ফারজানা মৃদুলা
সোনালি দিনগুলো কাটছিলো বেশ। সিলেট সরকারী মহিলা কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ২০১৬ সালের আগস্টে মাস্টার্স শেষ করে নিজের স্বপ্নের দিকে ছুটছিল মনের ইচ্ছে গুলো। এর মাঝে নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ অহংকার মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করার দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে তসলিমা ফেরদৌস মনির জীবনে। ইস কত খুশি আরো খুশি যুক্ত হলো কন্যা সন্তানের জননী হবে শুনে।
অপেক্ষার পালা শেষ এলো ১ লা অক্টোবর সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়ে সিজারিয়ান এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলো মানষিক ভাবে । অতঃপর ফুটফুটে একটি গোলাপ যেন আভা ছড়ালো, তার কন্ঠে কান্না যেন জানান দিলো মা হয়েছি।
হঠাৎ শুরু হলো অপারেশন এর স্হানে প্রচুর রক্তক্ষরণ ! অতঃপর ২য় বারে অপারেশন টেবিলে কিন্তু কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছিল না রক্তক্ষরণ। আবারো এনেস্থিসিয়া দেওয়া হলো। আর তখনই তসলিমা ফেরদৌস মনি নামক মেয়েটির সকল স্বপ্ন নিমিষেই শেষ! কিডনি দুটো বিকল হয়ে শরীর ফুলে গেলো, চলে গেলো লাইফ সাপোর্টে।
এরপর কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ নাজমুল সাকিবের দৃঢ় মনোভাব আর আল্লাহর মেহেরবানিতে নিজেকে নতুন জীবনে আবিস্কার করতে ভারতে গিয়ে কিডনী ট্রান্সপার করে কন্যাকে নিয়ে সংসার শুরু। কি সুন্দর সেই ছোট সংসার ভালোবাসায় ভরপুর।
কেটে গেলো ৪ টি বছর । আবারো বিকল হয়ে গেলো কিডনি ।এখন তসলিমা আবারো মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২বার ডায়ালসিস এর জন্য যায় মাউন্ট এ্যাডোরা সিলেট।সেই কষ্টগুলো ছোট মেয়েটি খুব কাছ থেকে দেখে আর অঝরে চোখের পানি ফেলে।মেয়ের সেই চোখের পানি তার বাঁচার প্রবল ইচ্ছেকে আরও প্রবল করে তোলে। মনে আর্তনাদ করে বলে বাঁচতে চাই কটা দিন , কেননা মেয়ের মুখে মা ডাক শোনার সময়টা যেন তার কাছ থেকে চলে না যায়।
কিন্তু বাস্ততা অনেক কঠিন। অর্থের কাছে হেরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তসলিমার বেঁচে থাকার স্বাধ।
আমরা জানি মানবতা আজও বেঁচে আছে ।সেই মানবতার জয় হবে সর্বত্র ।সকলের সহায়তায় এই মানুষটা পারবে কি সন্তানের মা ডাক আরো কটা দিন শুনতে?
এদিকে কঠিন সময়ে খুব কাছের মানুষ গুলোকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখেছেন তসলিমা। তাই তার এখন আর খুব কষ্টেও চোখে জল আসে না ।
তবে এই তসলিমা একজন সাহসী মা,
সাহসী যোদ্ধা, যিনি কিনা
নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য
প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলছে।
মাঝে মাঝে মনে হয় এই ঘাতকব্যাধী ছোবল হয়ত কেড়েই নিবে। পরক্ষণেই মনে হয় মানবতার মশালের আলোর খানিকটা ছিটেফোঁটা যদি আসে দ্বারে তবে তার বেঁচে থাকার যুদ্ধের পথ মসৃন হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: