
ফুলবাড়ী প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর কৃষকরা আমন মৌসুমে জমির ধান কাটতে শুরু করেছেন। এমন সময় পাকা ধানে পোকার হানায় দিশেহারা অবস্থা তাদের। আমন চাষাবাদের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে এমন পরিনতি এ যেন তীরে এসে তরী ডুবার মতই অবস্থা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা খেতের ধান কাটার আগেই ধানের শীষ লেদা পোকায় কেটে ফেলেছে। শেষ মুহূর্তে পোকায় ধানের শীষ কেটে ফেলায় চাষাবাদ করে লাভ তো দূরের কথা খরচের টাকা উঠবে না এমনটাই বলছেন অধিকাংশ কৃষক।
উপজেলা চন্দ্রখানা এলাকার কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, আমি সাত বিঘা জমিতে স্বর্ণ জাতের ধান চাষাবাদ করেছি। পোকার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে তিনবার কীটনাশক স্প্রে করেছি। এতদিন সব ঠিকঠাকই ছিল। খেতের ধান কাটারও সময় হয়েছে। কিন্তু ধান কাটতে গিয়ে দেখি লেদা পোকা ধানের শীষ কেটে সাবাড় করেছে। পোকায় যে ক্ষতি করেছে তাতে অর্ধেক ফলনও পাব না। এবার ধান আবাদ করে লোকসান হবে।
শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের রাসপ্রসাদ এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বকসি বলেন, আমি ৬ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছি। লেদা পোকার আক্রমণে ধানখেতের অধিকাংশ শীষের ধান জমিতে পড়ে আছে। ধান কাটার সময় পোকার আক্রমণের বিষয়টি বুঝতে পারি। এখন আর করার কিছুই নাই। খেতের ৩০ ভাগ ধানের ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ধান পাকার আগ মুহূর্তে জমিতে গিয়ে দেখি খেতের ধানের শীষ লেদা পোকায় কাটছে। অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি করে কামলা নিয়ে ধান কেটে জমিতে রেখেছি। এখন দেখি জমিতে কেটে রাখা ধানে আরও বেশি পোকা ধরেছে। শুধু আমারই নয় যারা ধান কেটে জমিতে শুকানোর জন্য রেখেছে প্রায় সবারই ধানের শীষ পোকায় কাটছে। কষ্ট করে আবাদ করে জমির ধান অর্ধেকই বাড়িতে আনা হলো না।
শাহবাজার এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম বকসি বলেন, আমার এক বিঘা জমির বেশিরভাগ ধানের শীষ পোকায় কেটেছে। ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে গেছি। কিন্তু শীষের অর্ধেক ধান জমিতে পড়ে আছে। এখন স্বামী-স্ত্রী মিলে জমিতে পড়ে থাকা ধান ঝাড়ু দিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। শুধু আমিনুল ইসলামই নয় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে তার মতো আরও অনেক কৃষককে পোকায় কেটে ফেলা ধান ঝাড়ু দিয়ে তুলতে দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলায় এবারে ১১ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কৃষকরা আমন চাষাবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ধানখেতে লেদা পোকা সহ অন্যান্য রোগবালাই দমনে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি, লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। ধানখেতে লেদা পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ার পরেও অনেক কৃষক জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেননি। তাদের ধানখেতে মূলত পোকার আক্রমণে ক্ষতি বেশি দেখা গেছে। আমরা বর্তমানে কৃষকদের পোকা আক্রান্ত খেতের ধান কেটে জমিতে না রেখে বাড়িতে আনার পরামর্শ দিচ্ছি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: