
নিউজ ডেস্ক: রাজধানীতে এক সেমিনারে গবেষণার বরাতে বক্তারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। এই সংখ্যা ৩৫-৩৬ লাখ হতে পারে। ওই সময় ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যাও দুই লাখের বেশি। এটা পাঁচ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।
শুক্রবার 'জাতীয় গণহত্যা দিবস' উপলক্ষে বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে 'বাংলাদেশের গণহত্যার পাঁচ দশক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি' শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
এ সময় ছয় জেলার গণহত্যা, বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে বলা হয়, রেফারেন্স বইয়ে গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৯০৫। তবে চলমান জরিপে ৩৪টি জেলাতেই সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৮৬টিতে। একেকটি গণহত্যার ঘটনায় পাঁচজন থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। গণহত্যা জাদুঘর দেশব্যাপী এ জরিপ পরিচালনা করছে।
সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠানে গণহত্যাবিষয়ক কবিতা পাঠ করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি তারিক সুজাত। বক্তব্য দেন কবি আসাদ মান্নান। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
সেমিনারে জানানো হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এ দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ। এখন মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ৯ মাসের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। সে জন্য ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার যে প্রস্তাব ২০১৭ সালে সংসদে পাস হয়েছিল, তাতে সংশোধন আনতে হবে। পাশাপাশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা পেতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ শুরু করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে গণহত্যার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে যে গণহত্যা হয়েছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ব্যাপক ও পরিকল্পিত হত্যা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে হত্যাকাণ্ডের খবর ২৭ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। খবরে বলা হয়েছিল, সেদিন এক লাখ পর্যন্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বিজয়ের দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন পরিচালিত চলমান গবেষণায় একাত্তরে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার দুই লাখ নারীর কথা সরকারি হিসাবে আছে। এ হিসাবটি এসেছে, যারা সরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে এসে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন আর রেড ক্রসের সেবা গ্রহীতার তথ্য থেকে। ওই সময় রেড ক্রস জানিয়েছিল, তারা দেড় লাখ নারীর গর্ভপাত করিয়েছিল। কিন্তু অনেক নারী গর্ভধারণ করেননি, আবার অনেকে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। রেড ক্রসের মতে, মোট হিসাবে এ সংখ্যা চার লাখের বেশি হতে পারে। এ ছাড়া অনেকে লোকলজ্জায় ধর্ষণের কথা চেপেও গিয়েছিলেন।
মূল প্রবন্ধে শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেসব দেশে গণহত্যা হয়েছে, তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যা নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধচর্চার ইতিহাস ও গণহত্যার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা হয়েছে। কারণ, গণহত্যার কথা বলা হলেই কারা হত্যাকারী, সে তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ কারণে অনেক তথ্য চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।
'১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর' এ পর্যন্ত গণহত্যা, বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ নিয়ে ৩৪টি বই প্রকাশ করেছে। অনুষ্ঠানে নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও রাজবাড়ীর গণহত্যা, বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ নিয়ে ছয়টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: