ফারজানা মৃদুলা
বল বীর, বল বীর
বল উন্নত মম শির।
শির নেহারি আমারি নত শির
ওই শিখর হীমাদ্রির।
বল বীর -
বল উন্নত মম শির
শির নেহারি আমারি নতশির ঐ শিখর হিমাদ্রির"
জাতীয় কবি কাজী নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা যেন আমাদের মনোবল উজ্জীবিত করে।
তেমনি করে এই নারী অগ্রযাত্রার পথিক নিগার সুলতানা পূর্ণতাকে।
হতাশা যদিও বাসা বাঁধতে চায় কভু বিদ্রোহী কবিতার লাইনগুলো একটা টনিক এর মত কাজ করে তার জীবনে নামের অর্থটা যেন একদম তার জন্যই বরাদ্দ।
বাবা ব্যবসায়ী হওয়ায় নানান রকমের মানুষের আসা যাওয়া ছিলো বাসায়। এই বিষয়টাও শিক্ষনীয় হয়ে ওঠে পূর্নতার জীবনে। কেননা মানুষের দুঃখ কষ্ট গুলো খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। যা কিনা জীবন গঠনের জন্য বড় একটা সহায়তা ছিলো।
বাবা মার খুব আদরের রাজকন্যা ছিলো পূর্নতা। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের খুব মেধাবী এই ছাত্রী ঢাকার সুনামধন্য লালমাটিয়া কলেজ হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে। ছোটবেলা থেকেই অনেক বিষয়ে পারদর্শী ছিলো, জানার আগ্রহ তাকে বরাবরই টানতো।
কিশোরী বেলায় বাবার কর্মস্থলে গেলেই মনে মনে স্বপ্ন বুনতো বড় হয়ে এমন কিছু করবে যাতে কিনা মানুষের কর্মসংস্থান হয় এবং দেশের বেকারত্ব দূর করনে নূন্যতম অবদান রাখার সঙ্গী হতে পারে। আসলে এইরকম মনমানসিকতা হওয়ার পেছনে বাবার অবদানই ছিলো মূখ্য।
বাবা সিআইপি (এক্সপোর্ট) হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন তার জীবনের আর্দশের বাতিঘর।
শুভ্রতার প্রতীক সাদা রঙ খুবই পছন্দ নারী অগ্রযাত্রার গল্পের এই নায়িকার।
ছয়ঋতুর দেশে আলাদা করে কোন ঋতুকে বাছাই করা হয়ে উঠেনি কখনোই, তবে পথের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ গুলোর কষ্টের কথা মনে করে শীতকালটা কেন জানি ভালো লাগে না পূর্ণতার। যদিও ছোটবেলা শীতের ধোঁয়া ওঠা পিঠাপুলির লোভ সামলাতে পারতো না তবে, বড় হয়ে বাস্তবতা চোখের সামনে দেখে সেই পিঠার লোভ আর আজকাল হয় না।
রুপমেলা নামের প্রতিষ্ঠানটির কর্নধার হয়ে পথচলার ১৬ বছর অতিক্রম করলো।
শুরুর পথটা এত মসৃন ছিলো না। আর্থিক যোগান এর জন্য বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো কিন্তু পারিবারিক সাপোর্ট অনেক বড় ভূমিকা রাখে সর্বদাই তার জীবনে। বিশেষ করে বাবা, বড়ভাই এবং জীবনসঙ্গী এই ৩ ব্যাক্তি অনুপ্রেরণা উৎস।
ডিজিটাল মাধ্যমে যদিও রুপমেলা একটা পেইজ সেটা ৫৫ হাজার ফলোয়ার ছিলো কিন্তু কোন এক কারনে সেটা বন্ধ করতে হয় ।পরে মনোবল দৃঢ় রেখে কিছুটা পরিবর্তন এনে নতুন আঙ্গিকে শুরু করে এবং মানুষের পরম ভালোবাসায় সিক্ত হয়।
রুপমেলা এই দীর্ঘ পথচলার প্রাপ্তি হিসেবে বিজনেস এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড থেকে শুরু করে নানারকম এচিভমেন্ট যুক্ত হয়েছে। এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে।
বাংলাদেশ ওমেন্স অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, জয়িতা ফাউন্ডেশন, বিসিক,শিল্প মন্ত্রনালয় এই ধরনের সংস্থা গুলোর সাথে যুক্ত হয়ে সফলভাবে কাজ করে চলছে। এছাড়াও নারী উদ্দোক্তা ফোরামের ডিরেক্টর অফ লিগ্যাল ডকুমেন্টস পদে কাজ করাটা সৌভাগ্য মনে করে এককথায়। কোন ভালো কিছু পেতে হলে ধৈর্য ধারন করলে ফল সুমিষ্ট এই কথায় বিশ্বাসী সবসময়ই। বাবার এই আদরের রাজকন্যা নিজের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান করতে পেরে আত্মতৃপ্তির সাথে দিন কাটাতে পারছে।
২০০৪ সালে জন্ম হয়েছিলো রুপমেলার। পারিবারিক জীবন লেখা পড়া সবমিলিয়ে ভেঙ্গেছে গড়েছে বহুবার।
বিবি রাসেলকে আইডল মেনে ৫,০০০টাকা মূলধন নিয়ে ছোট্ট একটা রুমের মেঝেতে কাপড় রেখে শুরু হয়েছিল রূপমেলার অগ্রযাত্রা। তারপর একটা কাপড়ের রেক যুক্ত হলো। এভাবেই শিশু থেকে অষ্টাদশী ছুঁয়ে ছুটে উঠেছে রূপমেলা। সততার সাথে চলুক এই দীর্ঘপথ, পূর্নতা দিবারাত্রি এটাই আশা বুনে চলছে ।
পূর্নতা তার নামের মতই বিন্দু বিন্দু করে পূর্ণ করে চলুক আমাদের চারিদিক ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: