• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৫ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

প্রকৃতিতে দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ১৪ ফেরুয়ারী, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৩৯ পিএম
প্রকৃতিতে দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া 
বসন্ত মানে পূর্ণতা

মো.জহিরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার  : আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী পহেলা ফাগুন ও  ভালোবাসা দিবস একই দিনেই পালিত হচ্ছে। প্রিয়জনের স্পর্শ পাওয়ার আকুলতা বসন্তে যেন ধরা দেয় ভিন্ন রূপে। প্রকৃতির রং লাগে মানুষের মনেও। ফাগুনের রক্ত রাঙা দিনে বসন্ত বাতাসে মিশে থাকে ভালোবাসা। তাইতো ফাগুন বন্দনায় মুখর প্রকৃতিপ্রেমীরা।
 
দেশব্যাপী চলবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করবে উৎসব ।  

পহেলা ফাল্গুন ও পৃথিবীময় ভালোবাসা দিবস। এ দুই উৎসবকে আমেজ। ঋতুরাজ বসন্ত এলেই বাঙালি সংস্কৃতি মেতে ওঠে ভিন্ন আঙ্গিকে। বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। তাই তো প্রকৃতি নিজের রূপে সাজে। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পরিবর্তন আনায় পহেলা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবস একদিনেই উদযাপন করছে উৎসবপ্রিয় বাঙালি।

কী নেই বসন্তের! আছে রং, রূপ, রস ও লাবণ্য। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ। ঋতুরাজের আগমনে খুলে গেছে দখিনা দুয়ার। মানব-মানবীর চিরন্তন ভালোবাসা উড়ছে রঙিন প্রজাপতি হয়ে। ফুলে ফুলে আছে মৌমাছির গুঞ্জন। নতুন প্রাণের পত্রপল্লবে জেগে উঠেছে বৃক্ষ-লতা-গুল্ম। নদীর কিনার থেকে আদিগিন্ত প্রান্তর, কুঞ্জবন, অরণ্য-পর্বতে ডেকেছে নবযৌবনের বান। প্রকৃতির এই রূপতরঙ্গ দেখেই কবিগুরু লিখেছিলেন- ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’

প্রকৃতিতে বসন্ত আর ভালোবাসা যেন একে অন্যের পরিপূরক। পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবের রঙে মেতে ওঠে তরুণ হৃদয়, নতুন করে প্রাণ পায় প্রবীণরা। বসন্তে শুধু প্রকৃতিই নয়, হৃদয়ও রঙিন হয়ে ওঠে। তাই তো বসন্ত আমাদের কাছে ‘প্রেমের ঋতু’।

কোকিলের কুহুতানে জাগা মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে হবে ভালোবাসার জয়গান। হৃদয় থেকে হৃদয়ের কথাগুলো আজ ভাষা পাবে। প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কিংবা প্রেমিকা তার প্রেমিককে আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটি প্রকাশ করবে ‘হ্যাপি ভ্যালেনটাইন্স ডে’ উচ্চারণ করে।

১৪ ফেব্রুয়ারি কেন ভালোবাসা দিবস? শোনা যায় প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। সে সময়ে জুনোকে মনে করা হতো নারী ও প্রেমের দেবী। তাই ভালোবাসার দিবসটি ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। এ ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে। ২০০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস সেদেশে যুবকদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ করেন। সম্রাটের ভাবনা ছিল, যুবকরা বিয়ে করলে যুদ্ধে যাবে কে? কিন্তু এই নিয়মের বিরোধিতা করেন এক সাহসী রোমান যুবক, নাম তার ভ্যালেন্টাইন। সে সময়ে সম্রাটের ঘোষণার বিরোধিতা মানেই মৃত্যুদণ্ড। কোনো এক ১৪ ফেব্রুয়ারিতে শাস্তিস্বরূপ ভ্যালেন্টাইনের মাথা কেটে নেওয়া হয়। মনে করা হয়, এই ভ্যালেন্টাইনের নামেই আজকের ভালোবাসা দিবস।

পহেলা ফাগুন / বসন্ত এই উৎসবটির একটি ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে ১৫৮৫ সালে মোগল সম্রাট আকবর ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘বসন্ত উৎসব’।

তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।আবাল-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী বসন্ত উম্মাদনায় আজকে মেতে উঠবে এবং প্রিয়জনের সাথে ভালোবাসার আলাপনে কাটবে সময়।  ফাগুনে হাওয়া তরুণীদে মাথার খোপায় বাধঁবে লাল গোলাপ ফুল।  

১লা ফাল্গুন বা বসন্ত এলেই বাঙালির মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই পরিচিত গান 'আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়....।' এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীরগতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।

প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার আনন্দে ভেসে থাকতে চান তারা। আর তাদের রাঙাতেই যেন প্রকৃতিতে ফুটে অপরূপ সব ফুল। জুঁই, বকুল, মাধবীলতা, মধুমঞ্জরি, পলাশ, মাধুরীলতা, কাঠচাঁপা, করবী, কনকলতা, মুচুকুন্দ, কনকচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা, নাগকেশর, দেবকাঞ্চন, পলাশ, শিমুল, পারিজাত, পানিয়া মাদার, টগর, ভাঁটিফুলসহ আরও নানা ফুল হাজির হয় স্বাগত জানাতে।

ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।

গাছে গাছে ছড়িয়ে পড়বে পলাশ আর শিমুলের মেলা। প্রকৃতি সাজবে নতুনরূপে। শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। মৃদু-মন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে

বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যিই সে ঋতু রাজ বসন্ত। 'ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত' কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের। অমীয় বাণীটি। বাণীটি ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানায়। ফুল ফোটার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে কাননে-কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক।
বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার আর ভালোবাসা দিবস মানে প্রিয় জনের হাত ধরে আড্ডাবাজি বন্ধুদের সাথে। 

ফাগুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ-তরুণীদের  হৃদয়েও লাগবে বসন্তের ও ভালোবাসা দিবসের  দোলা। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি।

প্রকৃতির মতোই শিল্প-সাহিত্য এমনকি রাজনীতিতেও বসন্ত বাঙালি জীবনে তৎপর্যময়। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল একাত্তরে। বসন্তেই বাঙ্গালির মুক্তিযোদ্ধের শুরু। বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' ও 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'।

বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে 'পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব' হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবের মাঝে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এই উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে  বসন্ত উৎসব। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে 'বসন্ত উৎসব' উদযাপন শুরু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। আজ ১লা ফাগুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস  উপলক্ষে  রাজধানীসহ সারা দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে । দিনভর চলবে তরুণ-তরুণীদের বসন্তের উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। মোবাইল ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে একে অপরের বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময় ও ভালোবাসার মানুষে হাত হাঁটবে  কোথায়ও ।

সাংস্কৃতিকর্মী ও শিক্ষিকা কবিতা রানী দাশ  বলেন, বসন্ত আসলে আমার স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে যায়।  আমরা কাজের জন্য বছরের প্রতিটি দিন থাকি কর্ম ব্যস্ততা নিয়ে, পহেলা বসন্ত।  আমরা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পহেলা বসন্ত পালন করি। বসন্ত  আসলে আমাদের মনে করে দেয় আমাদের গ্রাম বাংলার উৎসব গুলো কথা। এইসব  উৎসব গুলি  আমাদের ঐতিহ্য কৃষ্টি বহন করে। আমরা বেশির ভাগই বাঙ্গালী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটা কম পালন করি।  স্কুল কলেজ গুলিতে পহেলা ফাগুনের গুরুত্বটা বেশি থাকে।  

বসন্তের প্রথম দিনেই অসংখ্য রমণী বাসন্তী রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে। আজ  সুশোভিত করে তোলে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, বইমেলা এবং  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চতুরসহ পুরো নগরী। পুরো দেশেই চলবে উৎসবের আমেজ। এ পূর্ণতার বসন্তের দোলা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সব বাঙালির ঘরে ঘরে। তবে বাস্তবতার পাথরচাপা হৃদয়ে সবুজ বিবর্ণ হওয়া চোখে প্রকৃতি দেখার সুযোগ পান না নগরবাসী। কোকিলের ডাক, রঙিন কৃষ্ণ চূড়া আর আমের মুকুলের কথা বইয়ের পাতায় পড়ে থাকলেও একালের তরুণ-তরুণীরা কিন্তু বসে থাকতে রাজি নন। গায়ে হলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি জড়িয়ে তরুণী ও পাঞ্জাবি পরা তরুণরাও এদিন নিজেদের রঙিন সাজে সাজাতে কম যান না। বসন্ত তারুণ্যেরই ঋতু, তাই সোনার বাংলার প্রতিটি ঘর আজ বসন্তের দিনের তারুণ্যমাখা রুপে সেজেছে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image