
গৌতম চন্দ্র বর্মন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা ইতিমধ্যে দুই বছর পার করেছেন। এই সময়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাকে উন্নত ও আদর্শ পৌরসভা হিসেবে গড়তে তার নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রম ও সাফল্যের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১২ মে) একান্ত সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল। সে কারণেই বারবার পৌর কাউন্সিলর নির্বাচন করেছি। সেখানে কেন জানি পরাজিত হলেও আমি হাল ছাড়িনি।
পরে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। গ্রামের মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছিলেন। বেশিরভাগ ইউনিয়নে আমি বিজয়ী হলেও শেষের দিকে পাঁচটির মতো ইউনিয়নে ভোট থামিয়ে দেয়া হয়। পরে আমি পরাজিত হই।
তিনি বলেন, আমি প্রতিজ্ঞা করি এর শেষ দেখবো। পরে আবারো জনগণের কাছে যাওয়ার জন্য, তাদের সেবা করার জন্য কাজ শুরু করি। মাঠে থেকে, অসহায় মানুষের পাশে থেকে, তাদের উপকারে যা যা করা দরকার সেগুলো করা শুরু করি। এরপর পৌরসভার নির্বাচনের সময় কখনো ভোলার নয়। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বললে আমি ভয় পাই, কারণ আমার জনবল নেই, টাকা-পয়সা নেই। তবে জনগণ আমাকে চাইতো। সাধারণ মানুষজন আমাকে খুব ভালোবাসতো।
বন্যা বলেন, জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়ার পর আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। পরে দলীয় ফোরাম আমার জীবনবৃত্তান্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য কেন্দ্রে প্রেরণ করে। তবে আমার মনে একটা প্রত্যয় ছিল যে, আপা (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা)আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন এবং আমি মনোনয়নও পাই। পরে নির্বাচনে পৌরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেন।
তিনি বলেন, পৌর মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি যখন পৌরসভায় আসি আমার খুব ভালো লাগে। কারণ এখানে কাজের মাধ্যমে সোয়াব লাভের সুযোগ আছে। মানুষের কাজ করলে আল্লাহও খুশি হন। আমি খুব সুখী যে, মানুষকে শান্তি ও সেবা দিতে পারছি। যদিও কিছু যন্ত্রণা আছে, চাপ আছে বিভিন্নভাবে। দায়িত্বও আছে অনেক।
আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, দুই বছর পার হয়েছে। এর মধ্যে এক বছর করোনাকালীন সময় গেছে। তখনো আমি সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি।
উন্নয়নমূলক কাজগুলো পরের এক বছরে করেছি। ঢাকায় গিয়ে মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, সচিব, জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে অনেক কাজের অনুমোদন পেয়েছি। এখন সময়সাপেক্ষে এ কাজগুলো হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সকল নেতা যেমন - ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহ. সাদেক কুরাইশী, সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অরুণাংশু দত্ত টিটো, সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকারসহ সকলেই আমার কাজের প্রশংসা করেন। তারা আমাকে এভাবেই চালিয়ে যেতে বলেছেন। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। আমি তাদের বলেছি, আমরা একে অপরের পরিপূরক।
বন্যা জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে।
এর মধ্যে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। রাস্তার ডিভাইডারে সবুজায়নের জন্য গাছপালা লাগানো হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড গোলচত্বর থেকে বালিয়াডাঙ্গী মোড় পর্যন্ত গাছ লাগানো হয়েছে। টাঙ্গন নদীর ওপরে এসএস পাইপ দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে। নতুন ড্রেন-কালভার্টের কাজ চলছে। এক-তৃতীয়াংশ কাজ হয়ে গেছে, বাকিগুলো চলমান।
মেয়র আরো জানান, এলজিএসপির সার্ভে চলছে। জনস্বাস্থ্যের ২০ কিলোমিটার কাজ চলছে। রাস্তা, পুকুর খনন ও বড় বড় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছিল, সেগুলো মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। এতে অনেক এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। কাজ করতে গিয়ে সামান্য সমস্যা থাকলেও সেগুলো কাটিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি।
মেয়র বলেন, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছি। তাদের কথা চিন্তা করে তাদের সেবা দেয়ার জন্য কিছু নীতিমালা করেছি। কিছু মার্কেট, ট্রেড লাইসেন্সসহ সব পৌর সুবিধা যাতে সাধারণ জনগণ খুব সহজেই পেতে পারে সে লক্ষ্যে তাদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, আমি চাই, সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের উপকার বা সেবা দেয়ার জন্য সরকার আমাকে সহযোগিতা করুক। আমি যেন তাদের কাছে থাকতে পারি - সেটাই চাওয়া। নতুন কিছু জিনিস করেছি, এর মধ্যে শহরের গোবিন্দনগর আড়ত এলাকায় একটি সম্প্রীতি চত্বর বানাতে চাই। ইতিমধ্যে ডিজাইনারকে বলা হয়েছে, তারা ডিজাইন করা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শহরের আর্ট গ্যালারিতে শেখ রাসেল চত্বর উদ্বোধন করা হয়েছে। সেটির কাজও হয়ে যাবে। পৌরসভা চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল করেছি। চত্বরে সাধারণ বা সেবা নিতে আসা মানুষদের বসার জন্য স্থাপনা করেছি। পুরো পৌরসভা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনেছি। জাতির পিতার বিভিন্ন স্মৃতিকে ধরে রাখতে পৌরসভায় বঙ্গবন্ধু কর্নার, সকলের জন্য একটি ক্যান্টিন, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য একটি আধুনিক গ্যারেজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। পৌরসভার চারপাশ সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। ইতিমধ্যে তৃতীয় তলার কাজ শুরু হয়েছে। এর কাজ শেষ হলে কর্মকর্তা, কর্মচারী, কাউন্সিলরসহ সেবা নিতে আসা মানুষজনের সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, নারী মেয়র হিসেবে দেখেছি - পৌরসভায় নারী সেবাগ্রহীতারা আমার কাছে আসেন, বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা বলেন। আমার ভালো লাগে। তারা আমার সঙ্গে মন খুলে কথা বলে কাজ করে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য দুই বছর স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
সবশেষে আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, সকলের সহযোগিতা পেলে আগামীতে একটি উন্নত ও আদর্শ পৌরসভা গড়ে তুলব।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: