
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: একসময়ের ঐতিহ্য বাহি সাপের খেলা কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও ৭৫ বছর বয়সে সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন হবিবুর রহমান। তিনি কথা আর গানের ছন্দে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের খেলা দেখিয়ে ওষুধ বিক্রি করেন। তিনি জানান এখন আর এ পেশায় সংসার চালাতে পারছেন না। এ হাবিবুর রহমানের বাড়ী গাইবান্ধা জেলায়। এখন তিনি দিনাজপুরে বসবাস করেন। সাত সন্তানের পিতা তিনি। কথা হয় সোমবার, ২১ জুন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা খোচাবাড়ী বাজারে সাপের খেলা দেখানোর সময় কথা হয় হবিবুরের সাথে।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় এক সাপুড়ের সাপের খেলা দেখতে দেখতে তাঁর ভালো লেগে যায়। সিদ্ধান্ত নেন এ খেলা শেখার। খেলা শেষে ওই সাপুড়ে আকবর আলীকে নিজের ইচ্ছার কথা জানান। এরপর শুরু হয় তালিম। গুরুর সঙ্গে তিনি গাইবান্ধা শহরসহ বিভিন্ন জেলায় যেতেন বিষধর সাপ ধরতে। ধীরে ধীরে সাপ ধরা ও বিষ নামানোর কৌশল রপ্ত করেন। এরপর শেখেন খেলা দেখানো। প্রায় ৫০ বছর ধরে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
আর এবিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সামাজিক সংগঠন সৃজনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সাপখেলা এই অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্য হলেও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী সাপুড়ে শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।খেলা দেখানোর সময় হবিবুর আরো বলেন, একজন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় সাপের খেলা দেখান।
এতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়। এভাবে বাক্স থেকে সাপ বের করলেন, ভয় লাগল না? এমন প্রশ্নে যেন হতবাক হবিবুর। বিস্ময় নিয়ে বললেন, ভয় কীসের? সাপরে তো রশির মতো মনে হয় আমার কাছে। তিনি বলেন, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় তিনি কিছু ওষুধ ও গাছ ব্যবহার করেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর চিকিৎসায় সাপে কাটা রোগী সুস্থ হয়ে যায়।
এ ছাড়া তিনি যাদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছেন তাঁরা অনেকেই দূর দুরন্ত থেকে তাঁর কাছে রোগী পাঠান।আর এক সময় আয়ের প্রধান উৎস গাছগাছালির তাবিজ বিক্রি, সাপ ধরা ও সাপের খেলা দেখানো হলেও এখন মানুষ তাবিজ কিংবা সাপের খেলা দেখতে তেমন আগ্রহী না বলে জানান হাবিবুর। তাই আয়-উপার্জনও কম। তাই এ পেশা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাই। এ জন্য সরকারিভাবে স্বল্প সুদে ঋণ পেলে ভালো হতো বলে জানান তিনি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / গৌতম চন্দ্র বর্মন/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: