
নিউজ ডেস্ক : সিলেটের বিভিন্ন মোড়ে ও নগরের প্রবেশপথে সকাল থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী গাড়ি এমনকি বিআরটিসি বাস চলাচলেও বাধা দিচ্ছেন তারা। শ্রমিকদের পিকেটিংয়ের কারণে কোনো গাড়িই সড়কে চলাচল করতে পারছে না।
পাঁচ দফা দাবিতে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। চলতে দেয়া হচ্ছে না কোনো যানবাহনই। এতে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে সিলেট।
সকাল থেকে সিলেটের বিভিন্ন মোড়ে ও নগরের প্রবেশ পথে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী গাড়ি এমনকি বিআরটিসি বাস চলাচলেও বাধা দিচ্ছেন তারা। শ্রমিকদের পিকেটিংয়ের কারণে কোনো গাড়িই সড়কে চলাচল করতে পারছে না।
বন্ধ রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাও। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দূরপাল্লার যাত্রীদের পাশাপাশি নগরের ভেতরে চলাচলকারী যাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পরিবহন শ্রমিকদের ৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ’ সিলেট জেলায় এই কর্মবিরতির ডাক দেয়। দাবি পূরণ না হলে বুধবার থেকে পুরো বিভাগে কর্মবিরতি শুরুর হুমকি দিয়েছেন তারা।
কয়েক দিন ধরেই পাঁচ দফা দাবিতে নগরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো। দাবি পূরণ না হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা।
মঙ্গলবার সকালে বিআরটিসি বাসে করে হবিগঞ্জ থেকে সিলেট আসেন লায়েক আহমদ। নগরে প্রবেশের পূর্বেই দক্ষিণ সুরমার আব্দুস সামাদ আজাদ চত্বরে তাদের বাসটি আটকে দেন সেখানে অবস্থান নেয়া পরিবহন শ্রমিকরা।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে লায়েক বলেছেন, শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন এতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চলাচল করলে তারা বাধা দেবেন কেন? বাস থেকে নামার পর এক ঘণ্টা এখানে দাঁড়িয়ে আছি, নগরে যাওয়ার কোনো বাহন পাচ্ছি না।
সিলেটে ধর্মঘট, বন্ধ সব যান চলাচল ব্যাংক কর্মকর্তা সাইমুম হোসেন নিজের প্রাইভেট কার নিয়ে রাস্তায় নেমেও শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়েছেন। নগরের উপশহর এলাকায় তার গাড়ি আটকে দেন পরিবহন শ্রমিকরা।
সাইমুম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিকরা কর্মবিরতি ডেকেছেন, কিন্তু আমি তো আর পরিবহন শ্রমিক নই। আমি নিজের অফিস ও বাচ্চার স্কুলে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। তারা কেন আমার গাড়ি আটকাবে? এটা তো মাস্তানি।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ। তিনি বলেন, ‘সিলেটের বাইরের অনেক চালক কর্মবিরতির কথা জানেন না। না জেনেই তারা গাড়ি নিয়ে সিলেট চলে আসছেন। তাদের বুঝাতেই শ্রমিকরা কয়েকটি মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন।
তবে কাউকে জোরজবরদস্তি করা হচ্ছে না এবং ব্যক্তিগত গাড়িও আটকানো হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবি হলো:
১. ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি, রেকারিং বাণিজ্য ও মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা আদায় বন্ধ, মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার ও অতিরিক্ত উপকমিশনারকে প্রত্যাহার; ২. গাড়ি ফিটনেস মামলা সঠিকভাবে করা, সিলেট শ্রম আদালতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকে হয়রানি বন্ধ এবং আদালত থেকে শ্রমিক প্রতিনিধি নাজমুল আলম রোমেনকে প্রত্যাহার; ৩. হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ পাথর কোয়ারি খুলে দিতে হবে; ৪. সিলেটের সব ভাঙা সড়ক সংস্কার এবং ৫. সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিক্রি বন্ধ করতে হবে। অটোবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ডাম্পিং করা গাড়ি এবং অন্য জেলা থেকে আগত গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে।
এই শ্রমিক নেতার অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এসব দাবি জানিয়ে এলেও আশ্বাসের মধ্যেই তাদের বারবার আটকে রাখছে প্রশাসন। একটি দাবিও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি।
আজকের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বুধবার পুরো বিভাগে যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন।
সোমবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা ন্যায্য ৫টি দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে নানা টালবাহানা করা হচ্ছে। আমাদের একটি দাবিও আজ পর্যন্ত মানা হয়নি।
৮ সেপ্টেম্বর আমরা এই দাবিগুলো জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরে মানববন্ধন করেছি এবং গত সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। স্মারকলিপির অনুলিপি সিলেটের প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সব সেক্টরেও পাঠানো হয়েছে। এরপরও আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেয়ায় আমরা এ কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।
যান চলাচল বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবর রহমান জানান, পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মানুষকে জিম্মি করে এভাবে হুট করে কর্মবিরতি ডাকা অন্যায়।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: