• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৭ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

সমতলে চায়ের স্বর্গ পঞ্চগড়


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০২:০২ পিএম
ভারতের দার্জিলিংয়ে যদি চায়ের চাষ হতে পারে
সমতলে চায়ের বাগান

নিউজ ডেস্ক:  চায়ের সমতল স্বর্গ। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে যে চায়ের চাষ করা সম্ভব, সেই চিন্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাথা থেকেই এসেছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধায় যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী দেখলেন সীমান্তের ওপারে ভারতের দিকে প্রচুর চায়ের বাগান। কিন্তু বাংলাদেশের এদিকে কোনো চায়ের বাগান নেই। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের দার্জিলিংয়ে যদি চায়ের চাষ হতে পারে, তাহলে পঞ্চগড়ে কেন নয়?

দুই জায়গায় একই মাটি ও পরিবেশ। তিনি পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল হোসেনকে ওখান থেকে একটা চারা এনে পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশনা দেন। ভারত থেকে চারা সংগ্রহ করে ডিসি তার বাংলোর একটি টবে রোপণ করে চা চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার টবের চারা দ্রুত ডালপালা ছেড়ে বাড়তে থাকে। রবিউল হোসেনের পক্ষে তখন কল্পনাও করা সম্ভব ছিল না, টবের ঐ চারাগাছের মধ্যে আসলে উঁকি দিচ্ছে পঞ্চগড়ে চা-চাষের ভবিষ্যত্। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে এই জেলায় চা চাষের সূত্রপাত হয়। ২৪ বছর পর পঞ্চগড় জেলায় এখন যে দিকেই তাকানো যায়, দিগন্তবিস্তৃত চা-বাগান। পুরো জেলার চেহারা বদলে গেছে।

বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বেসরকারি উদ্যোগে সমতলে চা চাষে ঘটেছে নীরব বিপ্লব, যা ইতিমধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করেছে। পঞ্চগড়ে ২০০৬ সালে চা আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৯২৫ একর, যা বর্তমানে ১৩ গুণ বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৭৯ একর। চায়ের চাষ থেকে শুধু সবুজ পাতা উত্পাদন হচ্ছে বর্তমানে প্রায় ৯ কোটি কেজির বেশি এবং চা তৈরি হচ্ছে বছরে প্রায় পৌনে ২ কোটি কেজির বেশি। বর্তমানে এই জেলায় মোট ৯টি বড় ও ৮ হাজার ৩৫৫টি ক্ষুদ্রায়তনের চা-বাগান রয়েছে। চা-শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৬ সালে যেখানে মাত্র ১ হাজার ৪৭৫ জন শ্রমিক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, বর্তমানে তা বেড়ে ১৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে বর্তমানে জেলার প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক সংযুক্ত রয়েছেন। কাঁচা চা-পাতা বিক্রি করে ক্ষুদ্র কৃষক বছরে একরপ্রতি ২-৩ লাখ টাকা আয় করছেন। বছরে এই শিল্প থেকে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে, যা চা খাতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়। ২০০৯ সালে এই জেলায় মোট চা উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৫৯ লাখ কেজি, যা ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ কেজি। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ের সমতলের চা-শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে এই জেলায় দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালুর ঘোষণা দিয়েছেন, যা খুব শিগিগর উদ্বোধন করা হবে।

পঞ্চগড়ের সমতলে চা-বাগানের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এই জেলার চাষিদের মধ্যে অন্যান্য ফসলের তুলনায় চা চাষের আগ্রহ বেশি। ছোট-বড় বিভিন্ন পরিসরে চা-বাগান গড়ে ওঠায় একদিকে যেমন বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে মজবুত হচ্ছে এই অঞ্চলের অর্থনীতির ভিত। ফলে গত সাড়ে ১৪ বছরে চা-বাগানসংশ্লিষ্টদের জীবনমানের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে এ জেলায়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার সমতলভূমিতে চা চাষ করতে দেখা যায় চাষি ও বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে। যত দূর চোখ যায়, ততটুকুই যেন চা-বাগান। প্রতিটি বাড়ির আশপাশে নিজ উদ্যোগে গড়ে উঠছে ছোট-বড় চা-বাগান। সড়কের পাশে বা উঁচু পতিত জমিতে কিংবা পুকুরপাড়ে এমনকি বাড়ির আঙিনায় রয়েছে চায়ের বাগান। আবার কেউ কেউ সুপারি, আম, তেজপাতা বাগানের সাথি ফসল হিসেবে করেছেন চায়ের চাষ।

বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমিতে চায়ের চাষ করেছেন রবিউল আলম নামে তেঁতুলিয়ার এক চাষি। তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৩ সাল থেকে আমার জমিতে চায়ের চাষ করছি। আমার বাগানে আমি ও আমার ছেলেমেয়েরা কাজ করছি। কয়েক দিন আগে পাতা তুলেছি। এখন নতুন পাতা আসছে, আবার তুলব।’ একই উপজেলার আরেক চা-চাষি মমতাজ বেগম বলেন, ‘আগে ধান চাষ করতাম, কিন্তু এখন চা চাষ করে অনেকটাই স্বাবলম্বী। আগে বছরে যে ধান পেতাম, তা দিয়ে সংসার চলতে কষ্ট হতো। এখন কষ্ট হচ্ছে না। আমার মতো ছোট চা-চাষিদের যাদের ফ্যাক্টরি নাই, তারা অন্যদের ফ্যাক্টরিতে পাতা বিক্রি করে থাকি। শেখ হাসিনার জন্য আমাদের ভাগ্য বদল হয়েছে। এদিকে নগদ অর্থ পাওয়ার আশায় ধান চাষের জমি, শাক-সবজি চাষের জমি, ফলের বাগান, বাঁশবাগান উজাড় করে অনেকে চা-বাগান করছেন। এই জেলার ক্ষুদ্র চা-চাষিরা জানান, সমতলে চা-বাগান করে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় অনেক চা-চাষি এখন কারখানা প্রতিষ্ঠা করে ইন্ডাস্ট্রির মালিক হয়ে গেছেন। তাদের উদ্যোগে স্থানীয় বেকারদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। তেঁতুলিয়ার চায়ের গ্রাম বলে খ্যাত পেদিয়াগজ এলাকার চা-চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা ইশাহাক মন্ডল ও স্থানীয় আরো কয়েক জন প্রথম ক্ষুদ্র চায়ের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে আমরা অনেক ভালো আছি।’

দিনে পাথর সংগ্রহ, রাতে চা-পাতা তোলেন পঞ্চগড়ের শ্রমিকেরা: গভীর রাতে ছোট ছোট আলো নড়াচড়া করছে। দূর থেকে হঠাত্ কেউ দেখলে ভূতপ্রেত ভেবে ভয় পেয়ে যেতে পারে। কল্পনায় যাদের ভূতপ্রেত ভাবা হচ্ছে, তারা মূলত রাতের চা-শ্রমিক। ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন ২টা, মাথায় টর্চলাইট বেঁধে চা-বাগানে নেমে পড়েন তারা চা-পাতা সংগ্রহ করতে। তারাই আবার দিনের বেলা চলে যান পাথর সংগ্রহে কিংবা বালু উত্তোলনে। সম্প্রতি পঞ্চগড়ের পাথর তোলার বিভিন্ন এলাকা এবং চা-বাগানগুলোতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। দিনের বেলায় পাথর কিংবা বালু তোলার কাজ এবং রাতে দল বেঁধে চা সংগ্রহ করছেন তারা। প্রতিটি দলে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক দেখা যায়।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image