• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

দেশে টেকসই অর্থনীতির জন্য কৃষিতে আমুল পরির্বতন জরুরী


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৪৮ পিএম
তখনও তাঁরা প্রতিবাদহীন
পাকা ধান কাটাছে কৃষক

মোঃ সাইদুর রহমান

বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে  তৃতীয় এবং ধান উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে। সারা দেশে পাকা ধান কাটার ধুম পরেছে। নবান্ন উৎসবে মেতেছে অনেক কৃষকের আঙ্গিনা। কিছুদিন আগের অতিবৃষ্টিতে কয়েকটা জেলায় কৃষকের নবান্ন উৎসবের পরির্বতে বিপরিত চিত্র দেখা গেছে । অনেক কৃষকেরই একমুঠো ধান ঘরে তুলার সুযোগ নাই!

আমাদের দেশে দাবী আদায়ের জন্য কেউ মানববন্ধন করে, কেউ গাড়ী ভাঙ্গে অথবা পেট্রোল বোমা মারে আবার কেউ লোক দেখানো প্রতীকী অনশন করে।  কৃষক তাঁর রক্তমাখা, ঘাম ঝড়া  নিজের  ফসল যখন  প্রকৃতির রোষানলে নষ্ট হয়ে যায় তখন প্রতিবাদহীন আবার তাঁর উৎপাদিত ফসলের যখন ন্যায্যমূল্য পায় না, তখনও তাঁরা প্রতিবাদহীন।
      
অবহেলার চরম বেত্রাঘাতে কৃষক আজ কঙ্কাল স্বরূপ। আমার মতে কৃষকরা হলেন অন্নযোগান দানকারী একটা গোষ্ঠী,  যাঁরা  অযত্নে, অবহেলায় পরে আছে এ দেশের সমগ্র ভূখন্ডে । দেশের জনসংখ্যার তুলনায় তাঁদের সংখ্যা যেমন বেশী,  তেমনি বঞ্চিত এবং অবহেলিতও তাঁরা বেশী । তাঁদের চিনতে অসুবিধা হয়না। কারন কঙ্কাল স্বরূপ অর্ধ উলঙ্গ চেহারাই বলে দেয় উনারা কৃষক ।
অভাব, ঋণগ্রস্থতা, কণ্যা দায়গ্রস্থতা, রোগাগ্রস্থতা তাঁদের নিত্যদিনের সঙ্গী । অতিবৃষ্টি -অনাবৃষ্টি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ তো আছেই। দিনের পর দিন রোদে পোড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তাঁরা ফসল ফলাচ্ছেন, অথচ মধ্যসত্বভোগীরা ফসলের লাভ ভক্ষণ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে । ঋণের কষাঘাতে তাঁরা ক্ষত -বিক্ষত। বর্তমান সরকারের গত নির্বাচনী ইশতেহারে " গ্রাম হবে শহর " এই স্লোগানটি জাতির দৃষ্টিগোচর হয়েছিল।  কিন্তু বাস্তবতা আজ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। বর্তমান পরিস্হিতিতে সরকার কৃষকের কৃষি পণ্যের সঠিক দাম নির্ধারণে বিমাতা সূলভ মনোবৃত্তি প্রদর্শন করতেছেন । কৃষকেরা হয়তোবা আন্দোলন বুঝেন না। বুঝলে তাঁদের আন্দোলন হতো সবচেয়ে যুক্তিসংগত ।কৃষকের বর্তমানে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে । বিস্ফোরণ যে কোন প্রেক্ষাপটে ঘটতে পারে ।

বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি। দেশে মোট কৃষি পরিবার ১,৫১,৮৩,১৮৩টি আর আবাদী জমি আছে ৮৫,৭৭ লক্ষ হেক্টর।  ( তথ্য কৃষি পরিসংখ্যান) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, কৃষিখাত মোট শ্রমশক্তির ৪০.৬ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে এবং দেশের জিডিপিতে এর অবদান ১৪.১০ শতাংশ। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র দূরীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এই খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে, এমপি, মন্ত্রী সবাই স্বীকার করেন কৃষকেরা খাদ্যের নিরাপত্তা দিয়ে পেট নামক মহাজনের মাথা ঠিক রাখেন।
 
স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের কৃষকের শত প্রতিকূলতা থাকা সত্বেও,  ধান উৎপাদন তিনগুন বৃদ্ধি করেছেন। সোনার বাংলা স্বপ্নের বাস্তব রুপ দিতে হলে দেশের সোনার মানুষদের কদর করতে হবে । কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার নয়। জিডিপির ৩০ ভাগ আসে কৃষি থেকে । এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে ৬৫ ভাগ মানুষেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষির সাথে  জড়িত। দেশের উন্নয়নের মূল ভিক্তি কৃষি । সরকারের কৃষি সংশ্লিষ্ট মহল যখন বলেন,  ধানের ফলন বাম্পার হয়েছে। তখন অপ্রাপ্তির চিন্তায় কৃষকের চোখে ঘুম আসে না, ধানের ন্যায্য মূল্যায়ন পাবেন কিনা । জাতীয় অর্থনীতির সূচক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৃষির অবদান অনস্বীকার্য হলেও,  কৃষকেরা যুগে যুগে অবহেলিত হচ্ছে ।

এ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট( ২০২৩- ২৪) প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা । প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়ে। কিন্তু কৃষিতে বরাদ্দ প্রতি বছরেই কমলে এ বছর বেড়েছে। কৃষিতে বাজেট ৪৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। দেশ উন্নয়নশীল দেশের শক্ত সারিতে আছে। কিন্তু  হতভাগা, হতদরিদ্র কৃষকের  সূচকের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না ।  
 
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, রপ্তানি করার মতো চাল মজবুত আছে । এটা জাতির জন্য স্বস্তিকর। কিন্তু কৃষকের ফসলের সঠিক মূল্য তো পাচ্ছেন না। সরকার কৃষিপণ্য,  বিশেষ করে ধানের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে বার বার কৃষকের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।

কৃষক  তাঁর পণ্যের  ন্যায্যমূল্যের জন্য আন্দোলন করাটা বিলাসিতা নয়,এটা তাঁদের যৌক্তিক দাবী। যদি কৃষকেরা ধান উৎপাদন করবেনা বলে ঘোষণা দেন,  তাহলে দিশেহারা হবে সরকার এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা।          

ধান/ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ফাড়িয়া আর চালকল মালিকেরা । কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্যায়নের অভাবে, বিমূখী বাজার নীতি, প্রক্রিয়াজাতের অভাব,  সবমিলে কৃষি এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অলাভ জনক খাতে পরিণত হয়েছে । সরকারী ভাবে কৃষি পণ্য ক্রয়ের নীতিমালা অতি প্রাচীন  । নীতিমালা যুগ উপযোগী না হওয়ায়,  অসাধু সরকারী কর্মচারীদের হাতে জিম্মি হয়ে,  কৃষকেরা কম দামে সরকারি গুদামে  কৃষিপণ্য বিক্রি করেন

 ই-কৃষককে রূপান্তরিত করার জন্য সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন। যে কৃষকের পড়নে কাপড় নেই, শিক্ষিত করার কোন সরকারী উদ্যোগ চোখে পরেনা। সে কৃষককে প্রযুক্তির গান শুনানো বড়ই বেমানান। বরং কৃষি বীমা চালু করতে পারলে কৃষকের লাভবান হবে । বাংলার কৃষককের  প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত চাপ কমে যাবে এবং ঋণের বুঝাও কমবে ।

এদেশের কৃষি এবং কৃষক গোষ্ঠীকে বাঁচাতে হলে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে । পণ্যের সঠিকভাবে মূল্য নির্ধারন করতে হবে । বাজেটে ধান- চাউল ক্রয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।  সরকারী -বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হবে । কৃষকের জন্য পল্লী রেশনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।  

প্রতিটি থানা / ইউনিয়নে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা করতে হবে । কৃষি ভিক্তিক শিল্প স্থাপন করতে হবে । ব্যাংক গুলোকে দালাম মুক্ত করে, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ দিতে হবে। কৃষিতে বর্তমান সরকার  প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে সক্ষম হয়েছে । সেই অনুযায়ী সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরনের দাম সমন্বয় করতে হবে । বিএডিসিকে শক্তিশালী করতে হবে। কৃষি আদালত গঠন, মৌসুমভিত্তিক সুদবিহীন কৃষিঋণ প্রদান, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষিমার্কেট ও হিমাগার স্থাপন করতে হবে।

কৃষককে আধুনিক কৃষি চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে ।  শিক্ষিত যুবকদেরকে কৃষিতে সম্পৃক্ত করতে হবে ।  জিডিপিতে কৃষির অবস্হান অনুযায়ী বাজেটে তার প্রতিফলন থাকতে হবে । নতুবা  কৃষিতে  ক্রমেক্রমে  নেমে আসবে পারে ভয়াবহ বিপর্যয় । দেখা যাবে এক সময়  পাট চাষ, আখ চাষের মতো ধান চাষ থেকেও কৃষকেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তখন প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হবে সরকার এবং মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে খাতায় নাম উঠানো দুরূহ হবে ।

মোঃ সাইদুর রহমান, লেখক  ও  কলামিস্ট ।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image