
নিউজ ডেস্ক : পাবনার রূপুপরের হাত ধরে বিশ্বের ৩২তম আর দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে পরমাণু বিদ্যুতের প্রবেশের পথে বাংলাদেশ । প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এসেছিল নানা প্রতিবন্ধকতা। বৈশ্বিক রাজনীতি, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা ও মহামারি কোভিড নিষেধাজ্ঞাও-এমন সব নানা প্রতিকূলতা মাড়িয়ে রূপপুর এগিয়েছে আপন লক্ষ্য ঠিক রেখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈশ্বিক বিচারে রূপপুরের অগ্রগতিকে বিবেচনা করতে হবে সন্তোষজনক দৃষ্টিকোণ থেকেই। আর এ প্রকল্প নিছক একটি বিদ্যুৎ স্থাপনা নয় প্রতীক হয়ে থাকবে জাতীয় সক্ষমতার।
রাশিয়ার জাহাজ উরসা মেজরের কথা অনেকেরই নিশ্চয় মনে আছে। আর্থিক বিচারে দেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ রুশ জাহাজটির নাম। রুশ এ জাহাজটি নিয়ে ফিরে যাওয়া কিছু কথা আবার উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। গতবছরের ডিসেম্বরে রূপপুরে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশে রওনা হয়েছিল উরসা মেজর। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার গ্যাঁড়াকলে বন্দরে ভেড়ার আগেই বাংলাদেশের জলসীমা ছাড়তে হয় জাহাজটিকে। পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে রূপপুরের সরঞ্জাম খালাসের চেষ্টা করেও যায় বিফলে। আর এ নিয়ে তখন কূটনৈতিক পর্যায়েও হয়েছিল বেশ জলঘোলা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রান্তে সঞ্চালন উপকেন্দ্র নির্মাণে যন্ত্রপাতি সরবরাহের কথা ছিল জার্মান কোম্পানি সিমেন্স এজির। তবে রুশ কোম্পানি রোসাটমের নির্মাণ করা রূপপুরের উপকেন্দ্র নির্মাণেও প্রভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অবনতির জের আর নিষেধাজ্ঞার গ্যাঁড়াকলে রূপপুরে যন্ত্রপাতি সরবরাহ থেকে সরে যায় জার্মান কোম্পানিটি। ফলে বাধ্য হয়ে ঝুঁকতে হয় চীনা কোম্পানির দিকে।
রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা আর কোভিড মহামারির জেরে এমন সব নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল রূপপুরকে ঘিরে। তবে শঙ্কাজাগানিয়া সেই সব অধ্যায় পেছনে ফেলে রূপপুর এগিয়ে চলছে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে। যার সবশেষ উদাহরণ নির্ধারিত সময়ে পারমাণবিক জ্বালানি ইউরিনিয়াম বুঝে নেয়া।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বহুমাত্রিক প্রতিকূল বাস্তবতায় সন্তোষজনকই বলতে হবে রূপপুরের অগ্রযাত্রা। এমনকি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বৈশ্বিক উদাহরণ আমলে নিলেও রূপপুরকে রাখতে হবে সামনের কাতারেই।
সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্লান্ট নির্মাণ করতে গেলে কমপক্ষে ১০ বছরের মতো সময় লাগে। এক্ষেত্রে আমরা ২০১৭ সাল থেকে যদি চিন্তা করি ২০২৩ সাল, সেই অনুসারে অনেক এগিয়ে গেছে। নবাগত দেশ হিসেবে শূন্যে থেকে পারমাণবিক জ্বালানির অধিকারি হওয়া সত্যেই একটা অর্জনের বিষয়। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা অনেক ক্ষেত্রে কাজের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও এটির কাজ এগিয়ে গেছে।
অন্যদিকে, রূপপুরের ক্ষমতা হবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। যা বর্তমান চালু থাকা দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ক্ষমতার। এসব বাস্তবতায় রূপপুরকে কেবল একটি স্থাপনা নয়, জাতীয় গৌরব-সক্ষমতারও নিদর্শন, জাতীয় গৌরব-সক্ষমতার নিদর্শন হিসেবেও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে দেড়শোর বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকার পরও রূপপুরকে ঘিরে কেন এত জল্পনা আর এত কথা? একদিকে এ রূপপুরকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের ৩২তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন পারমাণবিক বৈশ্বিক ক্লাবে।
অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রূপপুরের ক্ষেত্রেও বলা হচ্ছিল যে, সঠিক সময়ে এটি নির্মাণ করতে পারব না, অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে। সব কিছু মোকাবেলা করেই কাজ এগিয়ে চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বিশ্বজুড়েই যখন উদ্বেগের বিষয়, পরাশক্তির রেষারেষি। তখন পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিতের অনন্য নজির গড়ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, এটা তো জাতির জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় কারণ আমরা নিউক্লিয়ার ক্লাবে প্রবেশ করলাম। নিউক্লিয়ার হচ্ছে সবচেয়ে উচ্চতর প্রযুক্তি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: