
মশিউর রহমান সেলিম, কুমিল্লা: কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের প্রসিদ্ধ বানিজ্যিক নগরীখ্যাত লাকসামের মোকাম থেকে বর্তমানে ধান যেন উধাও। চলমান অদৃশ্য ভাইরাস করোনার প্রভাব, আমন মৌসুম এবং চলমান আউশ থেকেই এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ধান কিনে গুদামে মজুত করে রেখেছে স্থানীয় মিলার ও ধান-চাল সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
ফলে স্থানীয় বাজারে ধানের সংকট তৈরী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, করোনার প্রভাব, ক্ষরা, পরিবহন সংকট ও চলমান অর্থনৈতিক মন্দাকে পূজি করে চালের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে নানাহ সেন্টিকেট গড়ে উঠেছে। অবস্থা দৃষ্টে বুঝা যাচ্ছে দরিদ্রদের বোবা কান্না দেখার মতো কেউ নেই। জেলা দক্ষিনাঞ্চলের হাটবাজার জুড়ে ধান-চালের অবৈধ মজুদ রোধে মাঠে নামেনি জেলা-উপজেলা মনিটরিং টিম।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চ মাসের শুরুতেই করোনার অজুহাতে ওইসব ব্যবসায়ীরা নানা সুযোগে মজুতকৃত ধানকে চাল বানিয়ে বাজারে ছাড়ছেন। এর প্রভাবে এখন অস্থির হয়ে পড়েছে চালের বাজার। গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা প্রতি প্রত্যেক চালের দাম বেড়েছে গড়ে ২শ৫০ থেকে ৩’শ টাকা। এ মোকামের আওতায় উপজেলা খাদ্য বিভাগের সূত্র মতে ২৮টি বড় ধরনের অটো চাউলের মিল ও বেসরকারি ভাবে সরকারী নিবন্ধন বিহীন অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র চাতাল কল রয়েছে।
চালের বাজার দর ঠিক রাখতে মিলার ও আড়তদারদের সহযোগিতারন বিকল্প নেই। তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীর বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখছেন কেউ কেউ বর্তমান বাজারে স্বর্ণাপাড়ি প্রতি বস্তা চিকন চাল ২৩৫০ টাকা, আটাইশ জাতের চাল লোকাল ২৪৫০ ও বাহিরের থেকে আমদানী করা ২৪৫০, নুরজাহান ব্যান্ডের চাল ২১৫০-২৩৫০, মোটা ২০৫০-২২০০, মিনিকেট আমদানীকৃত চাল ২৮০০ লোকাল ২৫৫০ ও স্থানীয় মোটা ২১০০/২২৫০ এছাড়া প্রিমিয়ার, এফএম, সংঙ্খ, তাজমহল, জোহুরা, ময়ুর, টিয়া, পাইজাম,মই, দোয়েল, পিকে, রাজহাঁস ও কবুতরসহ প্রায় শতাধিক ব্যান্ডের স্থানীয় ও আমদানীকৃত চাউল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০/২৬০০টাকায়।
এছাড়া প্লাষ্টিক বস্তা সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ হলেও হাটবাজার গুলোতে প্রকাশ্যে দেখা যায়। ওইসব ব্যবসায়ীদের খুচরা ও পাইকারী চাল বিক্রিতে ২/৩ রকমের ক্যাশ মেমো থাকে এবং বাৎসরিক সরকারী আয়কর ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তাদের পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে কারো কারো ৬/৭টি চাউল মজুদের গুদাম রয়েছে। গোপনে তদন্ত চালালে বুঝা যাবে কত লাখ বস্তা চাল এই এলাকায় রয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, আসন্ন ইরি-বোরো ও আউশ ধান মৌসুমে নতুন ধান চাল না আসা পর্যন্ত চালের বাজার আরও বাড়বে বলে শংকায় স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় দৌলতগঞ্জ বাজারের চালের আড়তদার ব্যবসায়ীরা বলেন প্রতি বছর এ সময়ে চালের বাজার কিছুটা বাড়তি থাকে তবে নতুন ধান বাজারে আসলে চালের দামও ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে আসবে।
সরকারী ভাবে খাদ্যবান্ধব নানাহ কর্মসূচী ভিজিডি সহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে চাল বিতরণও বর্তমান চালের বাজারের উর্দ্বগতি ঠেকাতে পারছে না। বিশেষ করে এ অঞ্চলে ১০ টাকা কেজি চাউলের ডিলারদের নানা অনিয়মের কারনে এ প্রকল্পটি আজ প্রশ্নবিদ্ব।
দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, সিলেট, ময়মনসিংহ ও নেত্রকনাসহ বহু মোকাম থেকে নানাহ ধরণের চাল আমদানী করা হচেছ। এছাড়া এ বাজারে চাউলের বাজারদর নিয়ন্ত্রনে ৮/১০টি আড়ৎদার কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এব্যাপারে স্থানীয় বাজারের একাধিক চাউলের আড়ৎদারদের কাছে জানতে চাইলে এব্যাপারে কোন ব্যক্তিগত জবাব দিতে রাজি নহে । যাহা কিছু বলার সমিতির মাধ্যমে বক্তব্য নিতে হবে। তবে খুচরা ব্যবসায়িরা জানায়, এ অঞ্চলে চাউলের বড় ধরণের কোন আড়ৎদার কিংবা সেন্টিকেট বলতে কোন কিছু জানা নেই। এখানে চাউল ব্যবসায়ীরা সাধারণত স্থানীয় রাইস মিল গুলো থেকে এবং বাহিরের কিছু কিছু মোকাম থেকে নানাহ ধরণের চাউল সরবরাহ করে বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: