নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে প্রভাব বিস্তার, পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়াসহ নানা অভিযোগে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (০৮ মে) সকালে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বেড়েছে।
এ উপজেলা নির্বাচনে ৩ পদের ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আনারস মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদ ও কাপ পিরিচ মার্কার আলতাফ হোসেন বিপ্লব স্পটলাইটে আছেন।
সকাল থেকে বেশ কিছু কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে ভোটাররা অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এজেন্ট ঢাকা নিউজ ২৪কে বলেন, কিছু লোক লাঠি নিয়ে এসে আমাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। আমাদের মারতে চেয়েছে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে।
নির্বাচন কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মনির হোসেন ঢাকা নিউজ ২৪কে বলেন, সকাল থেকে সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন চলছে। কিন্তু বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত কোন কেন্দ্রে ২৭টি কোনটিতে ৩৪টি কোন কেন্দ্রে ১০০টি কোন কেন্দ্রে ২০০টি বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। দিন বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বাড়বে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, আমি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকা হওয়ায় দক্ষিনে আমার প্রভাবটা একটু কম। স্নায়ুচাপ, অভ্যন্তরীণ ও লোকাল চাপের কারণে নির্বাচনে পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে বেশিরভাগই ইউনিয়নে পোলিং এজেন্ট দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু এখন নাই। আমরা পোলিং এজেন্ট দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দুই থানার ১২ ইউনিয়নে ২২৫ ভোটকেন্দ্রে ৬ লাখের বেশি ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেবেন। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচিত হবেন আগামীর কেরানীগঞ্জ উপজেলার কাণ্ডারি।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ উপজেলায় নির্বাচনের বাইরে উৎসবমুখর পরিবেশ হলেও ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি নেই। আর বুথগুলোতে শুধু একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর এজেন্ট রয়েছেন।
কেরানীগঞ্জের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে সকালে দেখা গেছে, সব বুথে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদের এজেন্টদের উপস্থিতি। তিনবারের নির্বাচিত এই উপজেলা চেয়ারম্যান আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব লড়ছেন কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে। কাপ-পিরিচের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, গোলজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইকুরিয়া মুসলিম নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বনগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুভাঢ্যা উচ্চ বিদ্যালয়, চুনকুটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ৬৬নং নয়াশুভাঢ্যা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুব কম থাকলেও দেখা গেছিল শুধু চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহীন আহমেদের লোকজন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের কোনো বুথেই আলতাফ হোসেন বিপ্লবের পক্ষের কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি। একটি বুথে আনারসের এজেন্ট মো. বাবুল দাবি করেন, কাপ-পিরিচের এজেন্টর জন্য চেয়ার খালি রেখেছেন।
চুনকুটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের (কেন্দ্র নম্বর ১৮৮) প্রিসাইডিং অফিসার নুরুল জানান, তাঁর ভোটকেন্দ্রের সাতটি বুথে আনারস প্রতীকের এজেন্ট রয়েছে। কাপ-পিরিচের কোনো এজেন্ট তিনি দেখেননি।
কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব অভিযোগ করেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ও জিঞ্জিরার একাংশের ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভেতরে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহীন চেয়ারম্যানের লোকজন এসব করছে বলে তিনি অভিযোগ তোলেন।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী (তালা প্রতীক) কেরানীগঞ্জ মডেল থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মনির হোসেনও তাঁর এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার এজেন্টদের কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের বাইরে থেকেই এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, নির্বাচন ঘিরে দুই প্যানেলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন।
অন্যদিকে, ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এর সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহীন আহমেদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সালাউদ্দিন লিটন (মাইক), রেশমা জামান (কলস)।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন/জেডএস
আপনার মতামত লিখুন: