• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

কিশোরগঞ্জে পুত্র সন্তানের আকাঙ্খায় নবজাতক চুরি, আটক দুই


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২:০৯ পিএম
আটক দুই
নবজাতক চুরি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জে ঘরের সিঁধ কেটে নবজাতক চুরির ঘটনায় প্রায় ১৩ ঘন্টার অভিযান পরিচালনা করে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের শহবাগ পিচপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় এক দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাজমিন ও সাজ্জাদ দম্পতির আড়াই মাস বয়সী শিশু জুনায়েদ। রোববার (০৯ জুন) রাতে প্রতিদিনের মতো মা নাজমিন গ্রামের বাবার বাড়ির বসত ঘরে দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুমায়। পরে ভোররাতে নবজাতক শিশুর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে জেগে দেখে জুনায়েদ বিছানায় নেই । তারপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যাচ্ছে না শিশুটিকে। সোমবার (১০ জুন) সকালে খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ও তাড়াইল থানা পুলিশ যৌথভাবে উদ্ধার অভিযানে নামে। 

প্রায় ১৩ ঘন্টার উদ্ধার অভিযান শেষে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রামের রুবেল মিয়ার বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রুবেল ও তার শাশুড়ি সস্তু বেগমকে আটক করে পুলিশ।

আটককৃত রুবেল মিয়া (৩২) সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের বেত্রাটি গ্রামের মৃত শহীদ উদ্দিনের পুত্র ও শস্তু বেগম (৫৫) তাড়াইল উপজেলার শাহবাগ গ্রামের হারুন মিয়ার স্ত্রী।
নবজাতক শিশু জুনায়েদের মা নাজমিন জানান, রোববার রাতে প্রতিদিনের মতো দুই শিশু ও নাজমিনের মাকে নিয়ে তার বাবার বাড়ির বসত ঘরে ঘুমাতে যান। নাজমিন নবজাতক শিশুটিকে বুকের দুধ পান করাতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। 

ঘটনার দিন তার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন কুমিল্লায় তার বোনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ফজরের আজানের সময় নাজমিনের ঘুম ভাঙ্গলে  তার সন্তানকে না দেখতে পেয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করলে না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। কান্নার শব্দে ঘরে থাকা নাজমিনের মা ও বাবা সজাগ হয়ে ঘরের বিছানার নিচে সিঁধ কাটা ও ঘরের দরজা খোলা দেখতে পায়। তাদের কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন ও মসজিদের মাইকে চুরি যাওয়া শিশুর সন্ধান চেয়ে মাইকিং করেন। 
পরে সকালে তাড়াইল থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উদ্ধার অভিযানে নামে। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রামের রুবেলের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন পুলিশ সুপার।

এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, রোববার রাত পৌনে ২টা থেকে ৪টার মধ্যে শিশুটি চুরি হয়। 

তিনি জানান, অনুসন্ধানের সময় তিন থেকে চারটি বিষয়কে টার্গেট করে আমরা আগাই। প্রথমত এটি হত্যাকান্ড কিনা, যে কারণে পুরো এলাকাটি সার্চ করা হয়। কিন্তু এ ধরণের কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত ট্রান্সজেন্ডার শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রেখে আগাই। কিন্তু সে রকমও কিছু পাওয়া যায়নি। পরে মনে হলো এটা চুরি। কিন্তু চুরিটা কে বা কারা করতে পারে মর্মে দুই শ্রেণির লোকদেরকে টার্গেট করে আগাই। যার অনেকগুলো মেয়ে সন্তান রয়েছে, শুধুমাত্র একটি ছেলের জন্য ভীষণ রকমের প্রত্যাশি। আশেপাশেই এ রকম খোঁজা শুরু করি। এরইমধ্যে একটি ক্লু পেয়ে সে অনুযায়ী কাজ শুরু করে পুলিশ। ক্লু অনুযায়ী পুলিশ জানতে পারে যে, জনৈক রুবেল-খাদিজা দম্পতির তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে, চতুর্থ সন্তানও কন্যা এটা তারা নিশ্চিত হয়েছেন। 

এ বিষয়ট যাচাই করার জন্য রবিবার যে হাসপাতালে খাদিজা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে, সেই হাসপাতালে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে রুবেল-খাদিজা দম্পতির একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান হয়েছে জানা যায়। দম্পতির দাবি অনুযায়ী এটি চতুর্থ কন্যা সন্তান এবং অন্যটি তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান। কিন্তু রবিবার যে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে বলে তারা দাবি করছেন, তার বাহ্যিক অবয়ব ও লক্ষ্মণে সেটা একদিন আগের বলে মনে হয়নি। ফলে সন্দেহ ঘনিভূত হয়। পারিপার্শ্বিক সাক্ষিদের মাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে পুলিশকে তথ্য প্রদান করে। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পুত্র সন্তানটি প্রকৃত অর্থেই রুবেল-খাদিজা দম্পতির সন্তান নয়। বরং এটি সাজ্জাদ-নাজমিন দম্পতির চুরি হওয়া সন্তান জুনাইদ।

আটক রুবেল ও তার শাশুড়ি শিশুটিকে চুরির কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে জানান পুলিশ সুপার। পর পর চারটি কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়া এবং পুত্র সন্তানের আকাঙ্খায় তারা এ কাজটি করেছে বলে ধারণা পুলিশের। এ বিষয়ে তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

এ ব্যাপারে ভিকটিমের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগের পর আটক রুবেল ও তার শাশুড়ি শস্তুকে এ মামলায় সম্পৃক্ততা বিবেচনা করে মামলা রেকর্ড করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image