• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নান্দাইলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতিতে প্রণোদনার দাবী কৃষক ও খামারীদের


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:২৪ পিএম
নান্দাইলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতিতে প্রণোদনার দাবী কৃষক ও খামারীদের
বন্যা

নান্দাইল ( ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের উপজেলা নান্দাইলে গত ৬ অক্টোবর একরাতের বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে ৫ হাজার হেক্টর আমন আবাদ সহ বিভিন্ন কৃষি জমি ও ৪৫০ হেক্টর মাছের খামার। ফলে নান্দাইল উপজেলায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ১৩৮ কোটির টাকারও উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অর্থ ও পরিশ্রম ব্যয় করে আমন আবাদ করেছিল কৃষকেরা। কিন্তু অতি বৃষ্টির পানিতে ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়া দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। বন্যার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও আমন আবাদ অনেকটাই পানির নিচে। এছাড়া যতটুকু ভেসে উঠেছে ততটুকু ধানগাছের পাতা-পাতায় শেওলা ও মাটির পিচ্ছিল খাদায় মরে যাওয়া অবস্থা। পাশাপাশি মৎস্য চাষকৃত ফিসারী, ডোবা ও পুকুরের পাড় ডুবে গিয়ে মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় হতাশায় ভোগছে মৎস্য চাষীরা। 

নান্দাইল উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার একই অবস্থা। একরাতের বৃষ্টিতে আকস্মিক এ বন্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা মৎস্য খামার ও বসতবাড়ি। যে যার মতো করে পুকুর তৈরী সহ নদী-নালা, খাল-বিলের পানির পথকে বাধাগ্রস্থ করে  সেখানে চালিয়ে যাচ্ছে মৎস্য চাষ। এতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অল্পবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি করে আকস্মিক বন্যার রুপ নেয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তুু প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ হাজার হেক্টর ফসলি ধান জমির মধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমি সম্পুর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এছাড়া আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে ৭ হাজার হেক্টর। অন্যান্য কৃষি আবাদ (সবজি,পান ও আখ) নিমজ্জিত হয়েছে ১৭৫ হেক্টর জমি। এতে কৃষি খাতে ১১৬ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।  অপরদিকে উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ৪৫০ হেক্টর ফিসারী পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৯শত মেট্টিক টন মাছ বের হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখিত হয়েছে মৎস্য চাষীরদের। ছোট-বড় ১০ হাজার ২২০জন মৎস্য খামারী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাগণ মাঠ পর্যায়ে স্ব-স্ব ইউনিয়নের মাঠকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও খামারীদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও মৎস্য চাষীরা সরকারের নিকট ভূর্তুকী তথা প্রণোদনার দাবী জানিয়েছেন। তবে মাছের ঘাটতি পূর্ণ হলেও উপজেলায় ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে মানুষের বাড়ি-ঘর সহ রাস্তা-ঘাটও পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের ভিতর বন্যার পানি ঢেউ খেলছে। পানি বন্দী জীবন যাবন করছে উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক মাটির রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিছিন্ন সহ জীবন-যাপনে দুর্ভোগের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে আচারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ও মৎস্যচাষী রফিকুল ইসলাম রেণু বলেন, চোখের সামনে ২৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেলো। কিছুই করতে পারলাম না। মৎস্য চাষী খলিুলর রহমান বলেন, আকস্মিক বন্যায় আমার ২০ একর পুকুরের কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। তবে এ এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাড়াবার জন্য আমি বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তা প্রার্থনা করছি।

এছাড়া মৎস্য চাষী আলী আমজাদ খান বলেন, ২৮ লাখ টাকার মাছ আগাম বিক্রি দেওয়া ছিল। এখন সাকুল্য টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, প্রকৃতির খেলার সাথে আমাদের কিছুই করার নেই। এদিকে আবার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। ধান না হলে আমরা খাব কি? তবে সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা জানান, নদী-নালা-খাল বিল ভরাট হয়ে যাওয়া বা পুন খনন না হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। ফলে বন্যার আকার ধারন করায় ফসলাদি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। তবে পানি নেমে গেলে পরবর্তী ফসল রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে পরামর্শ সহ সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাহনাজ নাজনীন জানান, ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষীদের তালিকা তৈরী হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগীতা করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image