• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, গান নিয়ে এলেন শিল্পী শাহনাজ স্বীকৃতি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:২০ এএম
"গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি" গান নিয়ে এলেন শাহনাজ স্বীকৃতি
কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ স্বীকৃতি

জাকির হোসেন আজাদী: দেশের প্রতিষ্ঠিত প্রতিশ্রুতিশীল কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ স্বীকৃতি তাঁর ব‍্যতিক্রমী গায়কীর মাধ্যমে দর্শক শ্রোতাদের মন জয় করে চলেছেন অহর্নিশ। তিনি একাধারে বেতার,  টেলিভিশন,  স্টেজ শো,  অডিও এ‍্যালবাম প্রকাশ ও ইউটিউবে নতুন গান মুক্তি থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের গানেও প্লেব‍্যাক করছেন। বতর্মানে তিনি বর্ষাকে কেন্দ্র করে "গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি' নিয়ে একটি মিষ্টি মধুর গান প্রকাশ করতে যাচ্ছেন।

সে বিষয়ে আলোচিত এই শিল্পীর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়। যেখানে তিনি তাঁর সঙ্গীত জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি" একটি মিষ্টি মধুর গান।  গানটির ভিডিও নির্মাণ করেছেন,"ক্যাপ্টেন গানবাজার" নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আশা করছি,দর্শকদের গানটি ভালো লাগবে।গানটি লিখেছেন,"আনোয়ার হোসেন" সুর করেছেন, "মোঃ ইসহাক।" গানটিতে সংগীত দিয়েছেন,"উজ্জ্বল সিনহা।" গানটি শিগগিরই মুক্তি পাবে,"ক্যাপ্টেন গানবাজার" ইউটিউব চ্যানেল থেকে।

তিনি তাঁর গানের ভূবনে আসা প্রসঙ্গে বলেন, "পারিবারিক ভাবেই গানের পরিবেশ পেয়েছিলাম। ছোট থেকেই দেখেছি মা ও বড় ভাই বোনদের গাইতে।সেখান থেকেই গানের প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা জন্মায়। খুব ছোট্ট আমি তখন থেকেই পাড়া বা ক্লাবের অনুষ্ঠানে গাইতাম, এবং স্কুলে ভর্তি  হবার পর  স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। এ ভাবেই আমার ধীরে ধীরে গানে ভূবণে আসা এবং এক সময় তা পেশা হিসেবে নেয়া।

গানে হাতেখড়ি মা এবং বড় বোনের কাছে। আমার প্রথম স্কুল মেরীগোল্ড। স্কুলটা মফস্বল টাউন হিসেবে খুব আধুনিক ছিল সেই সময়। স্কুলে সংগীত বিষয়ক শিক্ষক তারা স্যার গান শেখাতেন স্কুলের অনুষ্ঠানের জন্য এবং পরীক্ষা নেবার জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার দ্বিগুণ।

তবে আমার প্রথম ওস্তাদজী হিসেবে পাই আমাদের নওগাঁর বিখ্যাত ওস্তাদ ভবেশ দা কে যখন আমি গার্লস হাই স্কুলে পড়ি। আমাদের স্কুলের হেড মিস্ট্রেস এর মাধ্যমে উনাকে পাই। উনি আমাকে শিখাবেন বলে নিজ আগ্রহে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন উনার বাসায়। আমি প্রতিদিন স্কুল শেষে উনার বাসায় যেতাম। উনি বিনা পারিশ্রমিকে প্রায় ১বছর তালিম দিয়েছিলেন আমাকে। ভবেশ দা কে আমি সেই এক বছরই পেয়েছিলাম। কারণ তিঁনি অসুস্থ হোন এবং পরলোকগমন করেন।

এর পর বাসায় শেখাতে আসতেন হেলাল স্যার। উনি আমাকে এবং আমার ছোট বোন লাবনীকে শেখাতেন। এছাড়া  নওগাঁ শহরের সে সময়ের যত সংগীতগুরু বা গুণীজনেরা  ছিলেন প্রায় সবার কাছেই কিছু না কিছু শিখেছি। বিভিন্ন ক্লাব বা সংঘের অনুষ্ঠান হলে তারা আমাদের গ্রুমিং করাতেন। তখন গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা নাটক খুব বেশি হতো। শিক্ষা সপ্তাহ বলে যে প্রতিযোগিতা হত সেখানে বরাবরই খুব ভালো রেজাল্ট করতাম বলে রাজশাহীর বিখ্যাত ওস্তাদজী আব্দুল আজিজ বাচ্চু ভাইয়ের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলাম। উনি আমার মেন্টর ছিলেন।  এর পর বগুড়ায় ছটি স্যার ও বেলাম হোসেনের কাছে কয়েক বছর তালিম নেই।ঢাকা একেবারেই চলে আসি ১৯৯৮ সালে, তার আগে থেকে যাওতা আসার মধ্যেই ছিলাম। ঢাকায় প্রথম ওস্তাদজী ছিলেন - আতিকুল রহমান। উনি ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনের মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন। এর পর ক্লাসিক্যাল ওস্তাদজী ছিলেন সুনীল কুমার মন্ডল।  

আমি বেতারে এনলিস্টেড হবার পর বেতারের একজন অফিসারের মাধ্যমে ওস্তাদ হিসেবে পেয়ে যাই বাংলাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক শ্রদ্ধেয় খন্দকার নুরুল আলম ভাই কে। উনি আমাকে বেশ কয়েক বছর শেখান। এর পর আরেক জনের কথা না বললেই নয় উনি হলেন বজলুর রহমান বাবলু। উনি এখনো আমার জন্য সময় বের করে আমাকে নিয়ে বসেন। চর্চার  বিকল্প  নেই এবং শেখারও শেষ নেই এই কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।

তাঁর গাওয়া মৌলিক গান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "মৌলিক গান যে কত শত বা হাজার তা গুণে রাখনি। বেতার, টেলিভিশন, অডিও - ভিডিও  ও মুভির গান দিয়ে  প্রায় হাজার ৩ তো হবেই হয়তো। মুভিতে  ৫০০ এর বেশীই গেয়েছি তা নিশ্চিত। আমার নিজের গাওয়া সব চেয়ে বেশি মৌলিক গান আমি বেতারে গেয়েছি। ৮ টি সলো এলবাম, সেখানেতো ১২-১৪ টি করে গান আছে। এছাড়া মিক্সড এলবামের সংখ্যা ৭০টি তো হবেই। এখনো নিয়মিত  একেবারেই নিজের নতুন নতুন গান রেকর্ড করে যাচ্ছি। আমি কভার গান তেমন গাইনি বা গাইনা। তবে অনুষ্ঠানে অনুরোধ করলেই শুধু গাই। আমি নিজের মৌলিক গান গাইতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

গান নিয়ে ব‍্যস্ততার প্রসঙ্গে  তিনি বলেন, "আলহামদুলিল্লাহ  নিয়মিতভাবেই গান রেকর্ড এর কাজ চলছে। গত কাল যে গানটি রেকর্ড করলাম তা একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য,  গানটি লিখেছেন এবং সুর করেছেন রনক রায়হান।এছাড়াও এ সপ্তাহে দুটি প্লেব্যাক করেছি। মুভির নাম "শত্র"। আগামী জুন মাসে বেশ কিছু গান বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে রিলিজ হবে আশা করছি।"

গান নিয়ে তাঁর ভাবনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, "গান নিয়ে তেমন কোন বড় ধরনের ভাবনা বা পরিকল্পনা নেই। যতদিন গাইতে পারবো গেয়ে যাবো। অবশ্য আগে অনেক স্বপ্ন দেখতাম এখন আর সেগুলো দেখিনা। মেনে নিয়েছি যতই পরিশ্রম করিনা কেন ভাগ্য বলে একটা বিষয় আছে,, যেটা সামান্য কাজ করলেই হয়তো আজ আরও অনেক ভালো অবস্থানে থাকতাম!! তবে যেমন আছি তাতেই বলি আলহামদুলিল্লাহ।"

তিনি বলেন, " আমার বেড়ে উঠা এবং পড়াশোনার প্রায় সব টুকুই নওগাঁতেই। নার্সারি ক্লাসে থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যনত  মেরীগোল্ড স্কুলে পড়েছি। এর পর পড়েছি পি এম গালর্স  হাই স্কুলে, কলেজ ছিলো  সরকারি বি এম সি মহিলা কলেজ নওগাঁ। ঢাকা আসার পর প্রাইভেটে পলিটিকাল সাইন্স এ মাস্টার্স করেছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মাস্টার্স পরিক্ষার রেজিষ্ট্রেশন করেছিলাম ঢাকা কলেজ থেকে। সংগীতকেই পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম এখনো সেটাতেই বহাল আছি।"

শিল্পী তাঁর বাবা মা সম্পর্কে বলেন, "আমার মা হাউজ ওয়াইফ ছিলেন আর বাবাকে সারা জীবন সমাজ সেবার কাজেই দেখেছি। আমার জন্মের আগে বাবা রেলওয়ে চাকরি করতেন  পরে সব ছেড়ে বিজনেস ও সমাজ সেবা নিয়েই থাকতেন। আমার বাবা মারা যান ১৯৯৩ সালে তখন আমি ছোট। আর মা মারা যান ২০১২ সালে। অনেক আগেই আমি এতিম হয়েছি।"

তাঁর প্রিয় গানের বিষয়ে প্রশ্ম করলে তিনি বলেন,  "প্রিয় গানের সংখ্যা গুণে বলা মুশকিল।  যে গানের কথা + সুর ও শিল্পীর গায়িকীতে মুগ্ধ করে সে গানই আমার প্রিয় হয়ে উঠে। যদি বলেন নিজের কোন গান পছন্দের,, সেটার উওর হবে আমার গাওয়া প্রায় অনেক গানই আমার পছন্দের তার মধ্যে...  মাঝে মাঝে তুমি একা, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, রিমঝিম বৃষ্টি, তোর কারণে,  চিতার অনল,  তোমাকে আমি বলতে চাই,  আমারো তো কষ্ট হয়, কি মায়া লাগাইলি, কবিতার ভাষা, ভুলে যাবো, পানে জর্দা, চন্দ্রাবতী ,,, এমন অনেক গান যা লিখে মনে হয় শেষ করতে পারবোনা!!"

 দেশের বাইরেও তিনি বাংলা গানের আলো ছড়িয়েছেন। তিনি বলেন, " আমি বহু দেশে গান গেয়ে নিজের দেশ-কে রিপ্রেজেন্ট করেছি। উল্লেখ্যঃ আমেরিকা বহুরার গিয়েছি, ইংল্যান্ড ৪ বার,  ইটালি ৫ বার,,কাতার ৩বার, ইন্ডিয়া বহুবার। এছাড়াও জাপান,  ফ্রান্স, বেলজিয়াম,  দুবাই, আবুধাবি, সিংগাপুর, নেপাল,মালয়েশিয়া,শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি।

সবশেষে তিনি  তাঁর শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, " আপনারা ভালো ভালো গান শুনুন ভালো মানের বাংলা গান শুনুন।  প্রকৃত শিল্পীরা খুব খেটে এবং খুব যত্ন করে একেকটি গান তৈরি করেন শুধু আপনাদের জন্য, অথচ দুঃখের বিষয় এই সময়ে এসে প্রকৃত শিল্পীরা ভালো ভালো গান উপহার দিয়েও যেন সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেন না।   আজ কাল কিছু সস্তা বিষয়কে ভাইরাল করে সে গুলোকেই আমরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি,,  আমি মনে করি এগুলো আমাদের সংস্কৃতিকে শঙ্কায় ফেলে দিচ্ছে এবং নড়বড়ে করে দিচ্ছে। আমাদের অবশ্যই  সুস্থ ধারায় ফিরতে হবে নইলে আমাদের আগামী প্রজন্ম সব ভুল গুলোকেই সঠিক বলে শিখবে বা জানবে। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সুস্থ থাকি আর ভালো ভালো গান গেয়ে আপনাদের মন জয় করতে পারি। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্যও শুভকামনা ও দোয়া রইলো।"

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image