• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

কিশোরগঞ্জের হাওড়ে কারি ভরেছে সোনার ধানে


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ০৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৪২ পিএম
কিশোরগঞ্জের হাওড়ে কারি ভরেছে
ধান

বিজয় কর রতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: 'ইবার বাম্পার ফলন অইছে, বালা ফসল পাইছি। কোন বান তুফান নাই, শান্তিমতো বৈশাখী তুলছি। মিঠামইন, ইটনাও অষ্টগ্রাম হাওরজুড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে প্রকৃতি এবার যেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। ফসলের বাম্পার ফলনে তৃপ্তির হাসিতে ভরে উঠেছে কৃষকের মুখ। প্রত্যাশার বেশি ফসল ওঠায় অনেক কৃষককে নতুন উগার বা গোলা তৈরি করতে হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে ছিল বলে ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই চলেছে মাড়াই ও শুকানোর কাজ। খড়ও সহজেই শুকিয়ে সংরক্ষণ করা গেছে। 

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার হাওর ও হাওরের বাইরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। এবার প্রত্যাশার চেয়ে ৬লক্ষ ২২ হাজার ৬৫০ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। 

মিঠামইন, ইটনাও অষ্টগ্রাম উপজেলার নদার হাওর, জোয়াইরা হাওর, বল্লির হাওর ও কাদাগুইরা হাওর খুনখনির হাওড়, ঝিওলের হাওড় সহ ছোট বড় অনেক হাওড় ঘুরে দেখা গেল ধান কাটা শেষ। মাঠে পড়ে আছে কাটা ধানের নাড়া। প্রতিটি অস্থায়ী খলায় শেষ মুহূর্তে ধান ও খড় শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষক। 

রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়ায় সহজেই শুকিয়ে যাচ্ছে ধান। এরপর তা বস্তায় ভরে গোলাজাত করা হচ্ছে। খড় শুকিয়ে আপাতত স্তপ বা লাছি করে হাওরের কান্দায় রেখে দিচ্ছেন কৃষক। খলা থেকে সব ধান বাড়ির গোলায় চলে গেলে ঐতিহ্য অনুযায়ী উৎসব করে লাছি করবেন তারা। এতে একে অন্যকে সহযোগিতা করবেন কৃষকরা। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হবে বিশেষ খানাপিনার। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফসল এবার ঘরে তুলেছেন হাওরের কৃষক। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফসল এবার ঘরে তুলেছেন হাওরের কৃষক। কথা হয় মিঠামইন উপজেলার চমকপুর গ্রামের রফিকুল মিয়ার সঙ্গে। কুমার দিগা  হাওরে তার বোরো ধানের জমি রয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই তার ধান কাটা শেষ। এই কৃষক বলেন, এবার ৪২ কেয়ার জমিন রইছলাম। মা বাবা আশা করছিলা ৫-৬শ মন ধান পাইমু। কিন্তু এমন ফলন পাইছি আরেকটা গোলা বানাইতে অইছে ধান তওয়ার জন্য। ১০০ মন ধান বেশি পাইছি ইবার। সব মিলাইয়া ৭০০ মন ধান পাইছি। ছোট-বড় সব কৃষক ইবার খুশি। ৫১ বছরের জীবনে এমন নির্বিঘ্ন বৈশাখ পাননি বলে জানান রফিকুল মিয়া। জোয়াইরা হাওরের ঘাগড়া গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল বললেন, এবার তার এত পরিমাণ ধান হয়েছে তা নিজের গোলায় আঁটছে না। অন্যান্য স্থানেও রাখতে হচ্ছে। ধান কাটা, মাড়াই, শুকানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ধান কাটা, মাড়াই, শুকানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। শরিফপুর গ্রামের কৃষক জামির হোসেন মাথায় লাল গামছা বেঁধে শেষ মাড়াইয়ের ধান খলায় শুকাচ্ছিলেন। রোদ ভালো থাকায় এক রোদেই শুকিয়ে ফেলছেন। 

তিনি বলেন, ইবার বাম্পার ফলন অইছে, বালা ফসল পাইছি। শ্রমিক, মেশিন, রইদ সবতা পুরা পাইছি। কোন বান তুফান নাই। তাই শান্তিমতো বৈশাখী তুলছি। প্রায় ৩০ শতক জমিতে বোরো চাষ করে ২৫ মণ ধান ঘরে তুলেছেন মহিষারকান্দি গ্রামের কিষানি আঁখি আক্তার। এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহেই সব ধান কাটা শেষ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'ইবার বৈশাখী উঠছে বালা। দোয়া করি এমন বৈশাখী যাতে বারবার আয়। বালা ধান পাইয়া আমরা হখলে খুশি। হোসেনপুর গ্রামের কৃষক মোশারফ মিয়া বলেন, 'ইবার ৫ কিয়ার জমিন করছিলাম। ১২৫ মন ধান পাইছি। ইলা ফসল ও বালা দিন বাক্কা দিন পাইছি না। গতবার ফসল মাইর গেছে। এর আগেরবার আউগ্না (জ্বলে গেছে) বাতাসে ধান জ্বলি গেছে। ইবার ইতা কুস্তা অইছে না, সবাই বালা ফসিল পাইছে।' এভাবেই কিষান-কিষানিরা হাওরে বাম্পার ফলন পেয়ে এবং প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধান পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। 

অনেকেই জানালেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধান বেশি পেয়ে তা রাখতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। নতুন করে গোলাও তৈরি করতে হয়েছে। 

কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আব্দুস ছাত্তার বলেন, এবার হাওরে আবাদ ও চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলন আরো বেশি হয়েছে। প্রায় ৬২২৬৫০মন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যদিও বিআর২৮-২৯ ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান বা খড়ের গুণাগুণ নষ্ট হয়নি জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এবারের রোদ ছিল কৃষকদের ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও খড় সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত। সে সুযোগ কাজে লাগিয়েই গোলা ভরেছেন স্থানীয় কৃষকরা।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image