• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

সারাদেশে মডেল মসজিদ: শেখ হাসিনার একটি দুরদর্শী সিদ্ধান্ত


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ আগষ্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:০৭ পিএম
একটি দুরদর্শী সিদ্ধান্ত
মডেল মসজিদ

রেজাউল করিম সিদ্দিকী

সর্বশেষ আদমশুমারীর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি, এর ৯১% এরও বেশি মুসলমান। সারাদেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উপাসনালয় মসজিদের সংখ্যা ৩ লক্ষেরও বেশি যার অধিকাংশই স্থানীয় মুসল্লী ও ব্যক্তিগত বা সামাজিক উদ্যোগে নির্মিত। এসব মসজিদের পরিচালনা স্থানীয় লোকজন নিজেরাই করে থাকেন। এসব মসজিদে কর্মরত ইমাম মোয়াজ্জিনগণ সমাজে যথেষ্ট সম্মানীয় এবং যথেষ্ট প্রভাবসম্পন্ন। সমাজের সাধারণ মানুষ তাদেরকে যথেষ্ট সম্মান করে এবং তাদের দ্বারা সহজে প্রভাবিত হয়। একারণে স্বাস্থ্য, সেমিটেশন, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সচেতনতা সৃষ্টিতে তাদের যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। ধর্মচর্চার পাশাপাশি সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে এবং স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে তারা এসব কাজ করে থাকেন।

সরকারি বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত গঠনে তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকেন। শুধু ধর্মীয় উপাসনা নয় বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে ইমাম মোয়াজ্জিনদের ভূমিকা সমাজের সর্বস্তরের সমাদৃত ও প্রশংসিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এইসব ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন সমাজের সেইসব লোকজন সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে যাদের বেশিরভাগেরই কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া এসব মসজিদের নির্মাণ ও পরিচালনাও তারাই করে থাকেন। অন্যভাবে বলতে গেলে সমাজের
প্রতিনিধিত্বশীল এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সাথে সরকারের কার্যকর যোগাযোগের কোন প্রক্রিয়া অদ্যবধি গড়ে ওঠেনি। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার ২০১৭ সালে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সারাদেশে ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়।

প্রকল্পের কাজ প্রাথমিকভাবে ১ এপ্রিল ২০১৭ সালে আরম্ভ হয় এবং ৩০ জুন ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয়বার সংশোধিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪৩৫ কোটি টাকা যার পুরোটাই বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬রটি জেলা সদর ও পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে চারতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ৪৭৯টি উপজেলা সদরে তিনতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ১৬ টি উপকূলীয় এলাকায় চারতলা (নিচতলা ফাঁকা) মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ক্রয়, অফিস সরঞ্জাম ও যান বহন ক্রয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে প্রণীত ইসলামী ফাউন্ডেশন এক্ট ১৯৭৫ এর ১১(ক) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সারাদেশে মডেল মসজিদ নির্মাণের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি যথাযথ বাস্তবায়ন হলে সারাদেশে ৫৬৪ টি মসজিদে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ পুরুষ ও ৩২ হাজার নারী মুসল্লির নামাজ পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। একই সাথে ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দ্বীনি দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভৌত ও অবকাঠামগত সুবিধা সৃষ্টি হবে। মুসল্লিদের দ্বীনি ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাইব্রেরী, গবেষণা ও দাওয়াহ কার্যক্রম, শিশু শিক্ষার ব্যবস্থা, নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক ওযুখানা ও নামাজঘর, অতিথিশালা/বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রী ও ইমাম প্রশিক্ষণ সর্বোপরি ইসলামিক জীবন ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের সর্বোচ্চ পরিচর্যা ও প্রসারের সব রকমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই প্রকল্পে।

প্রকল্পটির যথাযথ বাস্তবায়ন হলে ইমাম ও মুয়াজ্জিনগণ ধর্মীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, মাদকের কুফল, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য-
স্যানেটেশন ও বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন। এভাবে সমাজের প্রতিটি স্তরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে একটি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন জাতি গঠনে তারা আরো কার্যকর ভুমিকা পালনে সক্ষম হবেন। এছারা উন্নত কর্মপরিবেশ ও সরকারের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানের ফলে ইমাম –মুয়াজ্জিনগন কাজের প্রতি আরো মনোযোগী হবেন এবং আত্ববিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে দেশের মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আরো কার্যকর ভুমিকা পালনে সক্ষম হবেন। ধর্মের অপব্যাখ্যা, ধর্মের নামে প্রতিক্রিয়াশীলতা সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। এই মডেল মসজিদ ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা মুসল্লিদের মাঝে তুলে ধরার
মাধ্যমে ধর্মীয় গোড়ামী, কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাঙ্ক্ষিত/ঘোষিত উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আরও একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ২৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন, বাকি ৩১৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ সম্ভব হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় পূর্তকাজ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর যথেষ্ট আন্তরিকতার নিষ্ঠা ও
দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করছে। সাম্প্রতিক করোনা মহামারীর অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের কারনে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারনে রড, সিমেন্ট, ইট, পাথর, বালিসহ সবধনের নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ২০২১ সালে যখন এই প্রকল্প একনেকে পাস হয় তখনকার রেট সিডিউল অনুযায়ী এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ও প্রায় অসম্ভব ছিলো।

তাছারা ৫৬৪ টি স্থানে এই মসজিদ নির্মানের জন্য সাইট সিলেকশন ও প্রয়োজনীয় ভুমি অধিগ্রহনের কাজও ছিলো অত্যন্ত জটিল ও চ্যালেঞ্জিং। অধিগ্রহনকৃত জমির মালিকদের পুনর্বাসন, প্রয়োজনীয় স্থানে মাটি ভরাটসহ ভুমি উন্নয়ন কাজও ছিলো যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে গণপূর্ত অধিদপ্তর যথেষ্ট আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। আগামী সেপ্টেম্বরে আরো ৫০ টি মসজিদ উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি যথাক্রমে ৬১.০০ এবং ৫৭.৩৯%। কাজের বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত।

ইসলাম শান্তি ও সাম্যের ধর্ম। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানূষকে মানবিক মুল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। ধর্ম মানুষকে পরিশীলিত করে, আত্মিক উন্নতি ও আধ্যাত্মিক উন্মেষ ঘটিয়ে একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষরুপে গড়ে তোলে ধর্ম। বিশৃঙ্খল সমাজে শৃংঙ্খলা প্রিতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে নাগরিকদের পরিশীলিত ও পরিশুদ্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন ধর্মচর্চার সুন্দর ও সহজলভ্য পরিবেশ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব উদ্যোগে সারাদেশে নির্মিত এই ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য তেমন একটি সুন্দর ও সহজলভ্য পরিবেশ নিশ্চিত করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যমে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃংখল সমাজ প্রতিষ্ঠায় এই মডেল মসজিদ অনন্যসাধারণ ভুমিকা পালন করবে বলে সকলের অভিমত।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image