বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুর জেলা শহর তথা সকল উপজেলার পাশাপাশি বিরামপুর উপজেলা তীব্র ও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি মানুষের বাড়তি যন্ত্রণার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে জনজীবন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
জানা যায়,শনিবার (৬ এপ্রিল) দিনাজপুর জেলা সহ প্রতিটি উপজেলার পাশাপাশি বিরামপুর উপজেলায় চলছে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের চিত্র। কোথাও কোথাও ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রামাঞ্চলের কিছু এলাকায় ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যমতে, ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৭৮১ মেগাওয়াট। গতকাল দিনের বেলা পিক আওয়ারে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২৪৭ মেগাওয়াট। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ আছে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট। আরও সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জ্বালানির সংকটে উৎপাদন করা যায় না। কয়লা ও ফার্নেস তেল সংকটে বাকি ১৬ হাজার মেগাওয়াট থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে গড়ে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট থেকে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট থেকে ১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। দেশে এখন গ্যাসের সরবরাহ আগের চেয়ে বেশি,তবে সেটাও অপ্রতুল। কেননা,গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট, এখন উৎপাদন হচ্ছে ৬ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এদিকে তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ের কারণে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভোগা মানুষেরা বেশি কষ্টে পড়ে গেছে। বিশেষ করে এই মাসটি মাহে রমজান। অনেক মানুষ রোজা থাকে নামাজ আদায় করে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে অসহনীয় হয়ে পড়েছে জনজীবন। লোডশেডিংয়ের কারণে সারারাত ঘুমের সমস্যা হওয়ায় প্রভাব পড়ে দিনের বেলা কাজের ওপর। ঠিক মতো কাজ করতে পারি না সাধারণ মানুষ। বিরামপুর উপজেলা শহরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী আলমগীর হোসেন জানান,গড়ে হিসাব করলে আমাদের এখানে ৪ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ থাকে না। সবচেয়ে কষ্ট হয় রাতে। আমার ৩ বছরের বাচ্চাটা খুব কান্নাকাটি করে সেই সাথে ঘুমাতে পারি না। কলেজ বাজার থেকে জুই স্কুল শিক্ষকা বলেন,আমার ছোটো ভাইয়ের ঘুম লেখাপড়া করতে পারছেনা। ২০-৩০ মিনিট বিদ্যুৎ থাকলেও এক ঘন্টা দেড় ঘন্টার পূর্বে বিদ্যুৎ আসে না। রোজা থেকে অসহনীয় অবস্থা পার করছি। সাধারণ জনসাধারণ আরও জানান,বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের এলাকায় মশা অনেক বেশি। ফ্যান ঘুরলে মশা একটু কম লাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় আন লিমিটেড ভাবে বিদ্যুৎ থাকছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যুৎ চলে গেলে মশার উৎপাত সবমিলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
বিরামপুর ঢাকা মোড়ের ব্যবসায়িক রাসেল বলেন,আমার বাবা স্ট্রোকের রোগী। বিদ্যুৎ চলে গেলে খুব অস্থির হয়ে যান। মা ঘরের কোনো কাজ করতে পারেন না। তিনি আরও বলেন,সারারাতে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। উপজেলার দিওড় ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন,আমাদের এখানে প্রতি দেড় থেকে ২ ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ চলে যায়। আর গেলে ২ ঘণ্টা পর আসে। এভাবেই সারাদিন চলে। রাতে অনেক কষ্ট হয়। এমনিতেই আমাদের এখানে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে তার ওপর আবার বিদ্যুৎ থাকে না। খুবই কষ্টে আছি।
উপজেলার ফ্যাক্টরি পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিক আবু বক্কর সিদ্দিক সহ অনেকেই বলেন,অসহনীয় গরম এর মধ্যে বিদ্যুতের সমস্যায় খুব কষ্টে কাজ করছি। ফ্যাক্টরি স্বত্বাধিকারী দুই তিনজনই জানান,আমার ফ্যাক্টরিতে ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরবর্তী ২ ঘণ্টা থাকে না। আমার আজকে অনেক পণ্য উৎপাদনের থাকলেও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে ফ্যাক্টরিতে ১ হাজার উৎপাদন হয়েছে। বাকি ১ হাজার ডেলিভারি দিতে পারব না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বাইরের অর্ডার নিয়ে বড় ধরনের বিপদে পড়ব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্লিনিকের মালিক বলেন,গত ২৪ ঘণ্টায় ৫থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। গ্রামাঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ এর একই অবস্থা। বিদ্যুৎ দীর্ঘসময় না থাকার কারণে ফ্রিজে থাকা খাবার নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। তিনি আরও বলেন,সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে রাতে। কেউ ঘুমাতে পারছেন না। শিশুরা গরমে কান্না করছে। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তারা অনেক ভোগান্তিতে পড়েছে। বিদ্যুৎ নেই আবার বাইরে গেলে তীব্র গরম। মানুষ এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। তীব্র গরমের কারণে হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে রোগীরা হাঁসফাঁস করছে। নিম্ন আয়ের মানুষ কাজে যেতে পারছেন না।বিরামপুর শহরে চলাচলের অন্যতম মাধ্যম ইজিবাইকের সংখ্যা আজ থেকে অনেক কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে ইজিবাইকে চার্জ হয় না। ফলে পরিবারের উপযুক্ত আয় করতে ব্যাহত হচ্ছে শ্রমিক গন। পল্লীবিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেলোয়ার হোসেন জানান,জেলায় ২৪০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৪৬ মেগাওয়াট। ঘাটতি রয়েছে ৯৪ মেগাওয়াট। এই ঘাটতি লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে সমন্বয় করা হচ্ছে। বিরামপুরে প্রায় ৩০ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে। নাম প্রকাশে এক ডাক্তার বলেন,তাপপ্রবাহের কারণে উপজেলার হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীসহ অন্যান্য রোগীর চাপ সংখ্যা বেড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালে রোগীদের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া শ্বাসকষ্টের রোগীদের নেবুলাইজের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে জানা যায়,বড় পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের গাফলতির কারণে বিদ্যুতের এই অবস্থা। এ কারণে জনজীবন জনদুর্ভোগ পোহাচ্ছে। লোডশেডিং বেড়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সদ্ব্যবহার। উক্ত বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়ে এলাকার জনসাধারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করেছেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: