• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনে জি-২০ সম্মেলন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:০৬ পিএম
ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনে
জি-২০ সম্মেলন

অলোক আচার্য

যুদ্ধ বন্ধ হোক, বিশ্বে শান্তির বার্তা বিরাজ করুক এই বার্তায় শেষ হয়েছে জি-২০ সম্মেলন। ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন শেষে হিসেব নিকেশ করা শুরু হয়েছে যে বিশ্ব প্রকৃতপক্ষে কী বার্তা পেলো এ সম্মেলন থেকে। যদিও একটা কথা স্পষ্ট যে ভারত তার নিজের অবস্থান বিশ্বের রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী করেছে এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকেও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে কিন্তু বিশ্ব তাতে কি পেয়েছে? কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে এবং এগুলো বিশ্বকে এগিয়ে নিতে পারে। তবে ভারত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়া থাকা সত্ত্বেও চমৎকার একটি আয়োজন করতে পেরেছে। প্রতিটি বৈশ্বিক সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে থাকে বিশ্ব। কারণ এখানে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হয়ে পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিশ্ব নেতাদের একত্রিত হওয়া মানেই বিশ্ব রক্ষায় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অবশ্য তাদের এই একত্রিত হওয়া সবসময় সফল হয় না। প্রায়শই ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতার দায় নিতে হয় সব মানুষকে। তবু বিশ্ব তাকিয়ে থাকে। যেটুকু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় তাও মানুষেরই কল্যাণ সাধন করে। কিন্তু মূল সমস্যা যা থেকে সমস্ত সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে সেটি হলো রাশিয়া—ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর পরপরই পৃথিবীর সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। এই ঘোষণাকে বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করছে বিভিন্ন দেশ। যেমন— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য প্রশংসা করেছে এবং ইউক্রেন সন্তুষ্ট হতে পারেনি এবং রাশিয়ার কাছে এটি ভারসাম্যপূর্ণ ঘোষণা। এই যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়া সম্মতও হয়েছে। যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। দিল্লি ঘোষণায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা জানানো হয়নি। তবে এটা মনে হয় সাময়িকভাবে রাশিয়াকে স্বস্তিই দিবে। বিপরীতে কিয়েভকে অসস্তি। এখানে একটি বার্তা থাকতে পারে। সেটি হলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে নয়, কৌশলগতভাবে সমাধান করা উচিত এই সমস্যার। পৃথিবীকে ভারসাম্য নীতিতে এগিয়ে নিতে আগ্রহী দেশগুলো। পশ্চিমা দেশগুলোকে রাজি করিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিই কঠিন ছিল ভারতের পক্ষে। তবে শেষ পর্যন্ত ভারতের এই ভারসাম্যপূর্ণ নীতি সফল হয়েছে। 

এতদিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দুনিয়ার ধারাবাহিক চাপ সত্ত্বেও জাতিসংঘসহ কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাব সমর্থন করেনি ভারত। মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগও ছিন্ন করেনি। এই যুদ্ধ থেকে বিশ্বে তীব্র মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনীতির অবনমন,খাদ্য সংকট, বেকারত্ব প্রভৃতি সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে। যদিও আলাদাভাবে এসব সমস্যা সমাধানের বিষয় এসেছে। তবে অর্জন বলতে সম্মেলনে একটি ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব গড়ার লক্ষ্য পাওয়া গেছে। এবারের সম্মেলন শুরুই হয়েছিল এক বিশ্ব এক পরিবার এক ভবিষ্যত এই স্লোগান সামনে রেখে। যদিও সেটা কিভাবে সম্ভব সেই বিষয়ে জানা যায়নি। সম্মেলনে স্থায়ী সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। এতে জোট আরও শক্তিশালী হলো এবং বিস্তৃত হলো। জি—২০ সম্মেলনের ৬টি এজেন্ডা হলো—জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, উন্নত প্রযুক্তির ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ, একুশ শতকের চাহিদা মেটাতে বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠান ও নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন। সবচেয়ে কমন বিষয় হলো জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা।

এর কারণ বিশ্ব এখন জানে বর্তমান কিছু সংকট চাইলেই সমাধান করা সম্ভব এবং তার জন্য বেশি সময়ও দরকার হবে না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে শুধু সম্মত হওয়া বা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়াই যথেষ্ট নয় বরং জোর দিতে হবে বাস্তবায়নে। যা বহুবছরেও খুব বেশিদূর এগিয়ে নেওয়া যায়নি। বরং বেড়েছে কার্বন নির্গমনের হার। পৃথিবী উষ্ণ হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে। নিন্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে। মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।  অতি অবশ্যই জলবায়ু পরিস্থিতি যা বিশে^র শিল্পন্নোত দেশগুলোর কারণে অধিকাংশ ক্ষতি হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর বিশ^ নেতারা স্বশরীরে মিলিত হয়ে মানুষের আশা জাগিয়েছেন। একদিকে বিশ^ মোট দেশজ উৎপাদনের ৮০ শতাংশের উৎস। অন্যদিকে এরাই আবার ৮০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের দায় রয়েছে। বৈশি^ক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রীতে রাখার চ্যালেঞ্জ উভয় সম্মেলনেরই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। 

ভূরাজনীতি এখন আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। এই সম্মেলনেই ’গ্লোবাল সাউথ’ ধারণাটি মুখে মুখে ঘুরছে। ১৯৬০ এর দশকে আবিভুর্ত হওয়া শব্দটি অনেক দিন ধরেই শব্দটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গ্লোবাল সাউথে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ভারত,চীন ও উত্তর আফ্রিকার প্রায় অর্ধেক দেশ। তবে সবচেয়ে কার্যকরভাবে যা পেয়েছে এই সম্মেলন থেকে সেটি হলো ’ বিশ্ব জৈব জ্বালানি জোট’। বিশ্ব যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে সেখানে এই জোট আশার সঞ্চার করবে। ভারতে জি—২০ আসর থেকে শনিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু করল গ্লোবাল বায়োফুয়েলস অ্যালায়েন্স বা ‘বিশ্ব জৈব জ্বালানি জোট’। মোট ১৯টি দেশ এবং ১২টি বৈশ্বিক সংস্থা এই জোটে শামিল হয়েছে বলে জানা গেছে।হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং দূষণের জেরে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এই জোটের লক্ষ্য হবে জৈব জ্বালানি সরবরাহ এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে জৈব জ্বালানি খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে একে অপরকে সাহায্য করা। জৈব জ্বালানি জোটের মূল কারিগর ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল।

তাছাড়া আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ইতালি, মরিশাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিররাতসহ মোট ১৯টি দেশ আছে এই জোটে। কানাডা ও সিঙ্গাপুর এই জোটের পর্যবেক্ষক সদস্য। বাংলাদেশও এই জোটে যোগ দিয়েছে। কারণ জৈব জ্বালানীতে বাংলাদেশকে আগ্রসর হতে হবে্ ।মতবিরোধ, বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত বৈশি^ক সংকট দূর করতে এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ছিল। বিশ^ এখন নানা কারণে সংকটে রয়েছে। যুদ্ধ, অভিবাসী,জলবায়ু প্রভৃতি নানা কারণে পৃথিবী অশান্ত। যে পরিস্থিতি নিরসনে দায় রয়েছে বিশ^ নেতাদের। বিভিন্ন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভূরাজনীতি ক্রমেই অস্থিতিশীল এবং পরিবর্তন হচ্ছে। 

এককভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হওয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে মোড়ল দেশগুলো নিজেদের বলয় তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে গড়ে উঠছে শক্তিশালী বলয়। সেখান থেকেই নিজেদের কতৃত্ব খাটানোর চেষ্টায় নিজ নিজ প্রভাব খাটানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে বিভিন্ন সম্মেলনে যে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় তার খুব কমই বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়। এবারের জি—২০ সম্মেলনেও যে আশা নিয়ে শুরু হয়েছিল তা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। জি—২০ জোটে যে দেশগুলো আছে তারাই নেতৃত্ব দিয়ে অর্থনীতি সুসংহত করতে পারে। তবে উভয় সম্মেলনেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো জলবায়ু। বাস্তবিকপক্ষে বর্তমান বৈশি^ক রাজনীতিতে অভিন্ন মতাদর্শ প্রায় দুর্লভ একটি ধারণা। বিশেষ করে বর্তমানের অস্থির পরিস্থিতিতে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা এবং প্রভাব খাটিয়ে তুলনামূলক অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রাষ্ট্রকে আয়ত্ত্বে রাখার খেলা মূল অস্ত্র। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাধিক রাষ্ট্র একমত হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা নড়বড়ে হলে বিশ^ সংকটে পরতে পারে। সে অবস্থা কোনো দেশের জন্যই কাম্য নয়। জি—২০ ভুক্ত দেশগুলোর কাছে অর্থনীতি সুসংহত করতে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা অনেক। 

 লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট,পাবনা

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image