বিনোদন প্রতিবেদক: প্রগতিশীল রাজনীতিতে সচেতন থেকে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সমুন্নত রেখে সৃজন ও সংগ্রামে অতিক্রম করেছেন সারাটি জীবন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) জীবনের ৭০ বছর পূর্ণ করলেন এই সংগঠক।
এ ব্যক্তিত্বের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ‘গানে গানে প্রদীপ্ত সোনালী পিদিম, ইতিহাসে কথা কয় মাহমুদ সেলিম’ শীর্ষক এক আনন্দ সম্মিলনের আয়োজন করেছে মাহমুদ সেলিম জন্মবার্ষিকী উদযাপন পর্ষদ। এ পর্ষদে রয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ, বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ, পৌষমেলা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
ড্যান্স একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় ‘ওই মহামানব আসে’ গানের সঙ্গে নৃত্যের মধ্য দিয়ে আয়োজনের শুরু। এরপর সুকান্ত ভট্টাচার্যর ‘রানার’ কবিতার বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর বাচিক শিল্পীরা। এরপর মাহমুদ সেলিম রচিত ‘এই মাঠে আর কারখানাতে’ ও পছন্দের ‘ধিতাং ধিতাং বলে’ দুটি সম্মেলক গান গেয়ে শোনান উদীচীর শিল্পীরা। এরপর মাহমুদ সেলিমের জীবন, কর্ম ও সৃজনের সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এরপর মাহমুদ সেলিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করে গানবাংলা টেলিভিশন।
অনুষ্ঠানে মাহমুদ সেলিমকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, তার হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় ও পুষ্পস্তবক তুলে দেন গানবাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেন তাপস। এরপর বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে মাহমুদ সেলিমের করকমলে জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছাস্বরুপ পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
শুভেচ্ছা পর্ব শেষে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করেন শিশু সাহিত্যিক আকতার হুসেন, সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও পৌষমেলা উদযাপন পরিষদের সংগঠক গোলাম কুদ্দুস, নবান্নোৎসব উদযাপন পরিষদের নাইম হাসান, বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রকৌশলী মো. শফিউদ্দিন, সুরকার ও শিল্পী সেলিম রেজা, গানবাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেন তাপস, মাহমুদ সেলিমের জীবনসঙ্গী নুরুন্নাহার রেণু, মাহমুদ সেলিমের মেঝো ভাই ও সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ও সেঝো ভাই ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বরেণ্য শিল্পী আজিজুর রহমান তুহিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, হাবিবুল আলম ও মাইমুনা নাসরিন ঐশি। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় ও বেলায়েত হোসেন।
বক্তারা বলেন, মাহমুদ সেলিম ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর সমগ্র দেশ যখন স্তম্ভিত, তখন তিনি ‘ইতিহাস কথা কও’ গীতিআলেখ্য রচনা করে ১৯৭৬-এর ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম মঞ্চায়ন করেন। এর মাধ্যমে কঠিন সামরিক শাসনের মধ্যেও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ তার অবদান প্রকাশ্যে তুলে ধরে জাতির প্রাণে সাহসের সঞ্চার করেন এবং জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পুনরুজ্জীবিত করেন। এটি উদীচীর শত শত শাখার মাধ্যমে সারা দেশে বহু সহস্র বার মঞ্চায়িত হয়।
বক্তারা আরো বলেন, আশৈশব সঙ্গীত শিল্পী মাহমুদ সেলিম বেতার টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ও শ্রেণী সংগ্রামের স্বপক্ষে সচেতনতা তৈরিতে বহু গণসঙ্গীত ও গীতিনৃত্য আলেখ্য রচনা ও সুরারোপ করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: