসহ কারও কারও মতে এই সংখ্যা দশ লাখের কম নয়। সাধারণত এমন একটি দুর্যোগ হলে দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নানা অজুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। সেবার বঙ্গবন্ধুর কঠোর নির্দেশে তা হয়নি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করতে কাজে লাগিয়ে জনগণের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর নির্দেশ মতোই তখন দেশের বেসামরিক প্রশাসন পরিচালিত হওয়া শুরু করে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় নানা মহল থেকে দাবি ওঠে অনুষ্ঠিতব্য ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন নির্বাচন নির্দিষ্ট দিনেই অনুষ্ঠিত হতে হবে, তবে ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকায় নির্বাচন পরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তা-ই হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল পরের মাসের ১৭ তারিখ। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সারা পাকিস্তানের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে গণপরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। 

এটি প্রত্যাশিত ছিল শেখ মুজিবই হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার-প্রধান এবং পাকিস্তানের জন্য আওয়ামী লীগের ছয় দফাভিত্তিক একটি সংবিধান রচিত হবে, যা তিনি ইতোপূর্বে তাঁর নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা করেছিলেন। তবে ইতোমধ্যে ইয়াহিয়া ঘোষণা করেছিলেন, প্রণীত সংবিধান যদি তার পছন্দ না হয় তাহলে তিনি গণপরিষদ ভেঙে দেবেন। তার এই ঘোষণার উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, নির্বাচনের পর কী হবে তা তিনিই বলবেন। এর আগে দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ইয়াহিয়া খানের এই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে তিনি যেন এই নির্বাচন বর্জন করেন, যা বঙ্গবন্ধু অগ্রাহ্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে এই প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতাদের শেখার আছে অনেক কিছু। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোনও বৈধ বিকল্প নেই। 

বঙ্গবন্ধু তো তখন শুধু একটি দলের প্রধান নেতাই নন, তিনি ততদিনে হয়ে উঠেছিলেন একজন রাষ্ট্রনায়ক। তিনিই তখন বাংলাদেশ। 

নির্বাচনের পর সংসদ অধিবেশন না ডেকে শুরু হলো চিরপরিচিত পাকিস্তানের সামরিক বেসামরিক আমলা গোষ্ঠীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। বাঙালি পাকিস্তান শাসন করছে তা ছিল তাদের কাছে একটি অচিন্তনীয় ব্যাপার। বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ঠিক তখন আড়ালে চলছিল বাঙালির স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করার ষড়যন্ত্র। ইয়াহিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল নির্বাচনে দ্বিতীয় বিজয়ী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলি ভুট্টো। ষড়যন্ত্রের প্রথম সফল বাস্তবায়ন ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য সংসদ অধিবেশনের হঠাৎ মুলতবি ঘোষণা। তারপর নানা টালবাহানা, আলোচনা-আলোচনা খেলার ফাঁকে বাঙালি নিধনের প্রস্তুতি আর সব শেষে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার সূত্রপাত। সেই রাতে গ্রেফতার করা হলো বাঙালির একমাত্র মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। 

১৯৭১ সালের ২৫-২৬ মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে মুজিব কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন কিনা তা নিয়ে কেউ কেউ এখনও প্রশ্ন তুলেন। কিন্তু অনেক আন্তর্জাতিক ও পাকিস্তানি মিডিয়া ও দলিলও সাক্ষ্য দিয়ে বলে “মুজিবকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসা থেকে গ্রেফতার করার আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।” 

তিনটি মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক, এবিসি, সিবিএস এবং এনবিসি, ২৬ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে তাদের সন্ধ্যার সংবাদে বিশ্বের কাছে সংবাদ প্রচার করে যে মুজিব তার গ্রেফতারের ঠিক আগে ২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড লোশাক তার ‘পাকিস্তান ক্রাইসিস’ বইতে লিখেছেন, “২৫ মার্চ অন্ধকার নেমে আসার পরপরই শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বর ক্ষীণভাবে ভেসে আসে সরকারি পাকিস্তানি রেডিওর কাছের একটি তরঙ্গে। পূর্ব-রেকর্ড করা বার্তায় যা ছিল এবং প্রচারিত হচ্ছিল, তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলে ঘোষণা করেছিলেন।” 

ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাবলিক রিলেশন অফিসার মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়েও লোশাককে উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন তিনি নিজে এই ঘোষণা শুনেছেন। মুজিবের ঘোষণার কথা বিশ্ব যখন জানালো, বাংলাদেশে বাঙালিদের পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ বাস্তবায়ন তখন মাঝপথে। তখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ বাঙালিকে হত্যা করার কাজ শেষ হয়ে গেছে। ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। 

গ্রেফতার হওয়ার আগে মুজিব ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চেও মধ্যরাতে ইপিআর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছেও একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যাতে বলা হয়েছিল, “এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত  দখলদার সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করুন। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিককে বাংলাদেশের মাটি থেকে উচ্ছেদ করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।” 

২৬ মার্চ, ১৯৭১ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা হোয়াইট হাউজের পর্যবেক্ষণ কক্ষে  ‘পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাঠায়, যা মেজর জন বি হান্ট দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং ক্যাপ্টেন জন জে পাভেল জুনিয়র দ্বারা পরে প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে লেখা ছিল “শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের দুই অংশের পূর্ব অংশকে সার্বভৌম স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।”

পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র ডন, ভারতের অমৃত বাজার পত্রিকা এবং সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমস সবাই রিপোর্ট করে এই বলে যে ‘পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে’ এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের ‘বিদ্রোহ’ দমন করার আগে মুজিব একতরফাভাবে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, যা তিনি তা বাংলাদেশ নামে নামকরণ করেছিলেন”।

পিন্ডির শাসকদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা এবং একটি জাতিরাষ্ট্র গড়ার ইচ্ছা থাকলে এই অঞ্চলের ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতো। পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল বাঙালি মুসলমানদের ত্যাগ, প্রচেষ্টা ও সমর্থনে এই আশায় যে তারা তাদের ভাগ্যের মালিক হবে এবং হিন্দু জমিদার ও ভূস্বামীদের দ্বারা তাদের শোষণের অবসান ঘটবে। সদ্য সৃষ্ট পাকিস্তানে যেহেতু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে, নতুন দেশের ভাগ্যের ক্ষেত্রে তাদেরই বড় ধরনের ভূমিকা থাকবে। কিন্তু খুব দ্রুত তারা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের প্রত্যাশা ভুল ছিল। রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে তাদের অবস্থান আরও কমে গিয়েছিল এবং পশ্চিমের শাসকদের দ্বারা, বিশেষ করে পাঞ্জাবের সামরিক বেসামরিক আমলাদের দ্বারা তারা যে বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছিল, তা গোপন থাকেনি। শুরু হয়েছিল ধর্মের নামে এক নতুন আধিপত্যবাদ। 

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়, পাকিস্তান থেকে একমাত্র রফতানিযোগ্য পণ্য ছিল পাট আর চা। পূর্বাঞ্চলে উৎপাদিত এই পণ্য রফতানি করে পাকিস্তান তার রফতানি আয়ের ৮০ ভাগ অর্জন করতো আর তার ৭০ ভাগ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে। পাকিস্তানের প্রথম রাজধানী করাচিকে প্রথমে রাওয়ালপিন্ডিতে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে ইসলামাবাদ নামে একটি নতুন রাজধানী তৈরি করা হয়। এসব কর্মের প্রায় সব অর্থের জোগান দেয় পূর্ব বাংলা। শুরু থেকেই পাকিস্তান একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বাঙালি নেতারা নতুন সৃষ্ট পাকিস্তানকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা সবসময় ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি সংবিধান অপরিহার্য। সেটি তৈরি করার দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদের। সেই গণপরিষদ যখন তাদের কাজ গুছিয়ে এনেছিল ঠিক তখনই সেই গণপরিষদ ভেঙে দিয়েছিলে পাকিস্তানের আমলা গভর্নর গোলাম মোহাম্মদ। সেটি ১৯৫৪ সাল। তিনি এই কাজটি করেছিলেন পাকিস্তানের সব ষড়যন্ত্রের কুশীলবদের প্ররোচনায়। 

এই কুশীলবরা ছিল মূলত পাঞ্জাবের সামরিক বেসামরিক আমলা। এরপর আর একটি নবগঠিত গণপরিষদ আবার চেষ্টা করেছিল আর একটি নতুন সংবিধান তৈরি করতে। সেই গণপরিষদের একজন সদস্য ছিলেন তরুণ শেখ মুজিব। তিনি সব মানুষের স্বার্থরক্ষা করতে পারে এমন একটা সংবিধার তৈরি করার জন্য আরও অনেকের সঙ্গে চেষ্টা করেছিলেন। একটি সংবিধান তৈরিও হয়েছিল। তা বাস্তবায়ন করার আগেই সেনাপ্রধান আইয়ুব খান সারা দেশে সেনা শাসন জারি করে সংসদ ভেঙে দিয়ে বস্তুত জিন্নাহর পাকিস্তানের বিলুপ্ত ঘটানোর সূত্রপাত করেছিলেন। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জিন্নাহর পাকিস্তানের বিলুপ্তি ঘটিয়ে বাঙালি প্রথমবারের মতো একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। যার নাম ‘বাংলাদেশ’। 

এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ২৩ বছরের মধ্যে ১৩ বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দুবার।   

বস্তুত ২৬ মার্চের আগে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ২৬ মার্চের ঘোষণাকে কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখা যেতে পারে। এটির মাধ্যমে বিশ্ব জেনেছিল পূর্বে একটি নতুন দেশের জন্ম হয়েছে, যার নাম ‘বাংলাদেশ’ আর তার জন্মদাতা পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি পরবর্তী নয় মাস যুদ্ধ করেছে, ত্রিশ লাখ মানুষ নিজের জীবন দিয়েছেন সেই দেশটিকে পাকিস্তানিদের দখলমুক্ত করতে। 

এই দিনে আমরা স্মরণ করি আমাদের সেই মহান রাষ্ট্রনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের সব সদস্য, ত্রিশ লাখ শহীদ আর আড়াই লক্ষ কন্যা জায়া জননী, যারা তাদের সম্ভ্রম খুইয়েছিলেন এই দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য। আমাদের সঙ্গে সেই ভয়াল দিনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছিলেন বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের কয়েক হাজার সেনা। তাদের স্মৃতির প্রতিও রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

জয় বাংলা 
বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।

লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন 

ঢাকানিউজ২৪.কম / এইচ

আরো পড়ুন

banner image
banner image