
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সলপ ইউনিয়নে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ভর্তুকি মূল্যে কিছুটা স্বস্তি দিলেও ভোগান্তি কমেনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ অফিস থেকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কার্ডধারীরা। টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে সময় এবং খরচ বেড়েছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে হিমশিম খাওয়া ১ হাজার ৪৩৬ জন নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য ভর্তুকি মূল্যে কিছুটা স্বস্তি দিলেও ভোগান্তি কমেনি। সরকারের ভর্তুকি মূল্যে পণ্য কিনতে ভোগান্তি জেনেও স্পটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে এসব নিম্ন আয়ের মানুষ।
পরিবার কার্ডধারী একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি চাল ৪৭০ টাকায় কিনতে পারবেন। যার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও প্রতি কেজি চালের দাম ৩০ টাকা।
কার্ডধারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সলপ ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে সোনতলা মোড়ে সলপ ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। কার্যালয়ের সামনেই রাস্তার উপরে নিম্ন আয়ের কার্ডধারী ক্রেতাদের প্রখর রৌদ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ প্রখর রৌদ্র থেকে বাঁচতে হাতে থাকা ব্যাগ মাথার উপরে রাখছেন।
টিসিবি'র পণ্য কিনতে আসা সলপ ইউনিয়নের বাহিমান গ্রামের মাহাতাব সরকার (৬৭) অভিযোগ করে বলেন, সকালে ১৫ টাকা গাড়ী ভাড়া দিয়ে সোনতলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে রৌদ্রের মধ্যে দেড় ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এরপর ৪৭০ টাকায় ৫ কেজি চাল ও দুই কেজি তেল পেয়েছি। দুই কেজি ডাল দেয়ার কথা থাকলেও আমায় দেয়নি। পরে ডিলারের কাছে ডাল চাইতে গেলে বলছে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এই গুলা টাকা দিয়ে কিনতে এসে যদি সারাদিন ব্যয় করতে হয়, তাহলে কি আমাদের পেট চলবে।
পণ্য কিনতে আসা একই গ্রামের গোলজার হোসেন (৪২) বলেন, সেই সকাল থেকে ১২ টা পর্যন্ত রৌদ্রের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে দিলে আমাদের এতো কষ্ট হতো না। এখানে রৌদ্রের মধ্যেও জায়গা হারানোর ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
নাম প্রকাশ না শর্তে স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে টিসিবির পণ্য বিক্রয় করাতে মহিলা ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রখর রৌদ্রেও তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
ডিলার মের্সাস মার্জিয়া ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী মাসুদ রানা মশুর ডাল না দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পণ্য কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে একজন মশুর ডাল পাইনি বলে জানিয়েছিল। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। আর উপজেলা থেকে আমাদের যেখানে পণ্য বিক্রি করতে বলে, আমরা সেখানেই বিক্রি করি।
পণ্য বিক্রির তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আল্লামা ইকবাল বলেন, সলপ ইউনিয়নে সর্ব মোট ১ হাজার ৪৩৬ টি কার্ড রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। তবে আগে ইউনিয়ন পরিষদেই পণ্য বিক্রি করা হতো। ইউএনও এর নির্দেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকাত ওসমান বলেন, আগে থেকে টিসিবির পণ্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে দেয়া হতো। কিন্তু কিছুদিন হলো ইউনিয়ন পরিষদ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে টিসিবির পণ্য বিক্রি করায় সিংহভাগ কার্ডধারীর গাড়ী ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত টাকা ও সময়ের ব্যয় হচ্ছে। এতে অনেকেই ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পেয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেনা। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলা হয়েছে তার পর আওয়ামীলীগ অফিস থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন বলেন, এমন ভোগান্তির বিষয়টি আমার জানা নেই, আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: