• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

এ বছর শতকরা ৯৪ ভাগ বাল্যবিয়ে কমেছে


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:১৯ পিএম
এ বছর শতকরা  ৯৪ ভাগ বাল্যবিয়ে কমেছে
জাতীয় প্রেসক্লাবে "মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন" সংবাদ সম্মেলনে

জহিরুল ইসলাম সানি:

বাল্যবিয়ের হার ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এসে ৯৪ শতাংশ কমেছে। ২০২১ এ দেশের ২৩টি জেলায় ৪১০৯৫ টি বাল্যবিয়ের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২ সালে বাল্যবিয়ের সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ২৩০১টি। করোনার সময় অর্থাৎ ২০২০/২১ সালে স্কুল বন্ধ থাকায় ও অভাব-অনটনের কারণে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেলেও ২০২২ সালে এসে তা অনেক কমে গেছে।

২০২১ এর তুলনায়  ২০২২ সালে শিশু ধর্ষণের হার কমেছে ৩১.৫ শতাংশ। ২০২২ এর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৫৬০ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ৯১ জন শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছে ১২ জন মেয়ে শিশু। ২০২১ সালে শিশু ধর্ষণের এই সংখ্যা ছিল ৮১৮ জন।

সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে অধিকাংশ শিশু ধর্ষণ পারিবারিক পরিবেশে ও পরিচিতদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। একইভাবে পারিবারিক কারণেই বাল্যবিয়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারের পরিচিত লোকদের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছাড়াও, প্রতিবেশীদের হাতেও শিশুদের একটি বড় অংশ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে শিশুর সর্বনিম্ন বয়স দুই বছর। ৩/৪ বছর থেকে ১২ বছর পর্যন্ত শিশুরা অধিকারে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বেশিরভাগ শিশুকে খেলার সময় লোভ দেখিয়ে পরিচিতরা ধর্ষণ করছে। মূলত কম বয়সি শিশুরাই ধর্ষণের শিকার বেশি হচ্ছে। কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বন্ধুদের দ্বারা, কর্মক্ষেত্রে, স্কুল যাওয়ার পথে ও পরিবারের ভেতরে।

২০২২ সালে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে যেখানে পানিতে ডুবে ৪০৫ জন শিশু মারা গিয়েছিল, ২০২২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১৫২ জন। এরমধ্যে ৫২০ জন মেয়ে-শিশু ও ৬৩২ জন ছেলে-শিশু।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের "মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন" (এমজেএফ) 'বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২২: সংবাদপত্রের পাতা থেকে' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুর সংখ্যা ২০২১ এর তুলনায় ২০২২ সালে কমে গেছেও, এই বছর ছেলে-শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার হার বেড়েছে। ২০২২ সালে মোট ৯৬টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ছেলে-শিশুর সংখ্যা ২০ জন, যা ২০২১ সালে ছিল ৬ জন।

বিভিন্ন কারণে রিপোর্ট-কালীন সময়ে আত্মহত্যা করেছে ৪৪ জন শিশু, যা ২০২১ এর তুলনায় কম। এরমধ্যে ২৭ জন মেয়ে ও ১৩ জন ছেলে। ২০২১ সালে আত্মহত্যা করা শিশুর সংখ্যা ছিল বেশি অর্থাৎ ৭৮ জন। এর মধ্যে ছেলে-শিশু ৫৭ জন ও মেয়ে শিশু ২১ জন।

মূলত পরীক্ষায় ফল-বিপর্যয়, পরিবারের উপর রাগ, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, উত্যপ্ত হওয়ার, ধর্ষণের শিকার হওয়ায় বা ধর্ষণ চেষ্টা করায়, ধর্ষণের বা শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়ায় এবং সাইবার ক্রাইম বা ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

২০২২ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে শিশু-মৃত্যুর হার বেড়েছে। গত বছর ৩১১ জন শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ৪২জন শিশুকে। ২০২১ সালে হরতাল শিকার হয়েছিল ১৮৩ জন শিশু।

ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিয়ে আলাদাভাবে আদেও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালে মোট ১১ টি এ সংগত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ১৫ জন এবং সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। ১৫ জন গৃহকর্মী ধর্ষণ সহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জন নিহত, ৭ জন আহত ও ৩ জন আত্মহত্যা করেছে। নিহত গৃহকর্মীদের মধ্যে ৩ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ২ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া সংগঠনটির প্রতিবেদনে,  সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২১ ৬৯ টি শিশু নিহত হলেও ২০২২ সালে এসে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৯৬ টি। ২০২২ সালে মোট নিখোঁজ শিশুর সংখ্যা ২০ জন। এর মধ্যে মেয়ে-শিশু ৬ জন ও ছেলে-শিশু ৭ জন।

২০২২ সালে যে ৩৫টি শিশু অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত, এদের মধ্যে ৬ জন মেয়ে-শিশুও আছে। তবে ২০২১ সালে অপরাধের সাথে জড়িত ছিল ১২০ জন, সবাই ছিল ছেলে-শিশু।

২০২২ সালে অপরানের শিকার হয়েছে ৩০ জন শিশু। অপহরণের কারণ হিসেবে টাকা, প্রেম, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধ গ্রহণ, পাচারও মুক্তিবান দাবীর কথা সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।

শিশু নির্যাতনের ৬৬ টি  ঘটনার মাধ্যমে ৬৮ জন শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১ সালে শিশু নির্যাতনের ১৬ টি ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনকারী হিসেবে গৃহকর্তা, বাবা-মা, শিক্ষক, উত্ত্যক্তকারী, স্থানীয় চেয়ারম্যান, চাকুরীদাতা, প্রতিবেশী এবং সৎ মা।

শিশুকে নিয়ে ২৬ টি বিষয়ের উপর নেতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে ২০২৮টি। অন্যদিকে ইতিবাচক সংবাদ ছাপা হয়েছে ১২টি বিষয়ের উপর ৬৭টি।

এমজেএফে'র নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম বলেন, এমজেএফে'র বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিশুরা নিজের বাসায় নিরাপদ নয়। শিশু ধর্ষণ ও শিশুকে যৌন হয়রানি বন্ধ করার জন্য সবাইকে এখনই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, নতুবা এই হার বাড়তেই থাকবে। শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সকলকে আরো বেশি সহৃদয়বান হওয়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় 'এমজেএফে'র  নির্বাহী পরিচালক শাহিন আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরমান খান (সহকারী পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর), রোকসানা বেগম (ব্রেকিং ডাল লাইসেন্স) এবং অধ্যাপক ড শাহনাজ হুদা (চেয়ারপারসন আইন অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)। 'বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২২' এর সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করেন এমজেএফ'র কো-অর্ডিনেটর রেফেজা শাহীন।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image