• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৮ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

অধিকাংশ ভারতীয় নেতারা কেন অ‌বিবা‌হিত থাকেন?


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ০৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১:২০ পিএম
শুধুমাত্র আমার দেশবাসীর জন্য
নেতারা কেন অ‌বিবা‌হিত থাকেন?

নিউজ ডেস্ক:  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন। গত ২২ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে স্বাগত জানাতে হোয়াইট হাউসের লালগালিচায় স্স্ত্রীক উপস্থিত হন। কিন্তু মোদি ছিলেন একা। কারণ স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই তিনি কাটাচ্ছেন জীবন। তবে শুধু মোদি নয় অনেক ভারতীয় নেতাও বিয়ে করেননি, কেউ বা বিয়ের পর সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে রাজনীতি করছেন।

পশ্চিমা রাজনীতিতে পরিবার কেন্দ্রিক ছবি যেখানে নেতার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ব্যবহার হয়, ভারতে ঘটে তার বিপরীত। তারা সঙ্গীহীন জীবনকেই গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন। জনগণের কাছে যেন তারা এই বার্তা দিতে চান যে, দেশের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিতে আর কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মোদি বলেছিলেন, 'আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, শরীরের প্রতিটি অংশ, শুধুমাত্র আমার দেশবাসীর জন্য।'

৭২ বছর বয়সী মোদি প্রধানমন্ত্রীর সুবিশাল বাসভবনে একা থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, মোদির কর্মজগত তার অস্তিত্বের অংশ। তবে মোদির জীবন কাহিনী এতটা সরল রেখায় দেখার সুযোগ নেই।

কিশোর বয়সে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তিনি সে সম্পর্ক ত্যাগ করে আধ্যাত্মিকতার জন্য হিমালয়ে ঘুরে বেড়ান। একসময় তিনি ডানপন্থি হিন্দুদের সংগঠন আরএসএসে যোগ দিয়ে প্রচারকের ভূমিকা নেন।

২০০০ এর দশকে নিজের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীর বিবরণীতে বৈবাহিক অবস্থার ঘরটি খালি রেখেছিলেন মোদি। তবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লড়াইকালে নিজের বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আনেন তিনি। মোদি নিজেকে জাগতিক বিষয় থেকে দূরে রেখেছেন বলে প্রকাশ করেন।

২০১৯ সালে এক ভারতীয় অভিনেতাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদি জানান, তিনি অল্প বয়সে তার পরিবার থেকে নিজেকে 'বিচ্ছিন্ন' করেছিলেন এবং জীবনের সমস্ত আনন্দ ত্যাগ করতে শিখেছেন।

অবিবাহিত রাজনীতিবিদদের দলে যেমন আছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মোদি বিরোধী এই নেত্রী কেবল তিন ঘণ্টা ঘুমান বলে প্রচলিত।

অন্যদের মধ্যে আছেন ভারতে সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও মোদির উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত যোগী আদিত্যনাথ, ওড়িশা রাজ্যের ‍মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়েক।

আরো আছেন নিম্নবর্গীয়দের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠন বহুজন সমাজ পার্টি থেকে নির্বাচিত উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। তার জীবনী লেখক মি. বোস জানান, মায়াবতী বলেছিলেন তিনি শোবার ঘরে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন এবং আমলাদের অভ্যর্থনা জানাবেন তার নাইটগাউন পরা থেকেই।

এক্ষেত্রে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে মহাত্মা গান্ধীকে। ১৩ বছর বয়সে বিয়ে এবং চার সন্তান জন্মদানের পর ৩০ বছর বয়সেই নিজের যৌনজীবন ত্যাগ করেন তিনি। এরপর নিজেকে নিয়োজিত রাখেন ব্রিটিশদের থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে।

কর্মক্ষেত্র ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য? না, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাজনীতিকেরা সে সুযোগ কম পান অথবা বের করার চেষ্টাও করেন না। তাদেরকে ১৪০ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণে কাজ করতে হয়। একে অপরকে প্রতিযোগিতায় হারাতে নেতারা জাহির করার চেষ্টা করেন, কে কতটা ঘুম ঘুমান। নরেন্দ্র মোদির এক সহযোগী যেমন উল্লেখ করেন, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেবল চার ঘণ্টা ঘুমান।

রাজনৈতিক ভক্তির কারণে একাকী জীবন বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত এক বিচিত্র জায়গা বলে মনে হতে পারে। কারণ এখানে, নিজের চেয়ে পরিবারের প্রাধান্যই বেশি থাকে। পারিবারিকভাবেই বেশিরভাগ বিয়ে হয়। রাজনীতিতেও পারিবারিক সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভারতে অনেক ভোটার বিশ্বাস করে, একা থাকা রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি করার সম্ভাবনা কম। সাংবাদিক ও লেখক অজয় বোস বলেন, 'খুব শক্তিশালী উপলব্ধি হলো, তাদের (যেসব নেতা একা) ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। তারা জনগণের সেবায় নিয়োজিত।'

ভারতের তরুণরা যেখানে বিয়ে করার জন্য তীব্র চাপে থাকে সেখানে রাজনীতি ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে একাকী ব্যক্তি 'স্বার্থপর' বলে বিবেচিত হয় না। তারা ত্যাগ স্বীকার করেছে বলে মনে করা হয় এবং তাদের দেবতা বা দেবীর মতোই সম্মানের সঙ্গে দেখা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সম্পাদক নীরজা চৌধুরী বলেন, বর্তমানদের মধ্যে কেউ মোদির মতো নিজের একাকী জীবনকে কাজে লাগাতে পারেনি। তার দল খুব সাবধানতার সাথে এই ভাবমূর্তি দাঁড় করিয়েছে।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image