
হেলালুর রহমান জুয়েল, চাটমোহর (পাবনা) সংবাদদাতা: পানিশূন্য বড়াল এখন শুধুই হাহাকার। এককালের স্রোতসিনি বড়ালের বুকে এখন ধান চাষ হচ্ছে। দখল আর দূষণে বড়ালের অস্তিত্ব এখন বিলীন হতে চলেছে। বড়াল মরে যাওয়ায় দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল পানি সংকটে শুকিয়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তেমনি এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকাকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত।
পদ্মার প্রধান শাখা নদী বড়াল। আর বড়াল চলনবিলের প্রধান পানি সরবরাহকারী নদী। এর দৈর্ঘ্য ২শ’ ৪ কিলোমিটার। বড়াল রাজশাহীর চারঘাট থেকে চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মুশাখা, নারদ, নন্দকুজা, চিকনাইসহ বেশ কয়েকটি নদীর জন্ম দিয়ে পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলা হয়ে যমুনা নদীর সঙ্গে মিশেছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে এ নদীটি পাবনার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
উর্বরতায় সমৃদ্ধ বড়ালের দু’পাড়ে তখন প্রচুর ধান, চাল, মসুর, খেসারি, সরিষা, মাস কালাই চাষ হতো। বড়াল পাড়ের ফসল নৌপথে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় পাঠাতে চারঘাট, পুঠিয়া, বাগাতিপাড়া, দয়ারামপুর ক্যান্টনমেন্ট, বড়াইগ্রাম, বনপাড়া, রামনগর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর, মির্জাপুর, জোনাইল, বাঘা, ডেমড়া, সিলন্দাতে নদী বন্দর গড়ে ওঠে। আশির দশকের প্রথম দিকেও বড়াল দিয়ে বড় বড় নৌকা, বার্জ, কার্গোতে পণ্যসামগ্রী আনা নেয়া হতো। এখন নদীটি বলা চলে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে। বর্ষায় মাস দুই পানি থাকলেও সারা বছর বড়াল পানি শূন্য হয়ে পড়ে। আবার কোথাও কোথাও নদীর কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পাবনার চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর অংশের বেশিরভাগ এলাকা শুকিয়ে গেছে। বড়ালের বুকে ধান আবাদ হচ্ছে। পানি শূন্য হওয়ায় দু’পাড়ে নদী দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট। এ দখল প্রক্রিয়া এখনো চলছে। বড়াল নদী রক্ষা ও উদ্ধারে ২০০৮ সালে গড়ে ওঠে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি। এই কমিটির আন্দোলন আর কর্মসূচির কারণে অপসারণ করা হয় বড়ালের ক্রসবাঁধ। নির্মাণ কর হয় একাধিক ব্রিজ। বাংলাদেশ পেিবশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা)সহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠণ এই আন্দোলনে সমর্থন ও সহযোগিতা করে। কিন্তু বর্তমানে আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে বড়াল দখল আর দূষণে মেতে উঠেছে সুবিধাবাদীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ মমতাজ মহল বলেছেন,বড়ালের দখল ও দূষণের সাথে যারা জড়িত,তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দূষণরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: